সিলেটে নিখোঁজ আতঙ্কে অভিভাবকরা!
প্রকাশিত হয়েছে : ০২ মার্চ ২০২০, ২:২৭ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
সিলেট নগরীতে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে নিখোঁজের ঘটনা। সবচেয়ে বেশি নিখোঁজ হচ্ছে উঠতি বয়সী স্কুল ছাত্র-ছাত্রীরা। এতে উদ্যেগ উৎকণ্ঠায় থাকতে হচ্ছে অভিভাবকদের। সিলেটে নিখোঁজের তালিকা বাড়লেও উদ্ধারও করা হচ্ছে প্রায় সমান তালে। সর্বশেষ গত ১৯ ফেব্রুয়ারি রিপা ( ছদ্মনাম) নামের এক কিশোরী নিখোঁজ হয়।
সিলেট নগরীতে গত ৬ মাসে ৬ জন স্কুল ছাত্রছাত্রী নিখোঁজ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এরমধ্যে ৬ জনকেই পাওয়া গেছে। এছাড়া আরও ৩ জন বয়স্ক মানুষ নিখোঁজও হয়েছেন। এদের মধ্যে দুইজন কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন বলে সূত্র জানিয়েছে। তবে তাদের পাওয়া গেছে কিনা জানা যায়নি।
নগরীতে হঠাৎ স্কুল ছাত্র-ছাত্রী নিখোঁজের ঘটনা বাড়ায় অভিভাবকদের মাঝে অনেকটা আতঙ্ক বিরাজ করেছে। তবে এই ৬টি নিখোঁজের ঘটনায় দেখা গেছে ১২ থেকে ১৬ বছর বয়সীরা সবাই। তাদের সবাই বিভিন্ন স্কুলে লেখাপড়া করত।
উদ্ধার হওয়া কয়জন শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে জানা গেছে, পরিবারের কারো না কারো উপর রাগ করে বাসা থকে চলে গিয়েছিলো তারা। কেউ পরীক্ষায় খারাপ করেছিল, আবার কেউ মায়ের বকুনি খেয়ে, কিছু না বুঝেই বাসা থেকে অজানা গন্তব্যে পাড়ী দিয়েছিল।
দেখা গেছে, পরীক্ষার ফলাফল খারাপ হওয়ার পর এ ধরনের ঘটনা বেশি ঘটে। আবার অনেক সময় পরীক্ষার ফলাফল ভালো হবে না এ শঙ্কায় অভিভাবকদের বকুনি খেতে হবে এই ভয়ে অনেকে বাসা থেকে বের হয়ে চলে যায়।
গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর শাহপরানের চামেলীভাগ থেকে রিপা(ছদ্দনাম)নামের এক স্কুল ছাত্রী নিখোঁজ হয়। ১৪ বছর বয়সী এই কিশোরী স্থানীয় স্কুলের ৮ম শ্রেণির ছাত্রী ছিল। পরীক্ষার রুটিন আনার কথা বলে সে বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয়েছিল। কয়দিন পর তাকে খুঁজে পাওয়া যায়।
ঠিক পরের দিন ২৬ সেপ্টেম্বর নগরীর টিলাগড়ের ভাটাটিকর থেকে ৬ষ্ট শ্রেণির ছাত্রী আয়েশা (ছদ্মনাম) নিখোঁজ হয়েছিল। এ ঘটনা সিলেটের মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় শুরু হয়েছিল। মসজিদে মসজিদে এই শিশুটি উদ্ধারের জন্য সবার সহযোগিতা ও দোয়া কামনা করা হয়। দুই সপ্তাহ পরে এই মেয়েটিকে ঢাকা থেকে পাওয়া যায়।
জানা গেছে, মায়ের বকুনি খেয়ে মেয়েটি বাসা থেকে বের হয়ে ঢাকাগামী একটি বাসে উঠে চলে যায়। ঢাকার এক মহিলা তাকে পেয়ে বাসায় নিয়ে যান। কিন্তু সে পুরো ঠিকানা বলতে না পারায় ওই নারী বাসায় ফেরত পাঠাতে পারেননি। পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সংবাদ পেয়ে তিনি শিশু মেয়েটির পরিবারের সাথে যোগাযোগ করেন। খবর পেয়ে তাকে ঢাকা থেকে উদ্ধার করা হয়।
এসএসসি পরীক্ষার প্রাক নির্বাচনী পরীক্ষায় খারাপ করেছিল দ্বিপ (ছদ্মনাম)। এতে তার বাবা রাগ করেছিলেন ছেলেটির উপর। রাগের প্রতিশোধ নিতে গত বছরের ৬ নভেম্বর বাসা থেকে বের হয়ে অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ী দিয়েছিল ঐ দিন রাতে। সে নগরীর পাইলট স্কুলের ছাত্র ছিল। ৭৯ দিন পর নরসিংদী জেলা থেকে খুঁজে পাওয়া গিয়েছিলো তাকে।
নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলায় সে একটি দোকানে চাকরী নেয়। পুলিশ খবর পেয়ে সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারের পর সে জানায়, পরিবারের উপর রাগ করে বাসা থেকে সে চলে গিয়েছিল।
১২ ফেব্রুয়ারি সিলেট নগরীর পাঠানটুলা দ্বি-পাক্ষিক উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র মিনহাজ (ছদ্মনাম) নিখোঁজ হয়। সে পরিবারের বকুনি খেয়ে তার এক বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চলে যায়। তার ওই বন্ধুর পরিবার সিলেট নগরীতে বাড়া বাসায় থাকতো। তাদের গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে উদ্ধার হওয়া ছেলেটির অভিভাবক জানিয়েছেন, মিনহাজের (ছদ্মনাম) কাছে কিছু টাকা পয়সা ছিল। তার ওই বন্ধু টাকার লোভে হয়তো তাকে নিয়ে বাসা থেকে বের হয়। পরে বিভিন্ন জায়গার সিসি ফুটেজ দেখে ময়মনসিংহ থেকে তাদের উদ্ধার করা হয়েছিলো।
দক্ষিণ সুরমার ঝালোপাড়া স্কুল রোড থেকে ১২ বছরের এক কিশোরী নিখোঁজ হয়েছিল গত ১৯ ফেব্রুয়ারি। তাকেও পাওয়া গেছে আউশকান্দি থেকে।
যাদের ঘরে উঠতি বয়সের তরুণ তরুণীরা রয়েছেন তাদের অভিভাবকদের সচেতন হয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন এক অভিভাবক। শাকিল জামান নামের এক অভিভাবক ফেসবুকে যা লিখেছেন তা পাঠকের জন্য তুলে ধরা হল:
একটু খেয়াল রাখবেন শাসন যেনো মানসিক শোষণের পর্যায়ে না যায়। এই বয়সে অপোজিট এট্রাকশন খুব স্বাভাবিক জিনিস। এটা কোনো ভয়াবহ অপরাধ না। যাতে কোনো বিপদজনক অবস্থায় না যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখুন। ভুল করে ফেললেও বুঝিয়ে বলুন। বন্ধুর মতো মিশুন।
পরিবারে অতিরিক্ত শাসনের ফলে মেয়েদের মনে হতে থাকে পরিবারে কেউ তাকে পছন্দ করে না। বাইরের দুনিয়াটাকে কিংবা ঐ ভুলটাকেই শুদ্ধ মনে করে আকড়ে ধরে থাকে। ফলে প্রতিনিয়ত ভুলের দিকে ধাবিত হয়।
একসময় পরিবার থেকে চলাফেরা সব বন্ধ করে দেয়া হয়। তখন অনেকেই জীবনকে তুচ্ছ মনে করে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। তখন পরিবারের বোধোদয় হয় কিন্তু করার কিছু থাকে না।
মনে রাখবেন, শাসন করে বাইরের ভালোবাসা থেকে দূরে রাখতে পারবেন না। ঘরের মধ্যে, পরিবারের মধ্যে তাকে ভালোবাসা দিন, এটা তাকে বুঝান যে সে পরিবারে কতোটা গুরুত্বপূর্ণ। পরিবারের মায়া মমতাই পারবে বাইরের মায়া থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে।
সাবধান হোন আগে, ঘটনা ঘটার পরে আফসোস করে লাভ হবে না।