বড়লেখায় নোটিশ ছাড়া স্থাপনা উচ্ছেদ: ক্ষতিগ্রস্থদের বুক ফাটা আর্তনাদ
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ৫:০০ অপরাহ্ণ
স্বপন দেব, মৌলভীবাজার :
মৌলভীবাজারের বড়লেখা সদর ইউনিয়নের সোনাতোলা গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে চলা ছোট্ট ধামাই নদী। এ নদীর তীরে ছিল মরতুজ আলীর ছোট মুদি দোকান। গত বৃহস্পতিবার উপজেলা প্রশাসন উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে তার দোকানের একটি অংশ ভেঙে ফেলা হয়েছে। প্রশাসনের কাছে আকুতি-মিনতি করেও দোকানটি রক্ষা করতে পারেননি মরতুজ আলী।
তাই মরতুজ আলী কেঁদে কেঁদে বললেন, ‘তারা (প্রশাসন) আমার দোকানে এসে দীর্ঘক্ষণ বসলেন। তারপর কোনো কিছু বোঝে ওঠার আগেই আমার দোকান ভাঙা শুরু করলেন। দোকানটি আমার নিজের জায়গায় করেছি। তারা আগে কোনো নোটিশও দেননি। ভাঙার সময় মালামাল সরানোর সুযোগটুকু দেয়া হয়নি। কথা বলায় গাড়ি চাপা দিয়ে মারার ভয় দেখানো হয়। এতে আমার প্রায় ৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।’
অভিযানের সময় মরতুজ আলীর মতো ফয়জুল হক, বদরুল হোসেন ও আব্দুল মালিক এবং শেলি বেগমের বিভিন্ন স্থাপনা ভেঙে ফেলা হয়েছে। তাদের কারো দোকানঘর, কারো বাড়ি আবার কারো সীমানা প্রাচীর ভেঙে দেয়া হয়েছে। কথা হয়, এলাকার শেলি বেগমের সাথে। অভিযানে এ নারীর বাড়ির সীমানা প্রাচীর ভেঙে ফেলা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘সরকার কোনো ঘর-বাড়ি ভাঙলে আগে নোটিশ দেয়। কিন্তু কোনো নোটিশ না দিয়েই হঠাৎ করে আমার বাড়ির সীমানা প্রাচীর ভাঙা হয়েছে। এটা আমার জায়গায়, কাজপত্র সব আছে। আমার ক্রয় করা জায়গা থেকে ৩ ফুট ছেড়ে দেয়াল নির্মাণ করেছি। এরপরও কেনো আমার দেয়াল ভাঙা হল বুঝতে পারলাম না।’
এলাকার বাসিন্দা ফয়জুল হক, বদরুল হোসেন ও আব্দুল মালিক বলেন, ‘উচ্ছেদের আগে আমাদের জানানো হয়নি। আর আমরা আমাদের নিজেদের জায়গায় স্থাপনা করেছি। কিন্তু জোর করে প্রশাসন আমাদের ঘর-দোকানপাট ভেঙে দিয়েছি। আমরা এ ঘটনার সুবিচার চাই।’
গত বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ধামাই নদীর সদর ইউনিয়নের সোনাতুলা ব্রিজ এলাকা থেকে সুজানগর ইউনিয়নের সীমানা পর্যন্ত এই অভিযানে অর্ধশতাধিক স্থাপনা উচ্ছেদ করে উপজেলা প্রশাসন। এই ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসীর দাবি, উচ্ছেদ করা স্থাপনাগুলো তাদের অনেকের ব্যক্তিগত মালিকানাধীন জায়গার ওপর ছিল। হঠাৎ করে কোনো ধরনের নোটিশ ছাড়াই অভিযান চালিয়ে তাদের জায়গার স্থাপনাগুলো ভাঙা হয়েছে। তবে উপজেলা প্রশাসনের দাবি, নদী পাড়ের স্থাপনাগুলো সরকারি জায়গার ওপর অবৈধভাবে গড়ে তোলা হয়েছিল।
এদিকে বৃহস্পতিবার রাতেই নদী পাড়ের স্থাপনা উচ্ছেদের ঘটনায় এলাকার বিক্ষুব্ধ লোকজন নদী খনন কাজে ব্যবহৃত এক্সকাভেটর আটকে রাখেন। এ ঘটনার খবর পেয়ে শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ঘটনাস্থলে যান বড়লেখা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সোয়েব আহমদ ও ভাইস চেয়ারম্যান তাজ উদ্দিন। এই সময় তারা বিক্ষুব্ধ লোকজনের সাথে কথা বলে খননযন্ত্র চাবি সংশ্লিষ্ট কাজের ব্যবস্থাপকের কাছে বুঝিয়ে দিয়েছেন।
এই বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শামীম আল ইমরান বলেন, ‘অবৈধ স্থাপনা সরানোর জন্য ইউনিয়ন পরিষদ থেকে আগে বলা হয়। তারা সরাননি। রেকর্ডে রাস্তার জায়গায় যতটুকু পড়েছে ততটুকু ভাঙা হয়েছে। উচ্ছেদের সময় ব্যাক্তি মালিকানার জায়গার বিষয়ে কেউ কিছু বলেননি। পরে শোনেছি লোকজন দাবি করছেন মালিকানা জায়গা ভাঙা হয়েছে।’
এবিষয়ে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সোয়েব আহমদ বলেন, ‘কোনোধরনের নোটিশ ছাড়া এভাবে মানুষজনের বিভিন্ন স্থাপনা উচ্ছেদ করা ঠিক হয়নি। আমি পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেছি। তারাও বিষয়টি জানেনা। আর এখানে উচ্ছেদ অভিযানের কোনো দরকারই ছিল না। বিষয়টি দুঃখজনক।’