ঢলে তলিয়ে গেছে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার নিম্নাঞ্চল
প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ মে ২০২০, ১১:৪৮ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিলেটের গোয়াইনঘাটে বন্যা দেখা দিয়েছে। প্লাবিত হয়ে পড়েছে উপজেলার নিম্নাঞ্চলসহ নিচু এলাকার অগণিত বাড়িঘর। পাহাড়ি ঢলের কারণে সৃষ্ট দুর্যোগ পানিবন্দি বাড়িতে শত শত মানুষ। পাহাড়ি ঢলে পানি বৃদ্ধির কারণে সিলেট সারী-গোয়াইন, সিলেট সালুটিকর-গোয়াইনঘাট, জাফলং রাধানগর গোয়াইনঘাট-সোনার হাট-গোয়াইনঘাট সড়কে সরাসরি যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে।
এসব সড়কে কোথাও কোথাও হাঁটুপানি আবার কোথাও কোথাও কোমর পানি উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে বানের পানি। জনসাধারণ পথচারী কোমর পানি ডিঙিয়ে অথবা নৌকায় করে যাতায়াত করতে দেখা গেছে।
পাহাড়ি ঢলের কারণে বারকি নৌকায় করে জাফলং, বিছনাকান্দি, জৈন্তাপুরের শ্রীপুর পাথর কোয়ারি,বড় গাঙ্গ ও সারী নদীর বালু উত্তোলন সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। গোয়াইনঘাটে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে পশ্চিম জাফলং গোয়াইন, পিরিজপুর, কর্নি, আলীর গ্রাম, ছাতারগ্রাম, লাবু, পরগনা, ফেনাই কোনা, পূর্ব জাফলং ইউনিয়নের জাফলং চা বাগান, মমিনপুর, আসাম পাড়া, আসামপাড়া হাওর, চৈইলাখেল নবম খণ্ড, সানকিভাঙা, বাউরভাগ, বাউরভাগ হাওর, আলীরগাঁও ইউনিয়নের নাইন্দা, তিতকুলি, বুদিগাঁও, লেঙ্গুড়া ইউনিয়নের লেঙ্গুড়া, লেঙ্গুড়া হাওর, সিটিংবাড়ি, সিটিংবাড়ি হাওর, পাবিজুরি, বাগালতি, পরকুড়ি বিলেরপার, বলালোর পার, সতির হাওর, নিয়াগুল হাওর, গুরকচি, গুরকচি হাওর, দ্বারিখাই হাওর, ধুরারবন্দ, রুস্তমপুর ইউনিয়নের নিম্ন এলাকার টেকনাগুল, মাটিকাপা, বীর মঙ্গল, বীর মঙ্গল হাওর, জামকান্দি, নিজধরগ্রাম হাওর, গোজারকান্দি, কাঠালবাড়ি কান্দি, খালপাড়, পাতলীকোনা হাওর, বগাইয়া হাওর, ঝারিখাল কান্দি, দমদমা হাওর, নতুন ভাঙা হাওর, ইটাচকি কান্দি গ্রামগুলো বানের পানিতে ডুবুডুবু অবস্থায় আছে।
ঢলে সৃষ্ট বন্যায় উপজেলার ফসলের মাঠে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশংকা করা হচ্ছে। বিশেষ করে আউশের বীজতলাসমূহ পানিতে তলিয়ে গেছে। পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হওয়ার কারণে ১০ থেকে ১৫ হেক্টর আউশের বীজতলা, প্রায় ৩০ হেক্টর বোনা আউশসহ ৫ হেক্টর সবজিতলা বানের পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে।
গোয়াইনঘাট উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. সুলতান আলী জানিয়েছেন, পাহাড়ি ঢলের কারণে উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার কারণে ১০ থেকে ১৫ হেক্টর আউশ ধানের বীজতলা, ৩০ হেক্টর বোনা আউশ ও ৫ হেক্টর সবজিতলা পানিতে নিমজ্জিত হয়ে গেছে। পানিতে নিমজ্জিত এসব বীজ ও সবজিতলা ২/৩ দিনের মধ্যে শুকিয়ে গেলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণটা বেশি হবে না। তবে তার অধিক সময়ে পানি থাকলে ক্ষয়ক্ষতি শতভাগ হতে পারে।
পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যার কারণে জাফলং চা বাগান নিমজ্জিত বাগানের ভিতরের অগণিত বুনো খরগোশ, খেকশিয়ালসহ বন্যপ্রাণি ভেসে গেছে। গোয়াইনঘাটের পশ্চিম আলীরগাঁও ইউনিয়নের আব্দুল মহল গ্রামের নাজিম উদ্দিন জানান, গোয়াইন নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে পূর্নানগর, উত্তরগ্রাম, বারকিপুর, সাতাইনসহ বিভিন্ন এলাকায় বাড়ছে বানের পানি। সারী-গোয়াইন সড়কের বিভিন্ন স্থানে পানি বৃদ্ধি পেয়ে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
এদিকে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি পানি বাড়তে থাকায় বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে জৈন্তাপুরের সারি নদী। মঙ্গলবার বিকেল ৪টা ৪৫মিনিটের সারি নদীর পানি বিপদসীমার ০.৭০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
এ ব্যাপারে কথা হলে গোয়াইনঘাটের উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নাজমুস সাকিব বলেন, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের সৃষ্ট বন্যায় গোয়াইনঘাটের নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত বড় ধরণের কোন ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। সবকটি ইউনিয়নের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে। উপজেলার নিম্নাঞ্চলের সবকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহকে বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র ঘোষণা করা হয়েছে। পাহাড়ি ঢল সৃষ্ট বন্যায় গোয়াইনঘাটের নিম্নাঞ্চলের পানিবন্দি মানুষজনের জানমাল গবাদিপশু রক্ষায় সরকারের তরফে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ ও তদারকি করা হচ্ছে। পানিবন্দি পরিবারের জন্য জরুরি ত্রাণ সহায়তা চাওয়া হয়েছে।