সিলেটে আটকে আছেন ৫ হাজার ব্রিটেন প্রবাসী
প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ এপ্রিল ২০২০, ৭:৩৩ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
নভেল করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ায় বিভিন্ন এয়ারলাইন্স ফ্লাইট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। একই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশও ব্রিটেনের সাথে ফ্লাইট পরিচালনা বন্ধ রেখেছে।
এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন- সিলেটে আটকে পড়া প্রায় ৫ হাজার যুক্তরাজ্য প্রবাসী। গত তিন সপ্তাহ ধরে যুক্তরাজ্যে ফিরতে পারছেন না তারা। দূর দেশে স্বজনদের রেখে আসা এসব প্রবাসী বাংলাদেশে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন। করোনাজনিত পরিস্থিতিতে নাগরিকদের জন্য ব্রিটিশ সরকার যে আর্থিক সুযোগ সুবিধা ঘোষণা করেছে, ব্রিটেনে ফিরতে না পারায় তার থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন ব্রিটিশ বাংলাদেশিরা।
ঢাকাস্থ ব্রিটিশ হাইকমিশনের সাথে যোগাযোগ করা হলে কতৃপক্ষ জানান, তারা চাটার্ড ফ্লাইট চালুর চেষ্টা করছেন। বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে সাড়া পেলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব লন্ডনে যাত্রীদের পৌছাবার চেষ্টা করবেন। আশা করা যাচ্ছে, খুব তাড়াতাড়ি এটা সম্ভব হবে।
ঢাকাস্থ ব্রিটিশ হাইকমিশন বাংলাদেশে অবস্থানরত ব্রিটিশ নাগরিকদের ব্রিটেনে ফিরিয়ে নেবার জন্য সার্বিক পরিস্থিতি সমন্বয় করা হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে। দায়িত্বরত কর্মকর্তা জানান বিমানের ফ্লাইট চালুর ব্যাপারে তারা সার্বক্ষণিক বিমান বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। দেশে অবস্থানরত ব্রিটিশ নাগরিকদের হাইকমিশনের +880 2 55668700 নাম্বারে না পেলে www.gov.uk/contact-consulate-dhaka এই ইমেইলে যোগাযোগের পরামর্শ দেন ওই কর্মকর্তা। সব মিলিয়ে প্রায় পাচঁ হাজার ব্রিটিশ নাগরিক ও দেশটির রেসিডেন্স পারমিটধারী স্থায়ী বাসিন্দা এই মুহুর্তে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন বলেও তিনি জানান।
ব্রিটেন-বাংলাদেশ রুটে ফ্লাইট পরিচালনাকারী ইত্তেহাদ, এমিরেটস, টার্কিশ এয়ারলাইন্সের পর সর্বশেষ বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সও যুক্তরাজ্যে তাদের ফ্লাইট চলাচল বন্ধ করে দেয়। এতে আটকা পড়েন বাংলাদেশে অবস্থানরত ফিরতি যাত্রী যুক্তরাজ্য প্রবাসীরা।
বিমানের একজন যাত্রী মোঃ শাহাবুদ্দিন ব্রিটেনের বার্মিংহামে থাকেন। জানান, জায়গা-জমি সংক্রান্ত কাজে দেশে এসে আটকা পড়েছেন তিনি। ৮ এপ্রিল বিমানের ফ্লাইটযোগে ফেরার কথা ছিল তার। বিমান কতৃপক্ষ এখন বলছেন, এপ্রিলের পর যোগাযোগ করার জন্য। ফ্লাইট ফের চালু করা সরকারের সিদ্বান্তের উপর নির্ভর করছে বলেও বিমান কতৃপক্ষ তাকে জানিয়েছেন।
তিনি জানান, অনেক বয়োবৃদ্ধ ব্রিটিশ নাগরিকের সঙ্গে আনা ওষুধ শেষ হয়ে গেছে। ফ্লাইট বন্ধ থাকায় কুরিয়ারযোগে ওষুধ আনাবার সুযোগও নেই। ডাক্তারও দেখাতে পারছেন না। ব্রিটেনের বাইরে থাকায় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ সরকারের দেওয়া সকল সুযোগ সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হবেন তারা।
টার্কিশ এয়ারলাইন্সের একজন যাত্রী জানান, হাইকমিশনে ফোন করলে বলা হচ্ছে ই মেইলে যোগাযোগ করতে। তিনি অভিযোগ করেন, এয়ারলাইন্সগুলোর কাছ থেকে প্রয়োজনীয় কোন সহযোগিতা পাচ্ছেন না তারা। করোনার কারণে টার্কিশ এয়ারওয়েজ তার গত ৩১ মার্চের ফ্লাইট বাতিল করে।
তারপর তিনি একই এয়ারলাইন্সের পরবর্তী সম্ভাব্যত ফ্লাইট ১৮ এপ্রিলের বুকিং দেন। এরপর ওই ফ্লাইটও আগেই এয়ারলাইন্স কতৃপক্ষ বাতিল করে। এরপর তিনি ফিরতি ফ্লাইটের অর্থ রিফান্ড চাইলে এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ তাকে জানায়,তাদের পক্ষে রিফান্ড দেওয়া সম্ভব নয়। যে এজেন্টের কাছ থেকে টিকেট কেনা হয়েছে তাদের সাথে যোগাযোগের পরামর্শ দেন তারা।
সিলেটের বিভিন্ন ট্রেভেলস ব্যবসায়ী জানান, এয়ারলাইন্সগুলোর স্থানীয় সব অফিস বন্ধ থাকার কারনে অনেক প্রবাসী ব্যক্তিগতভাবে ফ্লাইট চালুর খোজঁ নিতে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। কিন্তু তারা কোনো সেবা দিতে পারছেন না।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান থেকে ছড়িয়ে পড়ে করোনাভাইরাস। উৎপত্তিস্থল চীনে ৮০ হাজারেরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হলেও সেখানে ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব কমে গেছে। তবে বিশ্বের অন্যান্য দেশে এই ভাইরাসের প্রকোপ বাড়ছে। চীনের বাইরে করোনাভাইরাসের প্রকোপ ১৩ গুণ বৃদ্ধি পাওয়ার প্রেক্ষাপটে গত ১১ মার্চ দুনিয়াজুড়ে মহামারি ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। করোনা পরিস্থিতিতে বিমান চলাচল বন্ধ করে দিতে থাকে একের পর এক দেশ।