সিলেটে আইসিইউ পেতে লড়াই
প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ জুলাই ২০২০, ১২:০৬ পূর্বাহ্ণ
ওয়েছ খছরু:
সিলেটে আইসিইউ’র জন্য লড়াই করতে হচ্ছে করোনা রোগীদের। এজন্য দিনের পর দিন রোগীদের অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। আবার অপেক্ষায় থেকে থেকে অনেকেই মারাও যাচ্ছেন। তবু তারা আইসিইউ সুবিধা পাচ্ছেন না। সরকারি কিংবা বেসরকারি সব হাসপাতালেই চলছে এ লড়াই।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন- সিলেটের হাসপাতালগুলোতে রোগীরা সাধারণত তীব্র শ্বাসকষ্ট কিংবা মুমূর্ষু অবস্থায় আসেন। ফলে তাৎক্ষণিক আইসিইউ সুবিধা দিতে কষ্ট হচ্ছে। প্রথম পর্যায়ে হাসপাতালে ছুটে গেলে অনেকেরই আইসিইউ সাপোর্টের প্রয়োজন হতো না।
সিলেটের করোনা রোগীদের জন্য সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে আইসিইউ বেড রয়েছে ৪৪ টি। সিলেটের সরকারি কোভিড হাসপাতাল শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে রয়েছে ১৪ টি বেড সমৃদ্ধ একটি আইসিইউ ওয়ার্ড। কোভিড চিকিৎসা শুরু হওয়ার পরও এই হাসপাতালে কোনো আইসিইউ সুবিধা ছিল না। এই নিয়ে সিলেটে অনেক হৈ-চৈ শুরু হয়। কারণ- করোনা আক্রান্ত রোগীদের জন্য প্রয়োজন অত্যাধুনিক আইসিইউ ও অক্সিজেন সুবিধা। কিন্তু সিলেটে সে ব্যবস্থা গ্রহণ না করেই হাসপাতালে করোনা চিকিৎসা সেবা শুরু করা হয়েছিল।
বিষয়টি সিলেট-১ আসনের এমপি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেনের কানে পৌঁছা মাত্র তিনি এগিয়ে আসেন। তার প্রচেষ্টায়ই শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে ১৪টি বেড সমৃদ্ধ একটি আইসিইউ ওয়ার্ড স্থাপন করা হয়। রোগীদের ভর্তি রেখেই খুব কম সময়ের মধ্যে এই কাজ করা হয়েছিল। ফলে গত তিন মাস ধরে শামসুদ্দিনে আইসিইউতে অধিক সংখ্যক রোগী সুবিধা পেয়েছেন। সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এই আইসিইউ পরিচালনার জন্য একদল দক্ষ ডাক্তার নিয়োগ দিয়েছেন। শামসুদ্দিনের আইসিইউ ইতিমধ্যে মানুষের কাছে আস্থা অর্জন করেছে।
এর কারণ- এই হাসপাতালে আইসিইউতে চিকিৎসা নিয়ে অনেক রোগী জীবন ফিরে পেয়েছেন। সুস্থ হয়ে হাসিমুখে ফিরে গেছেন বাড়ি। কিন্তু শামসুদ্দিনের আইসিইউ সুবিধা নিতে রীতিমতো লড়াই করতে হচ্ছে রোগীদের। গত ২০ দিন ধরে বেড সমান রোগী নিয়ে এই হাসপাতালের আইসিইউতে রোগের সঙ্গে লড়াই করছেন চিকিৎসকরা। ফলে খুব সহজেই একটি আইসিইউ বেড খালি হয় না। সব সময় হাসপাতালে ৫ থেকে ৬ জন রোগীকে আইসিইউ’র জন্য অপেক্ষা করতে হয়। এই সব রোগীর মধ্যে অনেকেই মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের।
সিলেটের শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. সুশান্ত কুমার মহাপাত্র মানবজমিনকে জানিয়েছেন- ‘মাননীয় মন্ত্রীর চেষ্টায় আমরা আইসিইউ ওয়ার্ড পেয়েছি। কিন্তু সব সময় রোগী ভর্তি থাকে আইসিইউতে। এখনো অপেক্ষায় রয়েছেন কয়েকজন রোগী। একটু সুস্থ হলেই আমরা আইসিইউ রোগীদের কেবিনে এনে নতুন রোগী দিতে হচ্ছে। এভাবে ম্যানেজ করে আমাদের চলতে হচ্ছে।’ তিনি জানান- ‘আশার কথা হলো শামসুদ্দিনের আইসিইউতে রোগী মৃত্যুর সংখ্যা কম। এজন্য ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের কৃতিত্ব বেশি।’ এদিকে- সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকেও মাঝে-মধ্যে আইসিইউ’র জন্য রোগী প্রেরণ করা হতো। এখন সেটি হচ্ছে না। ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সেটি ম্যানেজ করে নিচ্ছেন।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়- ওসমানী হাসপাতালে অনেক রোগীই ‘রোগ গোপন’ করে এসে ভর্তি হন। আবার কখনো কখনো তাদের আইসিইউ’র প্রয়োজন হয়। এ কারণে ওসমানীতে থাকা রোগীদের হাসপাতালেই চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। কয়েকদিন আগের ঘটনা। ক্রীড়া সাংবাদিক একুশ তপাদার তার মায়ের জন্য আইসিইউ পাননি ওসমানীতে। তখন মুমূর্ষু রোগীতে ভরপুর ছিল ওসমানীর আইসিইউ। এ কারণে তিনি তার নিজের ফেসবুক আইডিতে মা’কে বাঁচাতে আইসিইউ’র জন্য আকুতি জানিয়েছিলেন। কিন্তু পাননি। শেষে সাংবাদিক একুশ তপাদারের মা মারাই গেলেন। শত আকুতিতেও মিললো না একটি আইসিইউ বেড। কিংবা বেসরকারি হাসপাতালগুলোর কর্তৃপক্ষেরও মন গলেনি। তারা খুলে দেননি আইসিইউ’র দ্বার। সিলেটের মাউন্ট এডোরা হাসপাতালে একমাস ধরে কোভিড চিকিৎসা চলছে। এই হাসপাতাল অত্যাধুনিক হওয়ার কারণে সাধারণত ধনাঢ্য রোগীরা এখানে চিকিৎসা গ্রহণ করেন। হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য আইসিইউ বেড রয়েছে ১০ টি। এই বেডও সংকুলান হচ্ছে না। সব সময় রোগী ভর্তি থাকে আইসিইউতে। অনেক সময় রোগীদের অপেক্ষায়ও থাকতে হচ্ছে। আইসিইউতে থেকে কোনো রোগী একটু সুস্থ হলেই তাকে কেবিনে কিংবা ওয়ার্ডে রেখে নতুন রোগী আইসিইউতে নেয়া হচ্ছে। এমনই করে চলছে ওই হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসা।
হাসপাতালের মার্কেটিং ম্যানেজার শফিকুর রহমান জানিয়েছেন- ‘তাদের হাসপাতালের আইসিইউতে সব সময় করোনা রোগীরা ভর্তি থাকেন। অনেক সময় বেড সংকটের কারণে অনেক রোগীকে আইসিইউতে জায়গা দেয়া সম্ভব হয় না। চিকিৎসকরা একটু সুস্থ হওয়া রোগীকে বাইরে এনে মুমূর্ষু রোগীকে আইসিইউতে নেন।’ তিনি জানান- ‘এই মুহূর্তে জরুরি ভিত্তিতে নতুন করে আইসিইউ বেড বাড়ানোর সুযোগ নেই। লকডাউন সহ করোনার কারণে অনেক যন্ত্রপাতি পাওয়া যায় না। ফলে চাইলেই আইসিইউতে বেড বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। এজন্য প্রস্তুতি লাগে।’ এদিকে- এক মাসে ২০টি বেড সমৃদ্ধ একটি আইসিইউ ওয়ার্ড নিয়েই করোনা চিকিৎসা শুরু করেছিলো সিলেটের নর্থইষ্ট মেডিকেল হাসপাতাল। সেই হাসপাতালে আইসিইউ’র জন্য রোগীকেও কখনো কখনো অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে।
তবে- বেশির ভাগ সময় চাইলেই আইসিইউ পাওয়া যায়। হাসপাতালের পরিচালক ও কোভিড সমন্বয়ক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম জানিয়েছেন- ‘২০টি বেড বেশির ভাগ সময় রোগী থাকে। হঠাৎ করে করোনা আক্রান্ত রোগীর আইসিইউ সুবিধা দিতে হলে বেগ পেতে হয়। এরপরও ম্যানেজ করে রোগীদের আইসিইউ সুবিধা দেয়া হয়। রোগীর জীবন রক্ষার জন্য তাৎক্ষণিক যা করা প্রয়োজন তাই করা হয় বলে জানান তিনি।’