করোনাভাইরাস: সুনামগঞ্জে লকডাউনে থাকা দুটি গ্রামের মানুষ আতঙ্কিত
প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ এপ্রিল ২০২০, ১২:৪১ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার জালালপুর ও তাহিরপুর উপজেলার মাহতাবপুর গ্রামের ১৬টি পরিবারের ১০০ সদস্য ১৪ দিনের লকডাউন অবস্থায় থাকলেও করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ভয় ও আতঙ্কে পুরো গ্রামবাসী ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। গ্রামের চলাচলের সড়কগুলো ফাঁকা পড়ে আছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কোথাও বের হচ্ছেন না। সবাই বাড়িতে বসে দুশ্চিন্তায় অলস সময় পাড় করছেন। তারা নিহত জয়নাল আবেদীনের করোনা ভাইরাস সংক্রমন পরীক্ষার ফলাফল জানার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। এদিকে দরিদ্র পরিবারের লোকজন সরকারি সহযোগিতা পাওয়ার আশায় প্রহর গুণছেন। ২ এপ্রিল সকালে সুনামগঞ্জের দোয়ারবাজার উপজেলার মান্নারগাঁও ইউনিয়নের জালালপুর গ্রামের ওমান ফেরত প্রবাসী জয়নাল আবেদীন জালালপুর গ্রামের নিজ বসত বাড়িতে অসুস্থ হয়ে মারা যান। তিনি ১৮ ফেব্রুয়ারি ওমান থেকে হযরত শাহজালার বিমান বন্দর দিয়ে দেশে ফিরে আসেন। বাড়ি আসার পর থেকে তিনি সরকারি নির্দেশনা মতো হোম কোয়ারিন্টেনে থাকেন।
০২ ফেব্রুয়ারি তার হোম কোয়ারিন্টেনে থাকার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে তিনি মারা যান। এঘটনায় ৯টি পরিবারের ৭০ জন সদস্যকে লক ডাউন করে প্রশাসন। সারা দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধ করার জন্য প্রবাস ফেরত সহ সকল নাগরিকের হোম কোয়ারিন্টেন এখনো অব্যহত রয়েছে। তার মৃত্যুর পর স্বাস্থ্য বিভাগ করোনা ভাইরাসের সংক্রমন পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে পাঠিয়েছে। নমুনা সংগ্রহের পর বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা মতো প্রশাসন এলাকাবাসীর সহযোগিতা গ্রামের কবর স্থানে তার মরদেহ দাফন করে। গতকাল বিকেলে প্রশাসন মৃত জয়নাল আবেদীনের প্রতিবেশী ও স্বজন রায়হান উদ্দিন,আব্দুল হেকিম, আব্দুল গফুর,রহমত আলী,নিয়ামত আলী, হায়দার আলী,হাবিবুর রহমান,মনফর আলী,আহমদ আলী,ইয়ারুনেচ্ছাসহ ৯টি পরিবারের ৭০ জন সদস্যকে লকডাউন পালন করার নির্দেশনা দেন। করোনা ভাইরাস পরীক্ষার প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে জানায়। সে পর্যন্ত তাদেরকে স্বাস্থ্যবিধি ও লক ডাউনের নিয়ম মেনে চলার কথা বলেন। জালালপুর গ্রামে ৪০০ বসত বাড়ি রয়েছে। লোকসংখ্যা এক হাজার দুইশত জন। তাদের মধ্যে নারী পুরুষ সমান সমান। গ্রামের বেশির ভাগ লোক কৃষক ও দিনমজুর। অন্যদিকে তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের মাহতাবপুর গ্রামের পোষাক কারখানার শ্রমিক জহিরুল গত ১ এপ্রিল সর্দি,জ্বর ও কাশিতে আক্রান্ত ঢাকার গাজীপুরে মারা যান। পরে তার লাশ স্বজনরা গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসে গত ২ এপ্রিল বৃহস্পতিবার রাতে দাফন করা হয়। এঘটনায় ৭টি পরিবারের ৩০ জন সদস্যকে লক ডাউন করে প্রশাসন। জালালপুর গ্রামের হায়দার আলী বলেন, পুরো গ্রামে এখন সুনশান নীরবতা নেমে এসেছে। ভয়ে কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। গ্রামের সবাই উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠান দিন কাটাচ্ছেন। ইলেকট্রিশিয়ান জুয়েল আহমেদ বলেন, ঘরের বাইরে যাওয়া বন্ধ থাকায় আয়রোজগার বন্ধ এখন চলার কোন উপায় নেই। স্বপ্না বেগম বলেন, আমরা নিজেরা এখন বাংলা সাবান দিয়ে ঘনঘন হাত ধুই। শিশুদেরকে হাত ধুইয়ে দেই। গ্রামপুলিশ তাজিরুনেচ্ছা বলেন, এসব পরিবার ঠিক মতো নিয়ম মেনে চলেন কিনা তিনি তা দেখ ভালো করেন। তবে এ অবস্থা দীর্ঘদিন চললে মানুষের জন্য সরকারি সহযোগিতা লাগবে।
মান্নারগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ সাব্বির আহমদ বলেন, শুধু ৯টি পরিবারের সদস্যরা গ্রামের সবাই নিয়ম মেনে চলছেন। দরিদ্র পরিবার গুলোকে খাদ্য সহযোগিতা করার বিশেষ প্রয়োজন।
সিভিল সার্জন ডাক্তার মোঃ শামছ উদ্দিন বলেন, জালালপুরবাসী হয়তো একটু বেশি আতঙ্কে রয়েছেন যেহেতু তাদের গ্রামে এঘটনাটি ঘটেছে। হঠাৎ করে ওমান প্রবাসী মৃত্যুবরণ করায় তারা অনেকটা আতঙ্কিত থাকলেও স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজন বিভিন্ন পরামর্শ ও সহযোগিতার মাধ্যমে তাদের পাশে রয়েছেন। নিহত প্রবাসীর করোনা ভাইরাস পরীক্ষার ফলাফল পাওয়ার পর গ্রামবাসীকে জানানো হলে তাদের ভয় ও শঙ্কা কেটে যাবে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ বলেন, দোয়ারাবাজার উপজেলার জালালপুর ও তাহিরপুর উপজেলা মাহতাবপুর গ্রামে গতকাল বৃহস্পতিবার দুটি লাশ দাফন করা হয়েছে। প্রশাসন সন্দেহ করছে যে লাশটি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে। জালালপুর গ্রামের ওমান প্রবাসীর নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। ফলাফল এখনো জানা যায়নি। দুটি এলাকার পরিবারের লোকজনদের লক ডাউন করে রাখা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে এসব পরিবারকে জরুরি ত্রাণ দেয়ার কথা বলা হয়েছে। এটি বিতরণ করা হলে তাদের সাময়িক কষ্ট লাগব হবে। যাদেরকে লকডাউন কওে রাখা হয়েছে তাদেরকে আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য আমরা অনুররোধ জানাই। তারা জেন কোন রকম আশংকা বা আতঙ্কের মধ্যে না থাকেন। নমুনা পরীক্ষার ফলাফল পাওয়া মাত্রই তাদেরকে জানিয়ে দেয়া হবে। আমরা আশাকরি ভয়ংকর কোন কিছু আসবে না। কাজেই কোন ধরনের গুজবে বিশ্বাস না করে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার আহ্বান জানান তিনি। লকডাউনে থাকা পরিবারের গুলোকে সরকারি সাহায্য সহযোগিতা করা হবে।
জেলায় হোম কোয়ারিন্টেনে রয়েছেন ৬২৯ জন প্রবাসী ও হোম কোয়ারিন্টেন থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন ৫১৩ জন প্রবাসী।