করোনা: ঝুঁকির মুখে সিলেট
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ মে ২০২০, ৩:১১ পূর্বাহ্ণ
ওয়েছ খছরু:
‘বন্দরবাজারের দিকে যাই না, ভয় করে। মনে হচ্ছে ‘করোনা’ ফলানো হচ্ছে ওখানে। হাজার হাজার মানুষের ভিড়। দোকানপাট খোলা। রাস্তায় যানবাহনের ভিড়। এতো ভিড় ঠেলে কীভাবে যাবো। সাহস পাই না।’- করোনাকালীন সময়ে সিলেটের পরিস্থিতি দেখে এমন মন্তব্য করেন জিন্দাবাজারের মুক্তিযোদ্ধা গলির ব্যবসায়ী সমিতির নেতা মেহেদী কাবুল। নিজেও একজন ব্যবসায়ী। কিন্তু সিলেটের ব্যবসায়ীদের কা–কারবার দেখে তিনি নিজেও বিস্মিত। যেখানে সিলেটে প্রতিদিনই বাড়ছে রোগী। গোটা বিভাগের মধ্যে হটস্পটে পরিনত সিলেট। সেখানে সিলেটের মানুষের কোনো দিশাই নেই। যেনো মৃত্যুও মিছিলে দৌড়াচ্ছে সিলেটের মানুষ। স্বাস্থ্য বিভাগ সিলেটের সহকারী পরিচালক (রোগতত্ব ও নিয়ন্ত্রণ) আনিসুর রহমান জানিয়েছেন- ভিড় না কমালে কোনো ভাবেই করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। বরং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। কিন্তু কে শোনে কার কথা। সবাই যেনো ‘দায়’ ছেড়ে দিয়ে বসে আসেন। সিলেটের জেলা প্রশাসক কার্যালয়, এসপি কার্যালয়, মেয়রের নগরভবন, জেলা পরিষদ সব পাশাপাশি। নগরীর বন্দরবাজারের পাশেই তাদের কার্যালয়। সিলেটে সামাজিক দূরত্ব না মানা সহ যা ঘটছে সব তাদের চোখের সামনেই ঘটছে। কারো কোনো প্রতিকার নেই। নগরীর তালতলা থেকে খালি চোখে তাকালেই চোখে পড়বে জনাকীর্ণ এলাকা। রাস্তায় যানজট। হকারদের ভিড়। দু’পাশের দোকানপাট খোলা। একটু সামনে এগুলো সুরমা পয়েন্ট। সেখানে এলে আরো পরিস্কার হয় পরিস্থিতি। করোনাকালীন সময়ের পূর্বের সময়ের মতো সরব সিলেট নগর। ফুটপাতে বসেছেন হকাররাও। ধীরে ধীরে তাদের সংখ্যা বাড়ছে। তবে- এবার অন্য ধরনের ব্যবসাপাতি। ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা ভ্যান গাড়িতে করে মালামাল বিক্রি করছেন। স্থানীয় ফল বিক্রেতা আমজাদ হোসেন জানালেন- তিনি সকাল ১১টা থেকে সুরমা পয়েন্টে রয়েছেন। তখন থেকেই ওই এলাকায় ভিড় আর ভিড়। রাস্তায় যানবাহনের ভিড়। ফুটপাতে কাপড় বিক্রেতাদের ভিড়। আর রাস্তার পাশে সবজি ও ফল বিক্রেতাদের ভিড়। তিনি বলেন- ভিড় সামলেই তারা ব্যবসা করছেন। যেহেতু বিকেল ৫টার আগেই তাদের চলে যেতে হবে, এ কারনে সকাল ১০টার মধ্যে তারা রাস্তায় নেমে আসেন। তার অনুমান- তালতলা থেকে জিন্দাবাজার এবং তালতলা থেকে ওসমানী শিশু পার্কের সামন পর্যন্ত প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজার ভ্যান রয়েছে। এসব ভ্যানে কেউ সবজি, কেউ মাছ, আবার কেউ ফল নিয়ে বসেছেন। নতুন করে এই বহরে এসে যুক্ত হচ্ছে কাপড় বিক্রেতারা। যেহেতু অনেক দোকানই বন্ধ, এ কারনে কাপড় বিক্রেতারা এখন ভ্যান গাড়িতে ব্যবসা করে যাচ্ছেন। বন্দরবাজারের পাশেই লালদিঘীর পাড়। সেখানে সকাল ১০ টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত ভিড় লেগেই থাকে। আর এই ভিড় সামাল দিতে ট্রাফিক পুলিশও মোতায়েন করতে হয়। সিলেটের হকার ও হাসান মার্কেট শেষ পর্যন্ত ঘোষণা দিয়েই খুলে ফেললেন ব্যবসায়ীরা। মানলেন না সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সহ ব্যবসায়ীদের নেতাদের অনুরোধ। দুটি মার্কেটই ঘিঞ্জি। গত দুই দিন থেকে ফের ক্রেতাদের পদভারে টইটুম্বুর দুটি মার্কেট। সামাজিক দূরত্বের কোনো বালাই নেই। ব্যবসায়ীদের দমানো যাচ্ছে না। বন্দরবাজারের দেখাদেখি সচল হতে শুরু করেছে জিন্দাবাজারও। এক সাটার খোলা রেখেই অনেক ব্যবসা প্রতিষ্টান খুলে দেওয়া হয়েছে। আর ভেতরেই গিজগিজ করে ঈদ মার্কেট সারছেন ব্যবসায়ীরা। সিলেটের বারুতখানার অত্যাধুনিক শপ ফেবুলাস। মাত্র আড়াই ফুটের একটি সাটার খোলা। ভেতরে কী হচ্ছে বুঝার কোনো সুযোগ নেই। একটু উঁকি দিলেই বেরিয়ে আসে সত্যিকার পরিস্থিতি। সোমবার বিকেলে ওই দোকানে গিয়ে দেখা গেলো ৫০ জনের মতো ক্রেতা ছোটো একটি দোকানের ভেতরে শপিং করছিলেন। এক ক্রেতা ছিলেন আরেক ক্রেতার গা ঘেষা। দোকান কর্তৃপক্ষের দাবি- ক্রেতারা এসে ঢুকে যান। কিছু করার থাকে না। তবে- যতটুকু সম্ভব তারা দোকানে সামজিক দুরত্ব বজায় রেখেই ব্যবসা করছেন। দৃশ্যটি হতাশা জাগানিয়া হলেও সিলেটের প্রশাসন বসে নেই। দূরত্ব না মানলেই করা হচ্ছে জরিমানা। ব্যবসায়ীদের ভ্রাম্যমাণ আদালতের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। গত দুই দিনে সিলেটে অন্তত ১০ টি প্রতিষ্টানকে সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের টিম জরিমানা করেছে। সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী জানিয়েছেন- ব্যবসায়ীদের বার বার অনুরোধ সত্ত্বেও তারা সিলেটকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছেন। ব্যবসায়ীদের মধ্যে যারাই সামাজিক দুরত্ব মানছেন না তাদের জরিমানা করা হচ্ছে। তিনি বলেন- লকডাউন না মানার কারনেই সিলেট ক্রমেই ‘হটস্পট’ হচ্ছে। এদিকে- গতকালের সর্বশেষ তথ্য মতে সিলেটে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ১৬৩ জনে গিয়ে পৌঁছেছে। মাত্র চার দিনের ব্যবধানে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। অর্থ্যাৎ ১০০ থেকে ১৬৩ তে পৌঁছতে সময় লাগলো মাত্র ৪ দিন। আর ১০০ তে পৌঁছতে সময় লেগেছিলো দেড় মাস। সিলেটে করোনা রোগীদের জন্য মাত্র ১০০ শয্যার শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালই ভরসা। এখানেও রোগী সংখ্যা বাড়ছে। যেভাবে রোগী বাড়ছে সিলেটে সেজন্য করোনার জন্য বড় পরিসরে চিকিৎসা চালু করার সময় এসেছে জানিয়েছেন চিকিৎসা সংশ্লিষ্টরা।