স্বপ্নের দেশে গিয়ে মৃত্যু, সিলেটের ফয়ছলের কফিন ঘিরে স্বজনদের আহাজারি
প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ মার্চ ২০২০, ১২:০৭ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
জীবনের সফলতা পূর্ণ করার স্বপ্ন নিয়ে গ্রিসে থিতু হতে চেয়েছিলেন এনামুল এহসান জায়গীরদার ফয়সল (৩০)। যাত্রাপথে গ্রিসে বরফের পাহাড়ে প্রাণ প্রদীপ নিভে যাওয়া ভাগ্যহত সেই ফয়ছল ফিরলেন কফিন বন্দি হয়ে।
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর মারা যাওয়ার ২৪ দিন এবং লাশ উদ্ধারের ১৯ দিন পর ফয়ছলের লাশ দেশে আসে। রোববার বিকাল ৫টার দিকে একটি ফ্লাইটে লাশ শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছলে স্বজনরা লাশ গ্রহণ করেন। অ্যাম্বুলেন্সযোগে রাত দেড়টার দিকে বাড়িতে পৌঁছায় লাশের কফিন।
এ সময় কফিন ঘিরে কান্নায় ভেঙে পড়েন ফয়ছলের মা-বাবাসহ স্বজনরা। তাদের আহাজারিতে সেখানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার বোয়ালজুড় ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের মহুদ আহমদ জায়গীরদার ও খেলা বেগম চৌধুরী দম্পতির ছেলে ফয়ছল।
তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে ফয়ছল দ্বিতীয়। সোমবার বেলা ২টায় বোয়ালজুড় বাজার ঈদগাহ মাঠে জানাজার নামাজে কয়েক সহস্রাধিক মানুষ অংশ নেন। পরে স্বজনদের চোখের জলে বুক ভাসিয়ে লাশ পারিবারিক করবস্থানে সমাহিত করা হয়।
এর আগে শেষবারের মতো একনজর লাশ দেখতে আগে থেকেই ঈদগাহ মাঠে লোকজন জড়ো হতে থাকেন। ফয়ছলের লাশ দেশে আনার বিষয়ে মানবিক আবেদনে সাড়া দিয়ে সহযোগিতা করায় জানাজার পূর্বমুহূর্তে রাজাপুর গ্রামের শফিকুর রহমান শফিক ও ফয়ছলের পরিবারের সদস্যরা দূতাবাস কর্মকর্তাগণ ও স্থানীয় সাংবাদিকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।
এ সময় বিদেশ যাত্রায় সবাইকে সতর্কতা অবলম্বন করার জন্য বোয়ালজুড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনহার মিয়া সবার প্রতি আহ্বান জানান।
গ্রিসে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. জসিম উদ্দিন গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, বাংলাদেশ দূতাবাসের মানবিক আবেদনে সাড়া দিয়ে গ্রিস প্রশাসন অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করে। প্রযুক্তির সহযোগিতায় ফয়ছলের লাশ পড়ে থাকা স্থানে তোলা ছবির সূত্র ধরে গ্রিসের আলেকজান্ডার পলি সীমান্তে পাহাড়ি এলাকাটি চিহ্নিত করা হয়।
১২ ফেব্রুয়ারি বরফের নিচ থেকে হেলিকপ্টার দিয়ে লাশ উদ্ধার করে আলেকজান্ডার পলি নামক হসপিটালে হস্তান্তর করা হয়।
ফয়ছলের ছোট ভাই রাজিমুল এহসান জায়গীরদার রুজেল্ল বলেন, ৯ ফেব্রুয়ারি আমার ভাইয়ের সহযাত্রীরা মৃত্যুর সংবাদটি জানিয়ে মৃত দেহের ছবিগুলো পাঠান। কিন্তু ছবি দেখে কেউই ওই স্থানটি চিহ্নিত করতে না পারায় দূতাবাসের সহযোগিতা কামনা করা হয়।
৪ ফেব্রুয়ারি দালালের মাধ্যমে তুর্কী থেকে যাত্রা করে ৭ ফেব্রুয়ারি গ্রিসের সীমানায় পৌঁছে গ্রিস সময় বেলা ২টার দিকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি।
৫-৬ বছর পূর্বে ভিসা নিয়ে ওমান যান তিনি। মাস ছয়েক পূর্বে তিনি ওমান থেকে ইরাক হয়ে তুর্কী যান। সর্বশেষ ৪ ফেব্রুয়ারি বাড়িতে ফোন করে তার জন্য দোয়া করার কথা বললেও দালালের মাধ্যমে গ্রিসে যাওয়ার বিষয়টি জানাননি।