সিলেটে এক মাসে পানিতে ডুবে ১৩ শিশুর মৃত্যু
প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ জুলাই ২০২০, ১১:৪৬ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
বর্ষা মৌসুমের শুরুতে পানিতে ডুবে সিলেট বিভাগে ১৩ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। গত জুন মাসে বিভাগের চার জেলায় শিশুদের এ মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন চার জেলার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, পানির প্রতি শিশুদের এমনিতেই আলাদা ঝোঁক রয়েছে। তাই বর্ষা মৌসুমে তাদের প্রতি অতিরিক্ত নজর রাখা উচিত। পরিবারের সদস্যদের অসচেতনতার কারণে এমন মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে।
সিলেটের চার জেলায় খেলাধুলা করার সময় পুকুরে বা ডোবার পানিতে ডুবে ১৩ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে সব চেয়ে বেশি সুনামগঞ্জে সাত, হবিগঞ্জে তিন, মৌলভীবাজারে দুই এবং সিলেট জেলায় এক শিশুর মৃত্যু হয়। এসব শিশুর বয়স ছয় মাস থেকে ১০ বছরের মধ্যে। মৃত বেশির ভাগ শিশুর মা বাড়ির পাশে সন্তানকে খেলতে দিয়ে সংসারের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় এমন ঘটনা ঘটছে বলে মৃত্যুর খবর বিশ্লেষণে জানা গেছে।
সুনামগঞ্জ :
হাওরাঞ্চলখ্যাত সুনামগঞ্জ জেলায় গত এক মাসে পানিতে ডুবে সাত শিশুর মৃত্যু হয়েছে। গত মাসে প্রথম মৃত্যু হয় ৮ জুন। দোয়ারাবাজার উপজেলায় আশরাফুল ইসলাম নামের দুই বছরের এক শিশু পুকুরে ডুবে মারা যায়। সে দোয়ারাবাজার সদর ইউনিয়নের লামা সানিয়া গ্রামের প্রবাসী মানিক মিয়ার ছেলে। ১৪ জুন সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলায় হাওরে মাছ ধরতে গিয়ে পানিতে ডুবে মুসলিমা খাতুন (৪) ও রহিমা খাতুন (৫) নামে দুই বোনের মৃত্যু হয়। তারা উপজেলার ভীমখালি ইউনিয়নের কলকখতা গ্রামের সুরুজ আলীর মেয়ে।
২০ জুন জগন্নাথপুর উপজেলার চিলাউড়া হলদিপুর ইউনিয়নের চিলাউড়া মাঝপাড়া গ্রামে পুকুরে ডুবে মারিয়া বেগম (৩) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়। সে ওই গ্রামের দুলন মিয়ার শিশু কন্যা। ২২ জুন বিদ্যালয় থেকে বিস্কুট আনতে গিয়ে ধর্মপাশায় ঝড়ো বাতাসের কবলে পড়ে হাওরে নৌকা ডুবে সুমাইয়া আক্তার (৬) নামের প্রথম শ্রেণির এক ছাত্রীর মৃত্যু হয়। সে উপজেলার পাইকুরাটি ইউনিয়নের চকিয়াচাপুর গ্রামের বাসিন্দা রফিকুল ইসলামের মেয়ে।
২৪ জুন দিরাইয়ে ডোবার পানিতে ডুবে তাহমিদ মিয়া (১০) নামের এক শিশুর মৃত্যু হয়। সে উপজেলার পাইকুরাটি ইউনিয়নের সুনই গ্রামের নাজমুল হুদার ছেলে। ২৭ জুন দিরাই উপজেলায় কালনী নদীতে ঝড়ের কবলে পড়ে যাত্রীবাহী একটি নৌকা ডুবে যায়। এতে আজমিরীগঞ্জ উপজেলার পাহাড়পুর মাটিয়াখাড়া গ্রামের জয়সুন্দর দাস (৫৫) ও তার নাতি দিরাই উপজেলার জারলিয়া গ্রামের রঞ্জিত দাসের ছেলে প্রীথম দাস (৯) নৌকার ভেতরে আটকা পড়ে মারা যায়।
হবিগঞ্জ:
জুন মাসে এই জেলায় পানিতে ডুবে তিন শিশুর মৃত্যু হয়। তারা হলো- মাধবপুর উপজেলার চৌমুহনী ইউনিয়নের তুলশীপুর গ্রামের মিশু মিয়ার মেয়ে তানহা (৫), বানিয়াচং উপজেলার তোপখানা মহল্লার এনামুল হক বাবুলের ১৭ মাসের শিশু সাহাবা আক্তার ও উপজেলার কেশবপুর গ্রামের অর্জন সুত্রধরের মেয়ে প্রিয়া সুত্রধর (৩)।
তানহা ১৮ জুন সকালে বাড়ির পাশের পুকুরে পড়ে নিখোঁজ হয়। সকাল ৯টার দিকে পরিবারের লোকজন তার মরদেহ পুকুরে ভেসে থাকতে দেখেন। ১০ জুন আজমিরীগঞ্জ উপজেলার জলসুখা ইউনিয়নের আটপাড়া গ্রামে সাহাবা আক্তার খেলাধুলা করার সময় পাশের ডোবায় পড়ে মারা যায়। সে মায়ের সঙ্গে আটপাড়া গ্রামে নানা বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল।
২ জুন শায়েস্তাগঞ্জের ব্রাহ্মণডুরা ইউনিয়নের কেশবপুর গ্রামে খেলা করার সময় পুকুরের পানিতে ডুবে প্রিয়া সুত্রধরের মুত্যু হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেন ব্রাহ্মণডুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হুসাইন মোহাম্মদ আদিল জজ।
মৌলভীবাজার:
মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার কদমহাটা এলাকায় পানিতে ডুবে গিয়ে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। তারা সম্পর্কে একে-অপরের খালাতো বোন। এই শিশুরা হলো- কদমহাটা এলাকার দেলোয়ার হেসেনের মেয়ে শামিমা আক্তার (৯) ও সদর উপজেলার বর্ষিজোড়া এলাকার সানু মিয়ার মেয়ে সানজিদা আক্তার (৮)।
২১ জুন দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বাড়ির পাশে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) একটি পুকুরে গোসল করতে গিয়ে ওই দুই শিশু ডুবে যায়। পরিবারের সদস্যরা তাদের দেখতে না পেয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। পরে পানিতে ভাসতে দেখে দুই শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
সিলেট:
জুন মাসে সিলেট জেলায় একমাত্র শিশুর মৃত্যু হয়েছে জৈন্তাপুর উপজেলায়। ৩০ জুন সন্ধ্যায় ৫নং ফতেপুর ইউনিয়নের হেমু পূর্ব মাঝপাড়া গ্রামে বন্যার পানিতে ডুবে সাদিক আহমদ নামের তিন বছরের ওই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। নিহত সাদিক আহমদ একই গ্রামের জুনেদ আহমদের ছেলে।