নবীগঞ্জে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১০জন, আহত ৩
প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ মার্চ ২০২০, ৯:২৮ অপরাহ্ণ
ছনি চৌধুরী, হবিগঞ্জ প্রতিনিধি:
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের হবিগঞ্জের নবীগঞ্জের প্রাইভেট মাইক্রোবাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সাথে ধাক্কা লেগে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় দুই নারীসহ ১০ জন নিহত হয়েছেন।
গুরুতর আহত ৫জনকে আশংকাজনক অবস্থায় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১ শিশুসহ ২জন মারা যায়। আহত ৩জনকে মুমুর্ষ অবস্থায় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নবীগঞ্জ উপজেলার গজনাইপুর ইউনিয়নের কান্দিগাঁও নামকস্থানে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রাইভেট মাইক্রোবাসটি সড়কের পাশ্ববর্তী গাছের সাথে ধাক্কা লেগে ধুমড়ে মুচড়ে ঘটনাস্থলে ৮জন মারা যায়। এ সময় মহাসড়কে আশপাশের শত শত লোকজন উপস্থিত হলে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারনা হয়। খবর পেয়ে হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোঃ কামরুল হাসান, নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বজিত কুমার পাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত শুক্রবার ভোরে নারায়নগঞ্জের ফতুল্লা পাগলা কুসুমপাড়া এলাকা থেকে সৌদি প্রবাসী ইমন খাঁন (২৬), তার পিতা, ভাই, ভাবি, বন্ধুসহ পরিবারের ১৩ জন সদস্য নিয়ে (হাইএস) মাইক্রোবাস (ঢাকা মেট্রো চ ১৯-৫৪৬২) যোগে বিয়ের পাত্রী দেখার জন্য সিলেটের সুনামগঞ্জের দিরাই জগদল গ্রামের উদ্দ্যেশে রওয়ানা দেন। পথিমধ্যে নবীগঞ্জের দিনারপুর অঞ্চলের দূর্ঘটনা কবলিত এলাকা হিসেবে পরিচিত কান্দিগাঁও নামকস্থানে পৌঁছামাত্র দ্রুতগামী প্রাইভেট মাইক্রোবাসটি নিয়ন্ত্রন হারিয়ে সড়কের পাশের একটি বড় গাছের সাথে ধাক্কা লেগে ধুমড়ে-মুচড়ে যায়। এসময় ঘটনাস্থলে নিহতরা হলেন- নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পাগলা মুসলিমপাড়া এলাকার মৃত আশরাফ আলীর ছেলে আব্বাস উদ্দিন (৫৫), তার ছেলে ইমন (২৫), ছোট ছেলে রাব্বি (২০), একই এলাকার আবুল গণি তালুকদারের ছেলে মো. খলিলুর রহমান (২৫), মুসলিমপাড়া কুসুমবাগ এলাকার মৃত গিয়াসউদ্দিনের মেয়ে সুমনা আক্তার (৩৫), একই এলাকার তোতা খানের ছেলে ইমরান (১৬), আবুল হোসেনের ছেলে রাজিব (২৫), ঢাকা মতিঝিলের মজিবুর রহমানের স্ত্রী আসমা আক্তার (২৫), একই এলাকার হাজী মহসীন (৭০)। পরে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সুমনা বেগম(২৮) ও নিহত সুমনা বেগমের শিশু সন্তান খাদিজা আক্তার (৪) মারা গেছেন ।
দূর্ঘটনায় গুরুতর আহতরা হলেন- রফিকুল ইসলাম (৫৫), আবুল হোসেন (৫০), গাড়ি চালক নাদিম মাহমুদ (৩৬) গুরুতর আহত হন। তাদের আশংকাজনক অবস্থায় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। দূর্ঘটনার খবর পেয়ে গোপলার বাজার তদন্তকেন্দ্রের পুলিশ, শেরপুর হাইওয়ে থানার পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কয়েকটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশগুলো উদ্ধার করে। পরে নিহতদের লাশ শেরপুর হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। বিকেলে নিহতদের আত্মীয়স্বজন শেরপুর হাইওয়ে থানাতে উপস্থিত হয়ে লাশ সনাক্ত করেন।
কান্দিগাঁও জামে মসজিদের মুয়াজ্জিম আমীর আলী জানান- তিনি নামাজ পড়ে হাটাহাটি করছিলেন, এ সময় হঠাৎ বিকট শব্দ শুনে দৌড়ে এসে দেখেন একটি মাইক্রোবাস গাছের সাথে ধাক্কা লেগে মর্মান্তিক দূর্ঘটনা ঘটেছে। কয়েকটি লাশ মাটিতে পড়ে আছে, ভিতরেও কয়েকজন লোক ছটপট করছিল।
শেরপুর হাইওয়ে থানার ওসি এরশাদুল হক ভূইয়া জানান, নারায়গঞ্জ থেকে ১৩ জন যাত্রী সুনামগঞ্জে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে কান্দিগাঁও গ্রামে দুর্ঘটনাটি ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌছে হতাহতদের উদ্ধার করে, পরে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। তিনি বলেন ঘটনাস্থলে ৮জন মারা যায়। পরবর্তীতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরো ২জন মারা যায়।
হবিগঞ্জ ফায়ার স্টেশনের ডিউটি অফিসার আইয়ুব বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে নিহত ও আহতদের উদ্ধার করেছি।
নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বজিত কুমার পাল জানান, মাইক্রোবাসটি নিয়ন্ত্রন হারিয়ে অজ্ঞাতনামা ১জন মহিলা ও ৭জন পুরুষ ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছেন। পরবর্তীতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরো ২জন মারা যায়। হতাহতদের প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগীতার আশ্বাসও দেন তিনি।