হবিগঞ্জে এডিপির প্রকল্প প্রণয়নে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ
প্রকাশিত হয়েছে : ১০:২৭:২১,অপরাহ্ন ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২০
সুরমা নিউজ:
সরকারের বিশাল আর্থিক বরাদ্ধে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি প্রকল্প প্রণয়নে হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলায় স্বজনপ্রীতি দলীয়করণ ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সরকার ঘোষিত নিয়ম নীতি না মেনে অতি গোপনে কোটি টাকার উন্নয়ন কর্মসূচি প্রণয়ন করা হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যানদের তালিকা প্রণয়নে গুরুত্ব সহকারে কোনো মতামত নেওয়া হয়নি।
মাধবপুর চুনারুঘাট আসনের সংসদ সদস্য, বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মাহবুব আলীরও কোনো ধরনের মতামত ও প্রকল্প নেওয়া হয়নি। এ নিয়ে উপজেলা পরিষদের সদস্যদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
মাধবপুর উপজেলার সুবিধাবঞ্চিত ৫টি চা বাগানের চা শ্রমিকদের উন্নয়নে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে কোনো অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়নি। চা শ্রমিক নেতারা পুনরায় তালিকা করার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন।
মাধবপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মজিব উদ্দিন তালুকদার ওয়াসিম জানান, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির কত টাকা বরাদ্দ তা আমাদের জানানো হয়নি। উপজেলা চেয়ারম্যান এককভাবে তালিকা প্রণয়ন করেছেন। উপজেলা পরিষদের সভায় বিস্তারিত প্রকাশ করার কথা থাকলেও বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির প্রকল্প প্রনয়নে গোপনীয়তা রক্ষা করা হয়। এ ছাড়া মাধবপুর উপজেলার ৫টি চা বাগানে সুবিধাবঞ্চিত চা শ্রমিক জনগোষ্ঠী রয়েছে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য প্রকল্প করার নির্দেশ থাকলেও চা শ্রমিকদের উন্নয়নে কোনো অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়নি। এটি রাজনৈতিক বিবেচনায় বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। এতে একটি বিশাল জনগোষ্ঠীর এডিপির সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
অপর একজন জনপ্রতিনিধি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, উপজেলা চেয়ারম্যান এককভাবে এডিপির প্রকল্প বরাদ্দ নিয়ন্ত্রণ করেন। নামে মাত্র উপজেলা পরিষদের সভা ডেকে রেজিলেশন করা হয়। কত টাকা বরাদ্দ, কোথায় প্রকল্প দেওয়া হবে সব কিছু গোপন রাখা হয়।
বহরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান জানান, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির সরকারের বড় একটি উন্নয়ন বরাদ্দ। কিন্তু মাধবপুরে এডিপির অর্থের পরিমাণ ও প্রকল্প উন্মুক্তভাবে করা হয় না। সভা ডাকা হলেও সভায় বিস্তারিত প্রকাশ করা হয় না। ইউপি চেয়ারম্যানদের ৪/৫টি করে প্রকল্প নির্দিষ্ট টাকার মধ্যে প্রকল্প প্রণয়ন করে দিতে শুধু বলা হয়। কিন্তু বিস্তারিত কিছু জানানো হয় না। মাধবপুর উপজেলা চেয়ারম্যান একটি রাজনৈতিক দলের নেতা। তিনি তার নেতাকর্মীদের খুশি করতে তাদের বাড়িঘরের নিকট প্রকল্প বরাদ্দ দিয়ে থাকেন।
চৌমুহনী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আপন মিয়া জানান, মাধবপুরে এডিপির কাজ নিয়ে কোনো আলোচনা হয় কিনা জানি না। উপজেলা চেয়ারম্যান তার মতো করে প্রকল্প ব্যয় বরাদ্দ করে থাকেন। বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাধবপুরে উন্নয়ন বরাদ্দের উপদেষ্টা। প্রকল্প প্রনয়নে মন্ত্রীরও কোনো মতামত বা উপদেশ কার্যকরভাবে নেওয়া হয় না।
ছাতিয়াইন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহীদ উদ্দিন আহাম্মেদ জানান, এডিপির ব্যাপারে আমরা শুধু কাগজে, কলমে রেজুলেশন দিয়ে থাকি। প্রকল্প রাখা না রাখা উপজেলা চেয়ারম্যানের হাতে। এর বাইরে আমি তেমন কিছু বলতে পারি না। উপজেলা চেয়ারম্যানের সিএ ( বিশ্বস্ত সহকারী) নাহিদুল ইসলাম উপজেলা চেয়ারম্যানের নির্দেশে চূড়ান্ত তালিকা প্রস্তুত করেন। নাহিদ সবকিছু বলতে পারবে। তালিকা প্রণয়ন ও প্রকাশ হয়েছে কি না আমার জানা নেই।
জগদীশপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম জানান, প্রকল্প প্রকাশ হয়েছে কি না আমি দেখিনি। সব কিছু উপজেলা চেয়ারম্যান বলতে পারবে।
চা শ্রমিক নেতা রবীন্দ্র গৌড় জানান, চা শ্রমিকরা সব সময় বর্তমান সরকারকে সমর্থন দিয়ে আসছে। কিন্তু এতো বড় উন্নয়ন প্রকল্পে চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে কোনো বরাদ্দ রাখা হয়নি। এটি খুবই হতাশাজনক। তালিকা পুনরায় প্রস্তুত করার সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্টদের নিকট দাবি জানাই। অন্যতায় বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নিকট লিখিতভাবে জানানো হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাসনুভা নাশতারানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন , বিষয়টি উপজেলা চেয়ারম্যান ভালো বলতে পারবেন। তিনি উপজেলা চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। এডিপি প্রকল্পে চা শ্রমিকদের বরাদ্দ না থাকলে অন্য প্রকল্প থেকে চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করা হবে।
হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, নিয়ম হচ্ছে উপজেলা পরিষদ সভায় ইউনিয়ন চেয়ারম্যানসহ সকল সদস্যদের নিয়ে আলোচনা করে তালিকা প্রস্তুত করা। তালিকা প্রণয়নে অনিয়মের অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নের বরাদ্দ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখানে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও খেলাধুলা ও স্যানিটেশন খাতে বরাদ্দ রাখা যেতে পারে।
এ ব্যাপারে মাধবপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. শাহজাহানের সঙ্গে মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে পাওয়া যায়নি।