আজ সর্বাধিনায়ক’র মৃত্যুবার্ষিকী: ওসমানী এক প্রিয় নাম, একটি ইতিহাস
প্রকাশিত হয়েছে : ২:৪৯:১৩,অপরাহ্ন ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০
নিজস্ব প্রতিবেদক :
বাংলাদেশের মানুষের কাছে জেনারেল এম এ জি ওসমানী এক প্রিয় নাম, একটি ইতিহাস। মুক্তিসংগ্রামের জীবন-মরণের উত্তাল তরঙ্গ বিক্ষুব্ধ দিনগুলোতে মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক ওসমানী ছিলেন বাংলার জনগণের কাছে কিংবদন্তি মহানায়কের মতো। রণ কুশলী কর্নেলর খ্যাতি ছিল তখন সারা জাতির কাছে আশার আলোকবর্তিকা। মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এম এ জি ওসমানীর ৩৬তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ রবিবার। তার পুরো নাম মহম্মদ আতাউল গণি ওসমানী। তার বাবার নাম খান বাহাদুর মফিজুর রহমান, মাতা জোবেদা খাতুন। তার পিতৃপুরুষের বাড়ি সিলেট জেলার ওসমানীনগর উপজেলার দয়ামীরে।
১৯১৮ সালের পয়লা সেপ্টেম্বর সুনামগঞ্জ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন এম এ ওসমানী। ১৯৩৯ সালে তিনি রয়াল আর্মড ফোর্সে ক্যাডেট হিসেবে যোগ দেন। প্রশিক্ষণ শেষে তিনি ১৯৪০ সালে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে কমিশনড অফিসার হিসেবে যোগ দেন । ১৯৪৭ সালের ৭ই অক্টোবর ওসমানী পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৫৬ সালে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কর্নেল পদমর্যাদা লাভ করেন এবং সেনাবাহিনীর হেডকোয়ার্টারের জেনারেল স্টাফ এন্ড মিলিটারি অপারেশনের ডেপুটি ডিরেক্টরের দায়িত্ব লাভ করেন। ১৯৬৭ সালে অবসরগ্রহণের পূর্ব পর্যন্ত এই দায়িত্বে ছিলেন।
১৯৭১ সালের ২৬শে ডিসেম্বর তাকে বাংলাদেশ আর্মড ফোর্সের জেনারেল পদে নিয়োগ দেয়া হয়। ১৯৭২ সালে দায়িত্ব থেকে অবসর নেন এবং মন্ত্রীসভায় যোগ দেন অভ্যন্তরীণ নৌ যোগাযোগ, জাহাজ ও বিমান মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে। ১৯৭৩ সালের জাতীয় নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ডাক, তার, টেলিযোগাযোগ, অভ্যন্তরীণ নৌ যোগাযোগ, জাহাজ ও বিমান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেন। ১৯৭৪ সালের মে মাসে মন্ত্রীসভা থেকে পদত্যাগ করেন। ১৯৭৫ সালে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে একদলীয় বাকশাল ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হলে তিনি সংসদ সদস্যপদ এবং আওয়ামী লীগের সদস্যপদ ত্যাগ করেন। সে বছর ২৯শে আগস্ট খন্দকার মোশতাক আহমেদের প্রতিরক্ষা বিষয়ক উপদেষ্টা পদে নিয়োগ পান, তবে ৩রা নভেম্বর জেলহত্যার ঘটনার পর তিনি সে পদ থেকেও পদত্যাগ করেন।
দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর এই মহান নেতা ১৯৮৪ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ৬৬ বৎসর বয়সে লন্ডন হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। বঙ্গবীর ওসমানী জানতেন, তাঁর মৃত্যুর পর একজন জাতীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে তাঁকে সমাহিত করা হবে রাজধানী ঢাকায়। কিন্তু তাঁর একান্ত ইচ্ছা ছিল মৃত্যুর পর তিনি সমাহিত হবেন মায়ের কবরের পাশেই। তাঁর এ অন্তিম আগ্রহের কথা তিনি স্বজনদের কাছে ব্যক্ত করেন মৃত্যুর আগেই। তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী হজরত শাহজালাল (র.) কবরস্থানে তাঁর মায়ের কবরের পাশে ১৯৮৪ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি তাঁকে সমাহিত করা হয়।
বাংলাদেশের মানুষ শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে চিরদিন মনে রাখবে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক বঙ্গবীর জেনারেল ওসমানীকে। মৃত্যু তাঁর নশ্বর অস্তিত্বকে বিলীন করলেও জাতির ইতিহাসে অনির্বাণ হয়ে থাকবে তাঁর সততা, নীতি নিষ্ঠা, কর্তব্যপরায়ণতা, সময়ানুবর্তিতা, অসীম ত্যাগ-তিতিক্ষা, সুদীর্ঘ সংগ্রাম ও গণতন্ত্রের প্রতি উৎসর্গীকৃত তাঁর মহৎ জীবন ও অনুকরণীয় জীবনাদর্শ।
এদিকে বঙ্গবীর জেনারেল এমএজি ওসমানীর ৩৬তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। বঙ্গবীর ওসমানী স্মৃতি পরিষদের উদ্যোগে আজ রোববার বিকাল ৩টায় রাজধানীর আব্দুল গণি রোডের ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এই কর্মসূচি পালন করা হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। বিশেষ অতিথি থাকবেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী। বঙ্গবীর ওসমানী স্মৃতি পরিষদের প্রেসিডেন্ট সৈয়দা মাসুদা খাজার সভাপতিত্বে এতে আলোচক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল কে. এম সফিউল্লাহ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা, জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার ডা. আব্দুল মালিক (অব.), বাংলাদেশের সংবিধান প্রণেতা কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার এম. আমির-উল ইসলাম, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সি এম শফি সামি, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ইনাম আহমেদ চৌধুরী প্রমুখ