সিলেটের ব্যস্ত রাস্তাঘাট ফাঁকা: চলছে সেনা টহল ও মাইকিং
প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ মার্চ ২০২০, ১১:৫২ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত বাংলাদেশও। এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব রোধে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। শুক্রবার ছুটির দ্বিতীয় দিনও সিলেটের রাস্তায় নেই কোনো মানুষ। খোলা নেই কোনো দোকানপাট। ব্যস্ত নগর এখন পুরো ফাঁকা। শুধু নগরই নয়, সিলেটের সবকটি উপজেলার সকল বাজারও ফাঁকা। প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে গ্রামীণ সড়কেও চলছেনা যানবাহন।
সামাজিক দূরত্ব ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুবিধার্থে প্রশাসনকে সহায়তা দিতে সকাল থেকে সেনাবাহিনীর ১৫টি টিম টহল দিচ্ছে। জেলা সদর ছাড়াও বিভিন্ন উপজেলার সড়কেও টহল দিয়ে জনসাধারণকে অকারণে সড়কে বের না হতে মাইকিং করে সতর্ক করা হচ্ছে।
করোনার প্রভাবে শুক্রবার জুমার নামাজেও বড় মসজিদগুলোতে মুসল্লির সমাগম ছিল কম। নির্দেশনা অনুসারে জামাতের ২০ মিনিট আগে খুলে দেওয়া হয়। হযরত শাহজালাল (রহ.) মাজার জামে মসজিদের প্রধান ফটক। নামাজের পরপরই ফটক বন্ধও করে দেওয়া হয়। সিলেটের সর্ববৃহৎ জুমার নামাজ এ মসজিদে আদায় হয়। যেখানে কয়েক সহস্রাধিক মুসল্লি এক সঙ্গে কাতারবন্দি হয়ে নামাজ আদায় করেন। তবে করোনা ভাইরাস সতর্কতার কারণে মসজিদে স্থানীয় মুসল্লি ছাড়া বাহিরের কেউই ছিলেন না।
বিভিন্ন মসজিদে করোনার ঝুঁকি রোধে সচেতনতায় মুসল্লিদের সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছে পুলিশ। একই সঙ্গে অসুস্থ ব্যক্তিদের নামাজে না আসতে অনুরোধও করেছেন তারা। একই সাথে নামাজের আগে খুতবায় একই ভাবে করোনা রোধে সরকারের স্বাস্থ্যবার্তা মেনে চলতে মুসল্লিদের অনুরোধ জানিয়েছেন খতিবরাও। নামাজের পর করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে বিশ্বের সবদেশকে সুরক্ষিত রাখতে এবং আক্রান্তদের সুস্থতা কামনা করে মোনাজাতও করা হয়েছে।
নগর ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তায় মানুষ না থাকায় নেই কোন যানবাহনও। বিচ্ছিন্নভাবে কয়েকটি রিকশা চলতে দেখা গেলেও ছিলেন না কোন যাত্রী। শহরে কিছু এলাকায় ফার্মেসি, মুদি ও কাঁচাবাজার ছাড়া সব দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। জুমার পর বিভিন্ন মসজিদের আশপাশে লোকসমাগম দেখা গিয়েছিল। তবে দ্রুতই আবার এসব এলাকাও ফাঁকা হয়ে যায়। তবে জনসমাগম না থাকলেও সড়কের মোড়ে মোড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।
একই অবস্থা জেলার বিভিন্ন উপজেলা সদরেরও। দুপুরে সিলেটের সীমান্তবর্তী উপজেলা জৈন্তাপুরের দরবস্ত বাজারে অ্যাকশনে নামে সশস্ত্র বাহিনী। এসময় উপজেলা প্রশাসন এবং থানা পুলিশও সাথে ছিল। থানার ওসি শ্যামল বণিক নিজে হ্যান্ড মাইক হাতে সতর্কবার্তা প্রকাশ করে যাচ্ছিলেন। এসময় অকারণে বাজারে আসা ব্যক্তিদের বাড়িতে পাঠায় পুলিশ, বাহিরে বের না হতে নির্দেশনাও দেন। জুমার নামাজের সময় ওই এলাকার মসজিদগুলোতেও জনসচেতনামূলক স্বাস্থ্যবার্তা হ্যান্ড মাইকে ঘোষণা করেন ওসি শ্যামল বণিক।
এছাড়া সিলেটের সবকটি উপজেলার রাস্তায় সেনাবাহিনীর টহল দল ঘুরছেন। উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশনা অনুসারে ফার্মেসী, মুদি দোকান এবং কাঁচাবাজার খোলা থাকলেও বন্ধ রয়েছে অন্য দোকান। অবশ্য সন্ধ্যা পর ফার্মেসী ছাড়া বাকি দোকানগুলোও বন্ধ হয়ে যাবে। উপজেলার সকল মসজিদে মাইকিং করে প্রয়োজন ব্যতিত ঘর থেকে বের না হওয়ার জন্য জনসাধারণকে বারবার আহ্বানও জানানো হচ্ছে।
এদিকে জৈন্তাপুরের সিলেট-তামাবিল সড়কে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে গণপরিবহন চালানোর কারণে এক লেগুনা চালককে চার হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়েছে। এছাড়া পণ্যের মূল্য তালিকা না থাকায় জেলার কোম্পানীগঞ্জে দুই দোকানীকে ১০ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়েছে। অন্যদিকে সিলেট নগরের পাশাপাশি বিভিন্ন উপজেলায় জীবাণুনাশক ওষুধ প্রয়োগ অব্যাহত রেখেছে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন।
সিলেট জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (মিডিয়া) মো. মেজবাহ উদ্দিন জানান, সকাল ৮টা থেকেই সশস্ত্র বাহিনী মাঠে বেরিয়েছে। নগরসহ সিলেট জেলার সব উপজেলায় রাত পর্যন্ত সশস্ত্র বাহিনীর একাধিক টিম টহল দেবে। টহলকালে সেনাবাহিনী হ্যান্ড মাইক দিয়ে সিলেটবাসীকে কোনো ধরনের গুজবে কান না দিয়ে ঘরে থাকার আহ্বান জানাচ্ছেন। পাশাপাশি আতঙ্কিত না হওয়ার এবং সচেতন ও পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার পরামর্শও দিচ্ছেন।’