সৌদি আরব প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা : সিলেটে আটকা পড়লেন হাজারো ওমরাহ যাত্রী!
প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ৩:০০ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
চলছে রজব মাস। সামনে শাবান ও রমজান। আরবি এই তিন মাসে সিলেট থেকে বিপুলসংখ্যক ওমরাহ হজযাত্রী সৌদি আরবে যান। হাজারো যাত্রী আগামী এক মাসে পবিত্র ওমরাহ পালনে সৌদি আরবে যাওয়ার প্রস্তুতি প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছিলেন।
এই অবস্থায় সৌদি কর্তৃপক্ষ ওমরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। মক্কা ও মদিনায় ওমরাহ হাজীদের প্রবেশ স্থগিত করেছে এতে করে সব প্রস্তুতি চূড়ান্ত করার পর সিলেটের প্রায় দেড় হাজার ওমরাহ যাত্রী বিপাকে পড়েছেন। ওমরাহ পালনে তাদের যাওয়া হচ্ছে না। লোকসানের মুখেও পড়তে হচ্ছে তাদের।
হজ এজেন্সি এসোসিয়েশন-হাব নেতারা জানিয়েছেন- সৌদিতে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে- সৌদি আরব সরকারের এমন সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে যেসব দেশে করোনা আক্রান্ত নেই সেসব দেশের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত শিথিল করা প্রয়োজন ছিলো। এতে করে বাংলাদেশ তাৎক্ষণিক কড়াকড়ি আরোপ থেকে রেহাই পেতো। সিলেট থেকে প্রতি মাসে হাজারো মানুষ পবিত্র ওমরাহ পালনের জন্য সৌদি আরব যান। সম্প্রতি সময়ে বিমানের টিকিট নিয়ে কড়াকড়ি থাকায় ওমরাহ যাত্রীদের জন্য দুই মাস আগে থেকেই টিকিট কিনে রাখতে হয় সংশ্লিষ্টদের।
এজেন্সি মালিকরা জানিয়েছেন- আরবি মাসের হিসেবে রজব মাস থেকে সবচেয়ে বেশি মানুষ ওমরা পালনে সৌদি আরবে যাওয়া শুরু করেন। রমজান মাসে যান সবচেয়ে বেশি। যারা রমজান মাসে ওমরাহ যেতে চাচ্ছেন তারা এখন থেকেই প্রস্তুতি শুরু করতে যাচ্ছে। কিন্তু এই অবস্থায় সৌদি কর্তৃপক্ষ হঠাৎ করে ওমরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। সিলেটের লতিফ ট্রাভেল, যাত্রী ট্রাভেলস, আল মনসুর ট্রাভেলস, শিপার এয়ার সার্ভিস সহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান প্রতি মাসে বিপুল সংখ্যক ওমরাহ যাত্রীকে সৌদি আরবে পাঠিয়ে থাকেন। যাত্রী ট্রাভেলস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে- ইতিমধ্যে তাদের ট্রাভেলসের অধিনে ৬০ জন যাত্রীর ভিসা চূড়ান্ত করা হয়েছিলো। তারা ভিসা চূড়ান্ত করার পাশাপাশি মক্কা ও মদিনায় হোটেল বুকিংয়ের কাজ সমাপ্ত করেন। পাশাপাশি এয়ার টিকিটও চূড়ান্ত করে ফেলেন। আগামী ১০ই মার্চ তাদের একটি বহর ওমরাহ পালনের জন্য সৌদি যাওয়ার কথা ছিলো।
যাত্রীক ট্রাভেলসের স্বত্বাধিকারী আলহাজ আব্দুল জলিল জানিয়েছেন- করোনা ভাইরাসে বাংলাদেশ আক্রান্ত নয়। সুতরাং বাংলাদেশ থেকে কোথাও ভাইরাস ছড়ানোর সম্ভাবনা কম। এ কারণে বাংলাদেশের জন্য সৌদি আরবের এই সিদ্ধান্ত শিথিল করা প্রয়োজন ছিলো। তিনি জানান- হঠাৎ করে ওমরাহ হজ স্থগিত হওয়ার কারনে তার প্রতিষ্ঠানই অর্ধকোটি টাকা লোকসানের মুখে পড়েছে। যাত্রী ট্রাভেলস’র মতো খন্দকার শিপার এয়ার সার্ভিসও পড়েছে লোকসানের মুখে। তার প্রতিষ্ঠানের অর্ধশতাধিক যাত্রী ওমরাহ যাওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন। খন্দকার শিপার এয়ারওয়েজের স্বত্বাধিকারী ও এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক খন্দকার শিপার আহমদ জানিয়েছেন- ওমরাহ বন্ধ হওয়া একটি বড় ধাক্কা। এই ধাক্কা সামাল দেয়া কষ্ট হবে। এরপরও এজেন্সি মালিকরা পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছি।
এমিরাটস এয়ারওয়েজ টিকিটের টাকা রিটার্ন দেয়ার সিদ্ধান্ত দিয়েছে। তবে- বাংলাদেশ বিমান এখনো কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। বিমান কর্তৃপক্ষ মানবিক সিদ্ধান্ত না দিলে ওমরাহ যাত্রী ও হজ এজেন্সির মালিকরা লোকসানের মুখে পড়বেন। সিলেটে লতিফ ট্রাভেলস ও হজ এজেন্সির শতাধিক যাত্রী আটকা পড়েছেন। আগামী ২৯শে ফেব্রুয়ারি, ৩রা মার্চ ও ৭ই মার্চ ট্রাভেলসের নির্ধারিত ফ্লাইট ছিলো। কিন্তু হঠাৎ করে ওমরাহ বন্ধ হয়ে পড়ায় তাদের তিনটি ফ্লাইটই বাতিল করতে হচ্ছে। সিলেটের আল মনসুর ট্রাভেলসের ৬ জন ওমরাহ হজ যাত্রীর ফ্লাইট ছিলো বৃহস্পতিবার। এ কারণে সকালের ফ্লাইটের ওই যাত্রীরা ঢাকায় চলে যান। সৌদি আরবে নিষেজ্ঞার কারণে তারা ঢাকা থেকে সিলেটে ফিরে আসেন। আগামী ২রা মার্চ আল মনসুর ট্রাভেলস থেকে ৪৫ জন ওমরা হজ যাত্রীর সৌদি যাওয়ার কথা ছিলো। এখন তাদের ফ্লাইট বাতিল করা হচ্ছে।
আল মনসুর ট্রাভেলস এর স্বত্বাধিকারী মনসুর আলী খান জানিয়েছেন- আমাদের নিয়মিত যাত্রী ওমরাহ যাচ্ছেন। রমজান পর্যন্ত প্রচুর ওমরাহ যাত্রীর সৌদি আরবে যাওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু সৌদি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। ওমরাহ যাত্রীদের অপেক্ষা করতে হবে। তিনি বলেন- হঠাৎ করে ওমরাহ বন্ধ হওয়ার কারণে আমরা ক্ষতির মুখে পড়েছি।
এদিকে- হজ এজেন্সি এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-হাব এর সিলেট অঞ্চলের চেয়ারম্যান মোতাহের হোসেন বাবুল জানিয়েছেন- হঠাৎ সিদ্ধান্তের কারণে হাজারো ওমরাহ যাত্রীর যাত্রা স্থগিত করা হয়েছে। সিলেটের ব্যবসায়ীরা যাত্রীদের জন্য ভিসা ফি, হোটেল বুকিং, এয়ার টিকিট চূড়ান্ত করে ফেলেছিলেন। ওমরাহ স্থগিত হলেও টাকা পাওয়া কষ্টকর হবে। আমরা চেষ্টা করছি যাতে ওমরাহ যাত্রী ও এজেন্সির মালিকরা ক্ষতির মুখোমুখি না হন। এ নিয়ে এয়ারলাইসেন্স কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলছে। পাশাপাশি সৌদি আরবেও এ নিয়ে আলোচনা চলছে। ব্যাংকিং চ্যানেলে যে টাকা জমা দেয়া হয়েছে সেটি যাতে ফেরত পাওয়া যায় সে চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।