‘তিনি অসহায়দের মুখে দু’মুঠো খাবার তুলে দিতে চেয়েছেন’
প্রকাশিত হয়েছে : ১০ এপ্রিল ২০২০, ৩:৪৫ অপরাহ্ণ
কানাইঘাট প্রতিনিধি:
নোভেল করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রেহাই পেতে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা পৌরসভার সকল অসহায়দের মুখে তিনি দু’মুঠো খাবার তুলে দেওয়ার জন্য চেষ্টা করেছেন। খেটে খাওয়া মানুষের পাশে দাড়াতে চেয়েছেন। রাতের অন্ধকারে মানুষের দুয়ারে দুয়ারে খাবার নিয়ে যেতে চেয়েছেন। তার মতে একজন পেট পুরে খাবে আর অন্যজন চেয়ে থাকবে? এ কেমন কথা।
নোভেল করোনা ভাইরাস যখন বিশ্বের একেক প্রান্তে নিরব আঘাত করছে, দেশে দেশে লকডাউন ঘোষণা করা হচ্ছে, তখনই তিনি পৌরবাসীর অসহায়দের কথা চিন্তা করে পৌর পরিষদের পক্ষ থেকে ২ হাজার কেজি মসুরী ডাল, ৩ হাজার ৫’শত কেজি মুগ ডাল, ২ হাজার কেজি আলু, প্রায় ২ হাজার ৫’শত পিছ সাবান সহ নিত্যপণ্য সামগ্রী পূর্বে থেকে কিনে মজুদ করে রাখেন। তিনি সিলেটের কানাইঘাট পৌরসভার মেয়র নিজাম উদ্দিন। অবশেষে তার এমন চিন্তা চেতনার মিল পাওয়া গেছে দেশের সার্বিক পরিস্থিতির সাথে।
এক পর্যায়ে গত ২৬ শে মার্চ মরণব্যধী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ হতে মানুষকে নিরাপদে থাকতে হোম কোয়ারেন্টানে থাকার নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ সরকার। এতে টানা হোম কোয়ারেন্টাইনে কারনে সারা দেশের ন্যায় কানাইঘাট পৌরসভার নিম্ন আয়ের নাগরিকরা চরম বিপাকে পড়ে যায়। বিশেষ করে পৌরসভার খেটে খাওয়া শ্রমিকরা বেকার হয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে সরকারের পক্ষ থেকে পৌরসভায় ৯ টন চাল বরাদ্ধ হলেও প্রথম ধাপে আসে ৫ টন চাল। এতে পৌরসভার মেয়র নিজাম উদ্দিন তার পরিষদকে নিয়ে জরুরী সভা করেন। সভায় যাতে করে পৌরসভার প্রত্যেক অসহায়, দরিদ্র, ও খেটে খাওয়া শ্রমিকদের ঘরে ঘরে চাল পৌছে দেওয়া যায় সেই লক্ষে পরিষদের অধিকাংশ সদস্যদের সম্মতিক্রমে আপাতত সরকারী বরাদ্ধের জনপ্রতি ৫ কেজি করে চাল ও পরিষদের বরাদ্ধের ১ টুকরো ডেটল সাবান, ১ কেজি মুসরী ডাল, ১ কেজি আলু বিতরণ করার সিদ্ধান্ত হয়। সেই অনুযায়ী তারা প্রথমে পৌরসভার খেটে খাওয়া মানুষদের মধ্যে হোটেল শ্রমিক, পাথর শ্রমিক ও রিক্সা শ্রমিকদের তালিকা করেন। আজ শুক্রবার পৌরসভার কাউন্সিলর বিলাল আহমদের সাথে আলাপকালে এসব তথ্য নিশ্চিত হয়ে জানা যায় প্রথম দিনেই প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের উপস্থিতিতেই এসব শ্রমিকদের মাঝে প্রায় ১ টন চাল বিতরণ করা হয়। বাকি চাল প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে ১০০টি পরিবারের মাঝে ৫ কেজি করে বিতরণের সিদ্ধান্ত হয়। এবং দ্বিতীয় ধাপের ৪ টন চাল আসার পর তা পূর্ণরায় বিতরন করা হবে এমনটাই ছিল তাদের সিদ্ধান্ত। সেই আলোকে তারা নিম্ন আয়ের কয়েকেটি পরিবারকে ৫ কেজি করে চাল ও নিত্যপণ্যে সামগ্রী বিতরণ করেন।
কিন্তু এ নিয়ে গত বুধবার সকালে পৌরসভায় কিছু হট্রগোল হয়। এক পর্যায় বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পর্যন্ত গড়ায়। পরে তিনি সরেজমিনে উপস্থিত হয়ে তা তদন্ত করেন। এবং সকল মালামালের হিসাব পেয়ে বলেন এখন থেকে সরকারী বিধি অনুযায়ী আপনারা প্রত্যেককে ১০ কেজি করে চাল দিবেন এবং পূর্বে যাদেরকে ৫ কেজি করে দেওয়া হয়েছে তাদেরকে পূর্ণরায় আরো ৫ কেজি করে চাল দেওয়া হবে।
এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বারিউল করিম খান এ প্রতিবেদককে বলেন মেয়র সাহেবের সব কিছু ঠিকই আছে কেবল ১০ কেজির পরিবর্তে ৫ কেজি করে চাল দেওয়া সরকারী বিধি বহিভুত হয়েছে। পৌরসভার নাগরিক আব্দুল হামিদ নামের এক শ্রমিক জানান আমাদেরকে নিত্যপণ্যের সাথে ৫ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে এবং ঐ সময় জানিয়ে দেওয়া হয়েছে পরবর্তীতে আরো ৫ কেজি করে চাল দেওয়া হবে। তবে সাধারণ শ্রমিকদের মতে এই যদি হয়, তবে মেয়রের অন্যায় কোথায়? তারা বলেন যিনি দেশের উপজেলা পর্যায়ে কানাইঘাট পৌরসভাকে একটি অধুনিক পৌরসভায় রূপান্তরিত করার স্বপ্ন দেখেন। সেই লক্ষে দেশের সীমান্তবর্তী অবহেলিত এ অঞ্চলের পৌরসভার উন্নয়নমূলক কাজের জন্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে গিয়ে ভিক্ষুকের মত হাত পেতে থাকেন। যার কারনে কানাইঘাট পৌরসভার প্রতিটি গ্রামের আনাঁচে কানাঁচে পাকা রাস্তা নির্মিত হয়েছে, তা হয়তো অনেকেই ভাল চোখে দেখছেন না।
তবে এ ব্যাপারে মেয়র নিজাম উদ্দিন জানান মরণব্যধী করোনার সংক্রমন থেকে নিরাপদে থাকতে সারা দেশের মত কানাইঘাট পৌরসভার নাগরিকরা একই সাথে হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। এতে একই সাথে সকল খেটে খাওয়া মানুষ বিপাকে পড়েছেন। এমন চিন্তা করে আমরা পৌর পরিষদের অধিকাংশ সদস্যদের সিদ্ধান্তক্রর্মে প্রথম ধাপের ৫ টন চাল একই সাথে প্রতিটি খেটে খাওয়া পরিবারের মাঝে বিতরণ করতে চেয়েছিলাম। কারন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের ৯ টন চাল আমরা প্রত্যেককেই পর্য়ায়ক্রমে ১০ কেজি করে দিতে পারতাম। কিন্তু একই সময় সবাই বিপাকে পড়ায় আমরা চেয়েছিলাম প্রথমে তাদেরকে ৫ কেজি করে দিব এবং পরবর্তী ৪ টন পাওয়ার পর পূর্ণরায় তাদের মাঝে আরো ৫ কেজি করে বিতরণ করবো।
এ সময় মেয়র নিজাম উদ্দিন বার বার উল্লেখ করে বলেন আমরা অবশ্যই সরকারের নিদের্শ মতে তাদেরকে ১০ কেজি করে দিব। কিন্তু পৌরসভার খেটে খাওয়া মানুষের কথা চিন্তা করে আমরা দুই দফায় তা দিতে চেয়েছিলাম। কারন আমরা ৯ টন চালের মধ্যে প্রথম ধাপে ৫টন চাল পেয়েছি। যার কারনে আমরা প্রত্যেককে ১০ কেজি করে দিতে চাইনি এজন্য যে, একই সঙ্গে সকল খেটে খাওয়া শ্রমিকরা ঘর বন্দি রয়েছেন। এতে আমরা যাদেরকে ১০ কেজি করে দিব তারা হয়তো দু-বেলা খেতে পারবে। কিন্তু বাকি খেটে খাওয়া মানুষের কি হবে? এমনটাই চিন্তা করে আমরা তা করতে চেয়েছিলাম।
পরিশেষে তিনি পৌরসভার সকল নাগরিককে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ হতে নিরাপদে থাকার আহবান জানিয়ে বলেন আপনারা সরকারী নির্দেশ মতে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকবেন। আপনাদের খাবারের কোন ধরনের সমস্যা হলে তার নিজ নাম্বারে ফোন করে বলবেন। এতে কেউ জানবে না সাধ্যমত খাবার আপনার ঘরে পৌছিয়ে দেওয়া হবে।