করোনাভাইরাস: বড় ঝুঁকিতে প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেট
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ মার্চ ২০২০, ৯:১২ অপরাহ্ণ
আহমেদ রাজু, নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিদেশফেরত নাগরিকদের হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। জনসুরক্ষায় এটি নিশ্চিতের জন্য প্রয়োজনে বল প্রয়োগও করা হচ্ছে। এর পরও সরকারের পরামর্শ উপেক্ষা করে হোম কোয়ারেন্টিনে না থেকে সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছেন বেশ কয়েকজন বিদেশফেরত ব্যক্তি। ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে কভিড-১৯-এ সংক্রমণের ঝুঁকিও বেড়েছে বলে জানিয়েছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো বলছে, প্রবাসীদের হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত না করা গেলে দেশের প্রবাসী অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোয় রোগটির বড় মাত্রায় প্রাদুর্ভাবের ঝুঁকি তৈরি হবে। এ সকল প্রবাসী অধ্যুষিত অঞ্চলের মধ্যে বড় ঝুঁকিতে আছে সিলেট।
সরকারি হিসাব মতে, দেশে আরও তিনজন নভেল করোনাভাইরাসের আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়া এক ব্যক্তি আইসিইউতে। এ নিয়ে দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২০ জনে দাঁড়ালো। হাতে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ হোম কোয়ারেন্টিন হয়েছে সিলেটে, সিলেট অঞ্চলজুড়ে নতুন করে ৩৩২ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। এ নিয়ে করোনাভাইরাসে হোম কোয়ারেন্টিনের সংখ্যা হাজারের উপরে পৌছে গেছে। সর্বশেষ ২৪ ঘন্টায় সিলেট বিভাগে ১২১৪ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে।
প্রবাসীবহুল অঞ্চল হিসেবে পরিচিত সিলেট। ৪৪ দিনে বিভিন্ন দেশ থেকে সিলেটে প্রবেশ করেছেন প্রায় ২৬ হাজার মানুষ। সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং বিভাগের ছয়টি স্থলবন্দর দিয়ে এঁরা প্রবেশ করেছেন। বিদেশ থেকে আসা এসব ব্যক্তিদের সিংহভাগই কোয়ারেন্টিনের বাইরে। মাত্র ১২শ’ জনকে রাখা হয়েছে হোম কোয়ারেন্টিনে। ফলে বাকি বিদেশফেরতদের মাধ্যমে সিলেটে করোনাভাইরাস ছড়ানোর আশঙ্কা করছেন অনেকেই।
এই অঞ্চলের বেশিরভাগ প্রবাসীই যুক্তরাজ্যে থাকেন। গত দেড়মাসে কেবল যুক্তরাজ্য থেকেই ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে সিলেটে ফিরেছেন ১৯ হাজার ৩৮ জন।একে তো প্রবাসীবহুল তারওপর সীমান্তবর্তী তাই নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণের জন্য সিলেটকে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিপুলসংখ্যক প্রবাসী এখনো হোম কোয়ারান্টাইনের আওতায় আসেননি। আবার যাদের আনা হয়েছে, তারাও সঠিকভাবে তা মানছেন না। এ অবস্থায় এই বিভাগের সাধারণ মানুষ প্রবাসীদের মাধ্যমে নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দেয়া তথ্যমতে, দেশের এক কোটিরও বেশি মানুষ বিশ্বের ১৬৫টি দেশে কর্মরত। এসব দেশের অধিকাংশেই করোনাভাইরাসে সংক্রমিত রোগী শনাক্ত হয়েছে। অধিকাংশ দেশেই সিলেটীদের অবস্থান রয়েছে।
আইইডিসিআর জানিয়েছে, বাংলাদেশের সব আন্তর্জাতিক বন্দর ব্যবহার করে গত ২১ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত দেশে প্রবেশ করেছেন মোট ৬ লাখ ৩১ হাজার ৫৩৮ জন। সর্বশেষ গতকাল সৌদি আরবের রিয়াদ থেকে ৪০৬ জন বাংলাদেশে ফিরে এসেছেন। তাদের মধ্যে দুজনের তাপমাত্রা বেশি থাকায় সরাসরি হাসপাতালে নেয়া হয়।
বাকিদের হোম কোয়ারেন্টিনের নির্দেশনা দিয়ে নিজ বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, ২১ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত কোয়ারেন্টিনে ছিলেন ৯ হাজার ১০৬ জন। গতকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় মোট কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে ২ হাজার ৭১৩ জনকে। এর মধ্যে হোম কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে ২ হাজার ৬৯৮ জনকে। প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে আছেন ১৫ জন। ১০ মার্চ থেকে গতকাল পর্যন্ত আইসোলেশনে থেকেছেন মোট ৭৭ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেটের বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান আজ শুক্রবার বিকালে জানান, নতুন করে ৩৩২ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। তিনি জানান, সিলেট বিভাগের সিলেট জেলায় ৬৮২ জন, সুনামগঞ্জ জেলায় ৯১ জন, মৌলভীবাজার জেলায় ৩১৭ জন এবং হবিগঞ্জে ১২৪ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। এসব ব্যক্তিদের সিংহভাগই প্রবাসী। বাকিরা তাদের পরিবারের সদস্য।
এদিকে সরকারের দেয়া হোম কোয়ারেন্টিন না মানায় বিভিন্ন জেলার মতো সিলেটেও আইনি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। যারা হোম কোয়ারেন্টিনে থাকছেন না, তাদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। সিলেট অঞ্চলে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে কমিউনিটি সেন্টার। অনেক প্রবাসীর বিয়ে পণ্ড করা হয়েছে।
জানা গেছে, বিদেশফেরত ব্যক্তিরা আদতেই হোম কোয়ারেন্টিনে থাকছেন কিনা, তা দেখতে কাল বৃহস্পতিবার সিলেট জেলা প্রশাসনের পাঁচটি টিম মাঠে নামে। কিন্তু বেশিরভাগ ব্যক্তিকেই তারা কোয়ারেন্টিনে দেখতে পায়নি। আজ শুক্রবারও জেলা প্রশাসনের সাতটি টিম পর্যবেক্ষণে নেমেছিল। কিন্তু আজকের চিত্রও সুখকর ছিল না।