সিলেটের ডাঃ নাদিরার অনলাইনে রোগী দেখার ফি ৮০০ টাকা !
প্রকাশিত হয়েছে : ২১ এপ্রিল ২০২০, ৭:৪১ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
অসময়ে ভারতের প্রখ্যাত শিল্পী নচিকেতার ‘ও ডাক্তার’ গানের বাস্তবতা দেখা মিলেছে পেশাগত চরিত্রে সিলেটে এক নারী ডাক্তারের। অথচ বৈশ্বিক করোনা পরিস্থিতিতে মানবিক এক পরিবেশ সর্বত্র। বলতে গেলে বাঘে মহিষে এক ঘাটে জল পানেও এখন আপত্তি নেই কারো । তারপরও স্বাভাবিক পরিবেশ প্রতিবেশের আকুতি। ভয়াল পরিস্থিতিতেও রীতিমতো অস্বাভাবিক ভিজিট নেয়ার খবর ছড়িয়ে পড়েছে সিলেট জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যাপিকা এবং প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নাদিরা বেগমের। এক দুই টাকা নয়, মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পরামর্শ দিয়ে ৮০০ টাকা ফি নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে এই মহিলা চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। সরাসরি চেকআপ না করে এমনভাবে ফোনের মাধ্যমে রোগীকে পরামর্শ দেয়া যুক্তিযুক্ত নয় এবং সঠিক পদ্ধতির আওতায় পড়ে না- এমনটা বক্তব্য বিশেষজ্ঞদের। করোনার কারণে মানুষ প্রাণভয়ে তটস্থ, অন্যদিকে আর্থিক সংকটে পড়ায় বেশিরভাগ মানুষই এখন দিশেহারা। এই ভয়াল পরিস্থিতিতেও রোগীর কাছ থেকে অস্বাভাবিক ফি নিচ্ছেন
এদিকে, সরাসরি চেকআপ না করে এমনভাবে ফোনের মাধ্যমে রোগীকে পরামর্শ দেয়া যুক্তিযুক্ত নয় এবং সঠিক পদ্ধতির আওতায় পড়ে না- এমনটা বক্তব্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।
আর মোবাইল ফোনের মাধ্যমে প্রাথমিক পরামর্শ দিয়েই বড় অংকের ফি নেয়া কতোটা মানবিক- এ প্রশ্ন উঠেছে সচেতন মহলে।
জানা গেছে, সিলেটের মেজরটিলা এলাকার বাসিন্দা খালেদ শাহ তার স্ত্রীকে গত কয়েকমাস থেকে নির্ধারিত ফি দিয়ে ডাক্তার নাদিরা বেগমের কাছে নিয়মিত চেকআপ করান এবং তার কাছ থেকে স্বাস্থ্যপরামর্শ নেন।
২০ এপ্রিল- সোমবার তার স্ত্রীর স্বাস্থ্যপরামর্শের প্রয়োজন পড়লে তিনি ডাক্তার নাদিরা বেগমের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে কল করেন। এসময় ডাক্তার নাদিরা তাকে বলেন, ‘আমার সহকারীর মোবাইল ফোনে কল দিয়ে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যান এবং পরে আমার মোবাইল ফোনে কল দেন, তখন আমি আপনার স্ত্রীকে পরামর্শ দিবো।’
পরে খালেদ শাহ ডাক্তার নাদিরার সহকারীর মোবাইল ফোনে কল দিলে তিনি একটি বিকাশ নাম্বার দিয়ে বলেন- ‘ওই নাম্বারে ৮২০ টাকা বিকাশ করার পরেই কেবল কল করে ম্যাডামের পরামর্শ নিতে পারবেন।’
এ বিষয়ে খালেদ শাহ গনমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি আমর স্ত্রীর গাইনি রিলেটেড প্রবলেমের জন্য গতকাল (সোমবার) প্রফেসর নাদিরা বেগম ম্যাডামকে ফোন দেই। তিনি আমাকে বলেন-করোনার কারণে তিনি চেম্বারে রোগী দেখছেন না।
সিরিয়ালের যে নাম্বার আছে তাতে ফোন দিতে বলেন আমাকে। আমি সে নাম্বারে কল দিলে আমাকে একটা বিকাশ নাম্বারে ৮২০/- টাকা বিকাশ করতে বলা হয়। আমাকে আরও বলা হয়- টাকা না দিলে ম্যাডাম পরামর্শ দিবেন না।’
খালেদ শাহ বলেন, ‘অথচ নাদিরা ম্যাডামকে আমি ওয়েসিস হাসপাতালে যতবার দেখিয়েছি তিনি ফি বাবদ ৭০০টাকা রাখতেন। অথচ বর্তমান করোনার কঠিন সময়ে তিনি ফি-তো বাড়িয়েছেনই, শুধুমাত্র ফোনে পরামর্শ দেয়ার কারণে নিতে চাচ্ছেন ৮০০ টাকা। নাদিরা ম্যাডামের এমন অমানবিক আচরণ আমাকে মর্মাহত করেছে এবং আমি আর পরবর্তীতে টাকা বিকাশ করিনি, তার পরামর্শও নেইনি।’
শুধু তাই নয় ডাঃ নাদিরার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ এসেছে আমাদের কাছে, তিনিই একমাত্র ডাক্তার যাকে দুই সপ্তাহ অতিক্রম হলেই রিপোর্ট দেখাতে হলে নতুন করে ফি জমা দিতে হয় এবং উনার ভিজিট হু হু করে বেড়ে যায়, প্রথমে ৫০০/৭০০/৮০০/ থেকে এখন ১০০০ টাকা নেয়ার অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নাদিরা বেগমের মোবাইল ফোনে কল দিলে তিনি ৮২০ টাকার বিনিময়ে মোবাইল ফোনে স্বাস্থ্যপরামর্শ দেয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, আমি যথেষ্ট সময় নিয়ে রোগীর সঙ্গে কথা বলি এবং প্রয়োজনে তাকে ভিডিও কলে পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেই। করোনা পরিস্থিতিতে রোগী সরাসরি দেখা যাবে না তাই আমি এমনটি করছি এবং এটি আমার কাছে সঠিকই মনে হচ্ছে।
৮২০ টাকা কি এই পরিস্থিতিতে ‘রোগীর জন্য মরার উপর খাড়ার ঘা’ হয়ে যাচ্ছে না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি তো একটা রোগীর জন্য দীর্ঘ সময় দিচ্ছি। সে দৃষ্টিতে মোটেও ৮২০ টাকা বেশি হচ্ছে না। আর কেউ যদি দিতে অপারগ হয় তবে আমাকে বললেই হয়। আমি ছাড় দেবো।’
তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছেন, এটি মোটেও ঠিক নয়। এরকম হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।
এ বিষয়ে সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান বলেন, যদিও এ বিষয়ে বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশেন নামের সংগঠনেরই পদক্ষেপ নিতে হবে। তবে আমার বক্তব্য হচ্ছে, এটি মোটেও সঠিক পদ্ধতি নয়। সরাসরি রোগী দেখে চিকিৎসক যে পরামর্শ দেবেন সেভাবে ফোনে দেয়া সম্ভব নয়। আর এই সময়ে এই পরিমাণে ফি নেয়াটাও মানবিক নয়।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশেন (বিএমএ) সিলেট শাখার সভাপতি ডা. রোকন উদ্দিন আহমদ এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘এ বিষয়ে আসলে কিছু না জেনে মন্তব্য করতে পারছি না।’