সুনামগঞ্জে বন্যা: বিধ্বস্ত সড়ক, বন্ধ যোগাযোগ
প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ জুলাই ২০২০, ১২:৫৯ অপরাহ্ণ
সুনামগঞ্জ সংবাদদাতা :
সুনামগঞ্জে বন্যায় প্রায় ৮০ কোটি টাকার সড়ক বিধ্বস্ত হয়েছে। পাহাড়ি ঢল ও অতিবর্ষণে রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় ভেঙে গেছে বিভিন্ন রাস্তার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় দু’টি উপজেলার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। শুধু পাকা সড়ক নয়, গ্রামীণ অভ্যন্তরীণ মাটির সড়কও সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।
সুনামগঞ্জ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের জামালগঞ্জ-কাঠইর সড়কের উজ্জ্বলপুর এলাকার এবং দোয়রাবাজার-সুনামগঞ্জ সড়কের কাটাখালি নোওয়াগাঁও এলাকার রাস্তা সম্পূর্ণ ভেঙে গেছে। বর্তমানে এই দু’টি বড় ভাঙণের কারণে জেলা সদরের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের মতে, প্রায় ১০০ কিলোমিটার সড়ক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত, বিধ্বস্ত ও নষ্ট হয়েছে। এতে প্রায় ৬০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে তাদের। এছাড়া সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, তাদের গুরুত্বপূর্ণ ৫টি সড়কের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পাহাড়ি ঢল ভেঙে নিয়ে গেছে রাস্তাঘাট। এতে তাদের ২০ কোটি টাকারও বেশি ক্ষতি হয়েছে।
সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বম্ভরপুর-কাচিরগাতি, নিয়ামতপুর-তাহিরপুর, জামালগঞ্জ-সুনামগঞ্জ, দোয়ারাবাজার,-সুনামগঞ্জ, ছাতক-গোবিন্দগঞ্জ সড়ক বন্যায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১১ কিলোমিটার সড়ক ডুবে যাওয়ায় বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে ঢলের পানির তোড়ে সড়ক দেবে গেছে, ভেঙে গেছে। এগুলো সংস্কার করতে প্রাথমিকভাবে ২০ কোটি ৭৫ লাখ টাকা লাগবে বলে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে।
শুধু সড়ক ও জনপথ, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরই নয়, বন্যায় গ্রামীণ রাস্তাঘাটেরও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সেই ক্ষয়ক্ষতি এখনও নিরুপণ করা হয়নি।
গত ২৫ জুন থেকে ২৯ জুন পর্যন্ত সুনামগঞ্জে পাহাড়ি ঢল ও বর্ষণে বন্যার সৃষ্টি হয়। এতে রাস্তাঘাট ও লোকালয় নিমজ্জিত হয়। পাহাড়ি ঢলের তোড়ে ভেঙে যায় রাস্তাঘাট। বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। আপাতত বালির বস্তা দিয়ে, বাঁশের আড় দিয়ে সড়ক চালু রাখা হয়েছে। তবে উজ্জ্বলপুর ও কাটাখালি এলাকায় বড় ভাঙন দেখা দেওয়ায় সড়কটি চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। এখানে ফেরির মাধ্যমে জেলা শহরের সঙ্গে যাতায়াত চালু রাখা হয়েছে।
হাওর বাঁচাও আন্দোলনের সহ-সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ান বলেন, ‘বন্যায় সুনামগঞ্জের রাস্তাঘাট ও গ্রামীণ অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অনেক রাস্তাঘাট ভেঙে গেছে। গ্রামীণ অনেক সড়কের অস্তিত্বই নেই। তিনদিনের বন্যা বিধ্বস্ত করে গেছে লোকালয়।’
সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী কাজী নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের ৫টি গুরুত্বপূর্ণ সড়কের প্রায় ১১ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আরও বিভিন্ন স্থানেও রাস্তাঘাট দেবে গেছে, ভেঙে গেছে। আমরা প্রাথমিকভাবে এগুলো সংস্কার করতে ২০ কোটি ৭৫ লাখ টাকার একটি প্রতিবেদন তৈরি করে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবরে প্রেরণ করেছি।’
সুনামগঞ্জ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘বন্যায় আমাদের ১০০ কিলোমিটার সড়ক বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কাটাখালি ও উজ্জ্বলপুরে কয়েকশ মিটার রাস্তা সম্পূর্ণ ভেঙে গিয়ে জেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। আমরা প্রাথমিকভাবে প্রায় ৬০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির একটি প্রতিবেদন তৈরি করে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবরে প্রেরণ করেছি।’