কোম্পানীগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে ঢুকছে অবৈধ ভারতীয় পণ্য
প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ৫:১২ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
ভারত সীমান্তবর্তী কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সীমান্ত এলাকা দিয়ে অবাধে ঢুকছে ভারতীয় পণ্য। অবৈধ পন্থায় চোরাপথে প্রবেশের পর তা ছড়িয়ে পড়ছে সিলেটসহ পুরো দেশে। পুলিশ, র্যাব, মাদকবিরোধী সেলের হাতে কিছুসংখ্যক চোরাকারবারি ও অবৈধ মালামাল ধরা পড়লেও, সিংহভাগই পাচার হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার উত্তর রণিখাই ইউনিয়নের বরমসিদ্ধিপুর গ্রামের পাশে ভারত সীমান্তের ভেতরে একটি ছোটখাটো হাট রয়েছে। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের চেরাপুঞ্জির পাদদেশে অবস্থিত এই হাটের নাম বড়পুঞ্জি বাজার। এটি কোনো বৈধ সীমান্ত হাট নয়। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত পিলার সংলগ্ন বড়পুঞ্জি বাজারের বিক্রেতারা ভারতীয় হলেও, ক্রেতারা বাংলাদেশি। ভারত সীমান্তের ভেতরে বাজারের আশেপাশে কোনো বাড়িঘর নেই। বাজারের খাসিয়া ব্যবসায়ীরা আসেন ৫ মাইল দূরে অবস্থিত তিশান গ্রাম থেকে। দিনভর বেচাকেনা করে বিকেল ৪টায় ফিরে যান নিজ গ্রামে। একদিন পরপর বসে এই বাজার। সকাল থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত অবৈধভাবে সীমান্ত পেরিয়ে বড়পুঞ্জি বাজারে যাতায়াত করেন বাংলাদেশিরা। বাজারটি ছোটখাটো হলেও প্রসাধনীসামগ্রী থেকে শুরু করে পান সুপারি, জুতা, শীতের পোশাক এমনকি নেশাজাতীয় সব ধরণের দ্রব্যও এখানে পাওয়া যায়। বাজারটি নিলাম করা হয় প্রতি মাসে। বাংলাদেশিরাই এই নিলাম ডাকেন। কোনো পণ্য বাজার থেকে কিনে বাইরে নিয়ে আসতে হলে বাজারের ইজারদারকে ‘ট্যাক্স’ দিয়ে আসতে হয়। সেটা হোক পান সুপারি, প্রসাধনী কিংবা মাদকদ্রব্য। মাদক সেবন করা যায় বাজারে বসেই। মাদকসেবীদের সুবিধার জন্য ছোট ছোট বেশ কয়েকটি খুপড়ি ঘর রয়েছে এ বাজারে। ঘরের ভেতরে বসে কিংবা বাজারের পাশের ঘন জঙ্গলে বসে মদ, ফেন্সিডিল সেবন করেন ক্রেতারা। আছে মদের ফেরিওয়ালাও, এদের কাঁধে ঝুলানো থাকে কাপড়ের ব্যাগ। এসব ব্যাগ মদের বোতলে ভর্তি থাকে। ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী মদ সাপ্লাই করেন এসব ফেরিওয়ালা। এরা সকলেই বাংলাদেশি।
শুধু বড়পুঞ্জি সীমান্ত নয়। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার উত্তর রণিখাই ইউনিয়নের পুরোটাই সীমান্তবর্তী হওয়ায় এলাকাটি ব্যবহৃত হচ্ছে মাদক ও অবৈধ ভারতীয় পণ্য চোরাচালানের সেইফ রুট হিসেবে। ভারত সীমান্ত দিয়ে নিয়মিত বাংলাদেশে প্রবেশ করছে অস্ত্র, মাদক, স্বর্ণ, প্রসাধনী সামগ্রী, গরু, চোরাই মোটরসাইকেল, বাই সাইকেলসহ বিভিন্ন ধরণের গাড়ির যন্ত্রাংশ। কোম্পানীগঞ্জে প্রবেশের পর সীমান্ত ঘেঁষে গোয়াইনঘাট হয়ে বিভিন্ন স্থানে পাচার হচ্ছে এসব অবৈধ পণ্য। অবৈধভাবে পণ্য আসার ফলে সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব। অবৈধ মালামালে সয়লাব হচ্ছে বাংলাদেশের বাজার।
আশার বিষয় হলো, কোম্পানীগঞ্জের সীমান্ত এলাকায় নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে পুলিশ, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কথা হয় কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি সজল কুমার কানুর সাথে। তিনি তাদের তৎপরতার প্রমাণ দিতে জানালেন, রোববার ভোররাতেও তারা কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সীমান্ত এলাকায় মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা করেছেন। তার নেতৃত্বে পরিচালিত ওই অভিযানে ছিলেন এসআই রাজীব চৌধুরী, এসআই মিজানুর রহমান, এএসআই এনামুল সহ পুলিশ সদস্যরা। ওসি জানান, অভিযানকালে রোববার ভোর সাড়ে ৪টায় উত্তর রণিখাই ইউনিয়নের বাটাডোর বিল সীমান্তে আটক করা হয় গোয়াইনঘাটের এক চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীকে। আটককৃত ওই মাদক ব্যবসায়ীর নাম বিল্লাল আহমদ। তিনি গোয়াইনঘাট উপজেলারলামনী গ্রামের তৈয়বুর রহমানের ছেলে। মাদক ব্যবসায়ী বিল্লালের কাছ থেকে ৫৫৬ বোতল ফেন্সিডিল উদ্ধার করে কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশ। আটকের পর বিল্লালের বিরুদ্ধে কোম্পানীগঞ্জ থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা (নং-১৭) দায়ের করে রোববারই আদালতে প্রেরণ করা হয়।
কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি আরো বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে আমরা জিরো টলারেন্সে রয়েছি। নতুন বছরে বেশ কয়েকটি সফল অপারেশন আমরা সম্পন্ন করেছি। অভিযানকালে বিপুল পরিমাণে ভারতীয় মদ, ভারতীয় গরু, গাঁজা, ইয়াবা বড়ি, ফেন্সিডিল ও দুটি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি। কোম্পানীগঞ্জ থানায় দায়িত্ব পাবার পর আমি মাদক, জুয়াকে প্রায় শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। কোম্পানীগঞ্জে এখন আর মাদক সহজলভ্য নয়। ওসি বলেন, সীমান্তে নজরদারির দায়িত্ব তো আমাদের কাছে নেই। সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে যদি কিছু প্রবেশ করে আমরা সেগুলো ছড়িয়ে পড়ার আগেই আমরা আটকের চেষ্টা করি।
সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন জানান, মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে। মাদকের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকার জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছে। সরকারি নির্দেশনায় আমরা পুলিশ বাহিনী সাঁড়াশী অভিযান করছি। অভিভাবকদের দায়িত্ব, তাদের সন্তানদের মাদক থেকে দূরে রাখা। বিশেষ করে স্কুল ও কলেজ পড়–য়া শিক্ষার্থী যারা সন্ধ্যার পর বাসায় ফিরে, তাদের মায়েরা যেনো খেয়াল করেন। ছেলের মুখে যদি কোনো ধরণের মাদকের গন্ধ থাকে তাহলে মা সেটা বুঝতে পারবেন। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।