সিলেটের আইসোলেশন সেন্টারে নেই আইসিইউ অক্সিজেন ভেন্টিলেশন
প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ মার্চ ২০২০, ৮:৩৯ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
বিশ্বজুড়ে তাণ্ডব চালিয়ে যাচ্ছে প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯। ইউরোপ-আমেরিকায় প্রতিদিনই দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। বাংলাদেশও মুক্ত নয় করোনার থাবা থেকে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশে ৪৮ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে মারা গেছেন ৫ জন। সুস্থ হয়ে ফিরেছেন ১১ জন। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত অনেক রোগীকে নিতে হচ্ছে নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউতে), প্রয়োজন অক্সিজেন এবং ভেন্টিলেশনের।
চিকিৎসকরা জানান, করোনা আক্রান্ত রোগীকে শুধু আইসিইউ সাপোর্ট দিতে প্রয়োজন ১১৩ ধরনের যন্ত্রপাতি ও ওষুধপত্র। আরও অনেক চিকিৎসাসামগ্রীর প্রয়োজন হয়। তবে সিলেটে আইসোলেশন সেন্টার হিসেবে ঘোষণা করা শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে আইসিইউ ইউনিট, সেন্টার অক্সিজেন ও ভেন্টিলেশনসহ অনেক কিছুই নেই জানিয়ে শামসুদ্দিন হাসপাতালের আরএমও ডা. সুশান্ত কুমার মহাপাত্র বলেন, এখানে তো আগে আইসিইউ ছিল না, নতুন করে চালু করা হচ্ছে। এজন্য যা যা প্রয়োজন আমরা তালিকা করে পাঠিয়েছি। আশা করি, দ্রুততম সময়ের মধ্যে সবকিছু পেয়ে যাব।
যদিও প্রবাসী অধ্যুষিত হওয়ায় সিলেটকে করোনা সংক্রমণের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবুও মঙ্গলবার পর্যন্ত সিলেটে পৌঁছেনি করোনাভাইরাস শনাক্তকরণের টেস্টিং কিট। সন্দেহভাজন কেউ ভর্তি হলে ঢাকায় রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের (আইইডিসিআর) অপেক্ষায়ই থাকতে হয় রোগী ও চিকিৎসকদের। শনিবার রাতে করোনাভাইরাস আক্রান্ত সন্দেহে শামসুদ্দিন হাসপাতালের আইসোলেশন সেন্টারে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক প্রবাসী নারী মারা গেছেন। মৃত্যুর ৩ দিন পর আইইডিসিআর জানিয়েছে, ওই নারী করোনা আক্রান্ত ছিলেন না। এছাড়া সিলেটের অনেক হাসপাতালেই চিকিৎসক-নার্সদের জন্য নেই পর্যাপ্ত পিপিই (পার্সোনাল প্রটেকশন ইকুইপমেন্ট)।
করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য সিলেট নগরীর ১০০ শয্যাবিশিষ্ট শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালকে আইসোলেশন ইউনিট হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া প্রস্তুত রাখা হয়েছে সিলেট বক্ষব্যাধি হাসপাতাল ও শাহপরান (রহ.) হাসপাতালকে। এ হাসপাতালগুলোর কোথাও নেই আইসিইউ সুবিধাসহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসামগ্রী। তাই আক্রান্ত রোগীর অবস্থার অবনতি হলে বিপাকে পড়তে হবে চিকিৎসকদেরও।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, শামসুদ্দিন হাসপাতালকে কয়েক বছর আগে প্রধানমন্ত্রী ‘বিশেষায়িত শিশু হাসপাতাল উদ্বোধন করে গিয়েছিলেন, এখনও এর কোনো বাস্তবায়ন নেই। সিলেট ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা, এখানে প্রথম থেকেই ব্যবস্থা নেয়া উচিত ছিল। তবে এতসব সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও প্রস্তুতি পর্যাপ্ত রয়েছে বলে দাবি করছেন সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায়।
স্বাস্থ্য বিভাগ সিলেটের সহকারী পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ডা. আনিসুর রহমান বলেন, এ মুহূর্তে আমাদের মিনিমাম চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রস্তুত রয়েছে। টেস্টিং কিট অনেক সময় সঠিক রিপোর্ট দেয় না, তাই আমরা এখনই এটা নিয়ে আসার পক্ষে নই। তবে মন্ত্রণালয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে বিভাগীয় পর্যায়ের মেডিকেল কলেজগুলোয় আইইডিসিআরের মতো বিএসএল টু ল্যাব স্থাপন করার। আশা করি, এটা হয়ে যাবে। তিনি বলেন, আইসিইউ সাপোর্ট এ সময়ের মধ্যে প্রস্তুত করা সম্ভব নয়। তবে সেন্ট্রাল অক্সিজেন ও ভেন্টিলেটরসহ বাকি প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসামগ্রী প্রস্তুত করা সম্ভব।
ডাক্তারপাড়ায় সুনশান নীরবতা : করোনা সংক্রমণের ভয়ে সিলেটে বন্ধ হয়ে গেছে বেশিরভাগ ডাক্তারের চেম্বার। চিকিৎসকরা বলছেন, পিপিই না থাকায় চেম্বার বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছি। শুক্রবার সিলেট নগরীর ডাক্তারপাড়া খ্যাত স্টেডিয়াম মার্কেট ঘুরে দেখা গেল এলাকাজুড়ে সুনসান নীরবতা। করোনা আতঙ্কে যখন পুরো দেশ কাঁপছে তখন বেশিরভাগ চেম্বারেই ডাক্তার নেই।
কিছু ফার্মেসি আর ডায়াগনস্টিক সেন্টার তাদের দরজা খোলা রাখলেও ডাক্তার না থাকায় নেই রোগীদের দৌড়ঝাঁপও। শুধু স্টেডিয়াম মার্কেটেই নয়, নগরীর বেশিরভাগ ডায়াগনস্টিকেই ডাক্তাররা তাদের চেম্বার বন্ধ করে দিয়েছেন। ফলে শারীরিক নানা অসুস্থতা নিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে রোগীদের। বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে দূর-দূরান্ত থেকে আগত রোগীদের। জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে ডাক্তার দেখাতে এসে ফিরে যেতে হচ্ছে অনেককেই। কিছু চেম্বার খোলা থাকলেও পিপিই না থাকায় ডাক্তাররা রোগী দেখছেন না। কথা হয় শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মুজিবুল হকের সঙ্গে। তিনি বলেন, পিপিই না থাকায় অনেক ঝুঁকিতে থাকতে হচ্ছে। এখনও পর্যাপ্ত পিপিইর ব্যবস্থা করা হয়নি। এমনকি বাজারেও পাওয়া যাচ্ছে না। এমতাবস্থায় সবচেয়ে ঝুঁকিতে আমরাই। কারণ কোনো করোনা রোগী না বুঝে সরাসরি আমাদের কাছে চলে এলে আমরা আক্রান্ত হয়ে যাব।
নগরীর হাউজিং এস্টেট এলাকার বাসিন্দা গিয়াস উদ্দিন (৬৫) দীর্ঘদিন ধরে কিডনি রোগে ভুগছিলেন। নিয়মিত ডায়ালাইসিস করাতে হতো তাকে। ১৪ মার্চ যুক্তরাজ্য থেকে তার ছেলে দেশে ফেরেন। এর ৩ দিন পর গিয়াস উদ্দিনের শ্বাসকষ্ট শুরু হলে তাকে নিয়ে সিলেট কিডনি ফাউন্ডেশনে যান ছেলে। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক বিস্তারিত শুনে তাকে চিকিৎসা না দিয়ে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখার পরামর্শ দেন। মঙ্গলবার রাত ৯টায় নিজ বাসায় হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা অবস্থায় তিনি মারা যান। পরিবারের অভিযোগ, চিকিৎসা না পেয়ে তিনি মারা গেছেন। নগরীর খাসদবীর এলাকার সুমন যুগান্তরকে বলেন, ১৯ মার্চ জ্বর, সর্দি ও কাশি নিয়ে ওসমানী হাসপাতালের জরুরি বিভাগে গেলে চিকিৎসকরা তাকে আউটডোরে পাঠিয়ে দেন। আউটডোরের চিকিৎসক জ্বর, সর্দি ও কাশির কথা শুনে তাকে কিছু ওষুধ লিখে বাসায় পাঠিয়ে দেন। ডাক্তারদের এমন আচরণে হতাশ হয়ে বাসায় দিন কাটাচ্ছেন সুমন।
অপরদিকে, প্রবাসী অধ্যুষিত হওয়ায় সিলেটকে করোনা সংক্রমণের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এরপরও শুক্রবার পর্যন্ত সিলেট পৌঁছেনি করোনাভাইরাস শনাক্তকরণের টেস্টিং কিট। সন্দেহভাজন কেউ ভর্তি হলে আইইডিসিআরের অপেক্ষায়ই থাকতে হয় রোগী ও চিকিৎসকদের। এর মধ্যে ২১ মার্চ রাতে করোনা সন্দেহে শামসুদ্দিন হাসপাতালের আইসোলেশন সেন্টারে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক প্রবাসী নারী মারা গেছেন। মৃত্যুর ৩ দিন পর আইইডিসিআর জানিয়েছে ওই নারী করোনা আক্রান্ত ছিলেন না। এছাড়া সিলেটের অনেক হাসপাতালেই চিকিৎসক-নার্সদের জন্য নেই পর্যাপ্ত পিপিই। করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য সিলেট নগরীর ১শ’ শয্যা বিশিষ্ট শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালকে আইসোলেশন ইউনিট হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া প্রস্তুত রাখা হয়েছে সিলেট বক্ষব্যাধি হাসপাতাল ও শাহপরান (রহ.) হাসপাতালকে। এ হাসপাতালগুলোর কোথাও নেই আইসিইউ সুবিধাসহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসামগ্রী।
তাই আক্রান্ত রোগীর অবস্থার অবনতি হলে বিপাকে পড়তে হবে চিকিৎসকদেরও। এমন পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন সচেতন মহল। তাদের দাবি, প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেটে করোনাভাইরাসের চিকিৎসার সব যন্ত্রপাতি ও ওষুধপত্র দ্রুত সরবরাহ করা প্রয়োজন। এ ব্যাপারে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, প্রাণঘাতী এ করোনাভাইরাস নিয়ে প্রথম থেকে সরকারের পক্ষ থেকে গাফিলতি রয়েছে। শামসুদ্দিন হাসপাতালকে কয়েক বছর আগেই প্রধানমন্ত্রী ‘বিশেষায়িত শিশু হাসপাতাল’ হিসেবে উদ্বোধন করলেও এখনও এর কোনো বাস্তবায়ন নেই। বর্তমানে হাসপাতালটির নিজস্ব কোনো পরিচয়ই নেই। শিশু হাসপাতাল না সদর হাসপাতাল সেটা কেউ বলতে পারে না।
তবে এত সব সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও প্রস্তুতি পর্যাপ্ত রয়েছে বলে দাবি করছেন সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায়। তিনি বলেন, রোগীদের স্বাভাবিকভাবেই চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় জ্বর, সর্দি ও কাশিসহ করোনা উপসর্গের রোগীদের আউটডোরে আলাদাভাবে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। আর স্বাস্থ্য বিভাগ সিলেটের সহকারী পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ডা. আনিসুর রহমান জানান, এ মুহূর্তে আমাদের মিনিমাম চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রস্তুত রয়েছে।
টেস্টিং কিট অনেক সময় সঠিক রিপোর্ট দেয় না, তাই এখনই এটা নিয়ে আসার পক্ষে আমরা নই। তবে মন্ত্রণালয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে বিভাগীয় পর্যায়ের মেডিকেল কলেজগুলোয় আইইডিসিআরের মতো বিএসএল টু ল্যাব স্থাপন করার। আশা করি এটা দ্রুত হয়ে যাবে। তিনি বলেন, আইসিইউ সাপোর্ট এ সময়ের মধ্যে প্রস্তুত করা সম্ভব নয়। আল্লাহ না করুক যদি এরকম পরিস্থিতি তৈরি হয়, তখন ওসমানী হাসপাতালের আইসিইউর ওপরই ভরসা করতে হবে।