মৌলভীবাজারের কাঁঠাল ও আনারসের ব্যাপক ফলন হলেও ক্রেতা কম থাকায় সংকটে চাষিরা
প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ জুন ২০২০, ৩:০৪ অপরাহ্ণ
স্বপন দেব,মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:
মৌলভীবাজার জেলার প্রতিটি উপজেলায় বিভিন্ন হাট-বাজার এখন বিভিন্ন মৌসুমী ফলে ভরপুর। বিশেষ করে কাঁঠাল আর আনারসের সুমিষ্ট গন্ধে মুখরিত বাজারগুলো। তবে এ জেলায় বাজার ব্যবস্থার উন্নত না হওয়ায় মৌসুমী ফল চাষীরা তাদের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন। করোনা পরিস্থিতে এবার ফলের বাজার অনেকটা ক্রেতা শূণ্য থাকায় বিরুপ প্রভাব পড়েছে মৌসুমী ফলের বাজার জাত করণে। এতে শ্রীমঙ্গলের বিশেষ চাহিদার লাখ লাখ টাকার আনারস নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন চাষীরা। বাগান মালিক ও চাষীরা জানান, এবার ফলন ভালো হলেও শুধু সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট হতে যাচ্ছে তাদের ফসল। দীর্ঘদিনের দাবির পরও এলাকায় প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প, কোল্ডস্টোরেজ না থাকায় প্রতি বছর তাদের লাখ লাখ টাকার ক্ষতি হচ্ছে। ফলে অনেকে ফসল ফলানোর আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।
মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন এলাকায় মৌসুমি ফল কাঁটাল ও আনারসের ফলন প্রতিবছরই বাড়ছে। বিশেষ করে কুলাউড়া, বড়লেখা, শ্রীমঙ্গল, কমলগঞ্জ ও জুড়ী উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ি ও সমতল ভূমিতে আনারস,কাঁঠাল ও লটকন চাষের উপযোগী হওয়ায় অনেক চাষী আগ্রহ নিয়ে চাষ করছেন।
কুলাউড়া উপজেলার রবিরবাজার, ব্রাম্মণবাজারে প্রতি সপ্তাহে দুদিন কাঁঠালের বিশাল হাট বসে। এখান থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ট্রাক যোগে সুস্বাধু কাঁঠাল নিয়ে যান ব্যবসায়ীরা। তবে এবছর অন্য এলাকার ব্যবসায়ীদের আনাগোনা অনেকটা কমে গেছে বলে ব্রাম্মণবাজারের ব্যবসায়ী অতুল দাস জানান।
শ্রীমঙ্গল উপজেলার সাতাগাঁও, মোকামবাজার, ডলুবাড়ি, রাধানগর, মুছাই এলাকা, মির্জাপুর, ভূনবী, ভৈরববাজার, মোহাজেরাবাদের বিভিন্ন বাজারে আনারস ওঠেছে।
ক্রেতা কম থাকায় সংকটে আনারস চাষিরা।
অন্যদিকে,কমলগঞ্জের শমশেরনগর বিমানঘাঁটি, মাঝেরছড়া, পুরানবাড়ি মাধবপুর ও আদমপুর এলাকার পাহাড়ি ও সমতল ভূমিতে বেশি আনারস চাষ হয়। ওইসব এলাকা থেকে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত্রি পর্যন্ত পিকআপ, জিপ বোঝাই করে শ্রীমঙ্গল শহরের নতুনবাজারের বিভিন্ন আড়তে আনারস, লেবু, কাঁঠাল নিয়ে আসছেন বাগানচাষিরা। আড়তে বড় সাইজের প্রতি পিস আনারস বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকায়। মাঝারি সাইজের প্রতি পিস আনারস বিক্রি হচ্ছে ২৫-৩০ টাকা। ছোট সাইজের প্রতি পিস আনারস বিক্রি হচ্ছে ১২-১৫ টাকা।
কাঁঠাল বিক্রি হচ্ছে ৩০-৩৫ টাকা দামে। সেটা খুচরা বাজার বিক্রি হচ্ছে ১০০-১৫০ টাকায়। আবার পাকা কাঁঠাল বিক্রি হয় ২০০ টাকায়। লেবুর হালি আড়তে ৫ টাকা থেকে ৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আবার খুচরা বাজারে ১৫-২০ টাকায় বিক্রি করা হয়।
মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক কাজী লুৎফুল বারী জানান, জেলায় ১২০১ হেক্টর জমিতে আনারস চাষ হয়েছে। এর মধ্যে শ্রীমঙ্গল উপজেলায় ৬২৫ হেক্টর জমিতে আনারস চাষ হয়েছে। তবে চাষিরা দাম পাচ্ছেন না করোনাভাইরাসের কারণে।
তিনি বলেন, কোল্ডস্টোরেজ না থাকায় মৌসুমি ফল চাষিদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। বিশেষ করে শ্রীমঙ্গলে কোল্ডস্টোরেজ ও প্রক্রিয়াজাত শিল্প গড়ে উঠলে আনারস, লিচু, কাঁঠাল ও লেবুর চাহিদা বেশি থাকতো। বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবো।
এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম বলেন, উপজেলাজুড়ে আনারস ও লেবু প্রচুর উৎপাদন হয়। সিলেট বিভাগসহ সারাদেশে সরবরাহ হয়ে থাকে। যখন উৎপাদন বেশি হয় তখন কোল্ডস্টোরেজ না থাকায় কৃষকরা পর্যাপ্ত মূল্যে পায় না। এখনে একটা কোল্ডস্টোরেজ খুবই প্রয়োজন।
কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এটিএম ফরহাদ চৌধুরী এ উপজেলার বিশেষ অঞ্চলের কাঁঠালের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। চাষীরা সঠিক মূল্য পেলে চাষে আরও আগ্রহী হবে। তবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকলে ফরিয়া ব্যবসায়ীদের কাছে ফল চাষীরা জিম্মি হয়ে কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হতো না।