সাগর সীমান্তে-০৩
প্রকাশিত হয়েছে : ৪:০০:০৭,অপরাহ্ন ২১ মে ২০২০
সাজিদ মোহাম্মদ :
আমরা একই কলেজে ইন্টারে ভর্তি হই। আড্ডাবাজির মাধ্যমে দিন যাচ্ছে, লেখাপড়া চলছে হৈ-হুল্লোড় করে। রীতিমতো কলেজে অনেকে ভাবতে শুরু করেছে আমরা রিলেশনশিপে আছি। তখন এমন কিছু ছিলো না। এতোটুকু ছিলো যে আমাদের একসাথে পথচলতে অনেক সুবিধা, একসাথে থাকতে চাই। হঠাৎ একদিন সীমানার ফোন আমাদের কলেজের রাহাত স্যার বিয়ের সম্বন্ধ দিয়েছেন বাবার কাছে ফোনে, ডিরেক্টলি বলেননি বাসায় আসতে চান? উত্তরে বলি এটা কোন ব্যপার না স্যারকে শুকনো মাটিতেই জল খাইয়ে ছাড়বো৷ কোনদিন স্যার আসেন আগে জানাও। আমাদের প্রতিদিনের মতো করে চলছে। ইয়ার চ্যাঞ্জ পরিক্ষার আগে টেষ্ট শুরু হলো, পরিক্ষাও শেষ । কয়েকদিন কলেজ ছুটি সীমানারা সবাই গ্রামে গেছে। আমাদের গ্রাম কলেজ থেকে দূরবর্তী হওয়ায় , ছোট বেলার সেই লজিংএ যাই সীমানাদের এলাকায়। এলাকার সব প্রিয় মুখ, ছোট বেলার বন্ধুরা, দিব্বি আড্ডা হচ্ছে, দুইদিন পর সীমানা ফোন দিলো স্যার বিকালে আসছেন। একটি নামি-দামি কলেজের প্রথম শ্রেনীর কর্মকর্তা ভয় তো হচ্ছেই যদি রাজি হয়ে যায় গার্জিয়ানরা। অপি, শুভ, রাসেল ওরা আমার অনেক বিশ্বস্ত বন্ধু। তাদের সাথে বিষয়টা শেয়ার করি। স্যারকে যেভাবেই হোক আটকাতে হবে। প্লান রেডি করে বসে আছি। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো। স্যারের খবর নাই। অন্ধকার হতেই স্যার বাড়ির রাস্তায় নামলেন। হাতে মিষ্টিসহ অনেকগুলি ব্যাগ। দূর থেকে কথা শুরু করছি তিনজন মিলে স্যার আপনি এখানে? আমরাতো আপনার কলেজের স্টুডেন্টস। কার বাড়ি যাবেন? ব্যাগগুলা আমাদের হাতে দিন। কতো কষ্ট করছেন আপনি? আমরা থাকতে আপনি কষ্ট করবেন? হুসেন,হুসেন মাস্টার সাহেবের বাড়ি যাবো। চলেন স্যার। কোন ইয়ারে পড়ো বা? দেখলাম না কোন দিন? এইতো স্যার এবার ভর্তি হলাম। বলেই তিনজন ধানের জমি দিয়ে দৌড় দিলো স্যারের মিষ্টি মিঠাই সাথে নিয়ে। স্যার নিরোপায় হয়ে চিৎকার করতে লাগলেন আমার ব্যাগ,আমার ব্যাগ। স্যার দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে গেছেন কি করবেন? ফেরত যাবেন? না, সীমানার বাড়ি? মিষ্টি ছাড়া কিভাবে? এখান দোকান কি পাওয়া যাবে? অদিকে ওরা অপেক্ষা করছেন হয়তো রান্নাবান্না করে। স্যার ফোন দিলেন সীমানার বাবাকে কোনদিকে আসবো মন্দিরের পাশে আছি। দাঁড়ান। লোক পাঠাচ্ছি। আবুল এসে স্যারকে নিয়ে গেলো। স্যার বাংলো ঘরে বসলেন। ততক্ষণে এশার আজান হয়ে গেছে। সীমানার বাবা স্যারকে নিয়ে মসজিদে চলে গেলেন। নামাজ শেষে বাড়ি ফিরে খাবার দাবার চললো সাথে আরও লোকজন। স্যার মোটেও এমন সিচুয়েশনের প্রত্যাশি ছিলেন না। আপনার কথা শুরু করেন। এইতো ভাবলাম একটু সীমানা বাড়ির পড়াশুনা কেমন হচ্ছে একটু দেখে আসি। আর আপনাদের গ্রামের অনেক সুনাম শুনেছি এই দেখতেই আসা। অনেক ভালো করেছেন দিনে আসলে ভালো হতো। কোন সুযোগ পাচ্ছেন না এতো বড় পরিবার, এতো মানুষ কি করে এই কথা শুরু করবেন। ভাবতে ভাবতে খাবার শেষ করে বাংলা ঘরে নিয়ে যাওয়া হলো। বাংলোয় এলাকার লোকজন চলে আসছেন তাদের কাজের বিষয়ে আলোচনা করতে। আজ রাতে থাকেন? কাল এলাকা ঘুরে দেখবেন? এখন জরুরি মিটিংএ বসতে হবে। কিছুক্ষণ পর আবুল মিষ্টি নিয়ে এলো। স্যার তো আবাক! এ কোথায় এলাম? এগুলা তো আমার মিষ্টি, কিভাবে বলি? আর কিভাবে বুঝাই? স্যারের বুঝতেদেরি হলো না এখানে বড় কোন চক্রান্ত চলছে? স্যার সমস্যা বলে এগুলি ফিরিয়ে দিলেন। সীমানা তার মাসহ চা পান নিয়ে এলো। চা পান করে স্যার উঠলেন। এদিকে সাগর গাড়ি রেডি করে রেখেছে। স্যার মন্দিরের পাশে এসে দেখলেন গাড়ি দাঁড়ানো। যাবেন মেইন রোড? উঠুন। বিদায় স্যার। আমরা আনন্দ করে স্যারের সব মিষ্টি খেলাম। সীমানা ফোন দিলো স্যার কি বিদায় হয়েছে? হু। থ্যাংকস গড। পরের দিন সকালে সীমানা জানায় স্যার চলে গেছেন শুনে বাবা ফোন দিয়েছিলেন বাবার সাথে স্যার উল্টাপাল্টা কথা বলেছেন। কে যেনো মিষ্টি চুরি করে নিয়েছে। আর এই মিষ্টি নাকি আমরা আবার খেতে দিয়েছি? বাবা মাত্র বিকালে মধুপুর হাঠথেকে মিষ্টি কিনেছেন এগুলি দিয়েছিলাম। বাবা স্যারকে পরিষ্কার করে বলে দিলের আর যেনো এমন সাহস না দেখান। এই সাপ্টার এখানেই ক্লোজ। হাহাহ। তাহলে গ্রামের নাম মধুপুর? সাগর জ্বি…চলবে