প্রাণঘাতী করোনা: ঝুঁকিতে সিলেট নগরীর ৩৯ হাজার বস্তিবাসী
প্রকাশিত হয়েছে : ০১ এপ্রিল ২০২০, ৬:৩৩ অপরাহ্ণ
ইউনুছ চৌধুরী :
৩৯ হাজার বাসিন্দা। মৌলিক চাহিদা পুরণের তাগিদে তাদের পক্ষে সামাজিক দূরত্ব বা সঙ্গ নিরোধ মেনে চলা সম্ভব হচ্ছে না। সিলেট সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা যায়, নগরীতে প্রায় ১০৯৮টি বস্তি রয়েছে। এসব বস্তিতে প্রায় ৩৯ হাজার ৬ শ মানুষের বসবাস।
সিলেটের সচেতন মহল বলছেন, করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে যানবাহন ও জনসমাগমের উপর বিধি নিষেধ আরোপ করেছে সরকার। জনসাধারণকে ঘরে থাকা এবং খুব বেশি প্রয়োজন না হলে বাইরে বের হতে নিষেধ করা হয়েছে। বলা হয়েছে সাবান দিয়ে বার বার হাত ধোতে হবে।
কিন্তু শহরের বস্তিগুলোতে স্যনিটেশন ও পরিচ্ছন্নতার সুবিধা কতটুকু আছে ? সেখানে এক বাথরুম ব্যবহার করছে একাধিক পরিবার। এক চুলায় রান্না হচ্ছে অনেক গুলো পরিবারের খাবার। একটি টিউবওয়েল বা পানির টেপ ব্যবহার করেন সকলে। সিটি কর্পোরেশন থেকে বলা হচ্ছে তাদেরকে খাদ্য সহায়তা দেয়ার পাশাপাশি ঘনবসতিপূর্ণ ১৩০টি বস্তিতে বেসিন স্থাপন করার হচ্ছে। এছাড়া জীবানুনাশক স্প্রে করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সিলেট নগরীতে বিভিন্ন অভিজাত পাড়ার সাথেই রয়েছে বস্তি। এসব বস্তির ঘিঞ্জি পরিবেশ। ৮ থেকে ১০ ফুটের রুমে পরিবার পরিজন নিয়ে থাকেন নিম্ন আয়ের মানুষ। সেখানে একটি কমন বাথরুম ব্যবহর করেন কয়েকটি পরিবার। একই ভাবে একটি চুলা ব্যবহার করা হয় কয়েকটি পরিবারের খাবার তৈরির জন্য। কোথাও একটি টিউবওয়েল থেকে সবাই খাবার পানি নেন।
সিলেট নগরের বস্তির কয়েকজন বাসিন্দা জানান, গিঞ্জি পরিবেশ এবং ছোট একটি রুম হওয়ায় ঘরে থাকাই কঠিন তাদের জন্য । এর জন্য তারা বাইরে গিয়ে হাটাহাটি বা গল্পগুজব করেন। শিশুরাও বাইরে গিয়ে খেলাধুলা করে। শুধু শহর নয়, বিভিন্ন উপজেলা সদরেও এধরণের বস্তি গুলোতে একই অবস্থা বিরাজ করছে।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায় নগরীতে প্রায় ১০৯৮টি বস্তি রয়েছে। এসব বস্তিতে প্রায় ৩৯ হাজার ৬শ মানুষ বসবাস করেন। যেখানে ৬ পরিবারের বেশি মানুষ একসাথে থাকেন সেসব বস্তি হিসেবে নেয়া হয়েছে। যেগুলোতে দুই থেকে ৫ পরিবার থাকলে সেগুলো বস্তি হিসেবে নেয়া হয়নি।
নগরীর একটি বস্তির বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা একই বাথরুম ও চুলা ব্যবহার করেন। পানির জন্য একই টেপ। তারা জানান, চাইলেও দূরত্বে থাকার উপায় নেই।
সিরাজুল ইসলাম নামের একজন জানান, তারা ছোট খাটো পেশায় নিয়োজিত। সব কিছু বন্ধ থাকায় বেকার হয়ে পড়েছেন। কোন কিছু খাওয়ার আগে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার কথা বলা হয়েছে কিন্তু তা পালন করা সম্ভব হয় না।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের বস্তি উন্নয়ন শাখার উপসহকারী প্রকৌশলী অংশুমান ভট্টাচার্য জানান, বস্তিগুলোতে খাদ্য সহায়তার দেওয়া হবে। সেনিটাইজেশন ও পরিচ্ছন্নতার জন্য অতি ঘনবসতিপূর্ণ ১৩০টি বস্তিতে দুটি করে বেসিন স্থাপনের কাজ চলছে ইউএনডিপি এর সহায়তায়। আগামী ৩দিনের মধ্যে কাজ শেষ হবে এবং প্রতিটি বেসিনে প্রতিদিন ২টি করে সাবান দেয়া হবে।
এব্যাপারে সিলেট সিনিয়র স্বাস্থ্য শিক্ষা অফিসার সুজন বনিক বলেন, করোনা প্রতিরোধে আমরা যেসব নিয়ম মেনে চলতে বলি বস্তি গুলোতে তার কোনটারই কোন সুযোগ নেই। বস্তির বিষয়টি দীর্ঘমেয়াদী ও নীতিনির্ধারনী ব্যাপার। তবে এই মূহূর্তে একটিই কথা বুঝিয়ে দিতে হবে ‘নিজে সুরক্ষিত থাকুন এবং অন্যকে সুরক্ষিত রাখুন’। সেজন্য সচেতনতা বৃদ্ধি এখন জরুরী। সাবান খুবই দামি নয়, সাধারণ সাবান দিয়ে হাত ধোতে হবে। মূলত হাত ধোয়ার অভ্যাস করতে হবে। তাদের সাথে সর্বদা যোগাযোগ রেখে যতটুকু পারা যায় তাদের সচেতন করতে হবে।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. জাহিদুল ইসলাম জানান, সিটি কর্পোরেশন থেকে সচেতনতামূল লিফলেট বিতরণ, জীবনুনাশক স্প্রে করা হচ্ছে। বেসিন স্থাপনের কাজ দুই একদিনের মধ্যে শেষ হবে। তিনি বলেন, কাউন্সিলরদের জীবানু নাশক ফিনাইল ও ব্লিচিং পাউডার এবং তা ছিটানোর জন্য মেশিন দেয়া হয়েছে। যাতে তারা বস্তিগুলোতে ছিটাতে পারেন। তিনি সকলকে সচেতন হওয়ার আহবান জানিয়ে বলেন, কোন একজন আক্রান্ত হলে তিনি পুরো এলাকাকে আক্রান্ত করে ফেলবেন। তাই বস্তি বা অভিজাত এলাকা বলে কোন প্রভেদ নেই। তাই কোন একজনও যাতে আক্রান্ত না হোন সেই চেষ্টা করছে সিটি কর্পোরেশন। তবে কোথাও কোন সমস্য থাকলে তাকে জানাতে অনুরোধ করেন তিনি। সুত্র-সিলেটের ডাক।