শ্রীমঙ্গলে ভয়ঙ্কর ৩ কিলোমিটার রাস্তা
প্রকাশিত হয়েছে : ৫:৩৮:৫৪,অপরাহ্ন ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২০
সুরমা নিউজ:
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলাটি ব্রিটিশ আমল থেকেই পর্যটন এলাকা হিসেবে পরিচিত।
দেশের ১৬৭টি চা বাগানের মধ্যে ৪০টি চা বাগানই এই উপজেলায় অবস্থিত। প্রতিদিন এখানে দেশ-বিদেশ থেকে হাজার হাজার পর্যটক প্রকৃতির সবুজ চা বাগান, লাউয়াছড়া বনসহ নানা দৃশ্যাবলি দেখতে আসেন।
পর্যটনশিল্পের ওপর এখানে গড়ে উঠেছে পাঁচতারকা মানের হোটেল, মোটেল ও শতাধিক গেস্ট হাউস। এখানকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দেশের অন্য জেলার চেয়ে অনেক ভালো।
শহরের বিজিবি ক্যাম্পসংলগ্ন বধ্যভূমি থেকে লাউয়াছড়া বনের প্রবেশমুখ পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার রাস্তায় ও আশপাশের এলাকায় দিনের বেলায় শতশত পর্যটকসহ জনগণের আনাগোনা খুব বেশি থাকে।
সন্ধ্যার পর পরই ওই রাস্তাসহ আশপাশের এলাকায় সুনসান নীরবতা নেমে এলেও বেড়ে যায় মাদকসেবীদের আনাগোনা।
কিন্তু গত এক মাসে এখানকার চা বাগানে খুন-ধর্ষণ এবং বিগত তিন বছরে আরও কয়েকটি ঘটনায় ভাবিয়ে তুলেছে সচেতন মহলকে।
গত ১৩ জানুয়ারি শহরের ভিক্টোরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র ইব্রাহীম মিয়া রকিকে তার বন্ধুরা ভানুগাছ সড়কে ভুড়ভুরিয়া চা বাগানের ভেতরে নিয়ে হত্যা করে এবং ৭ ফেব্রুয়ারি একই জায়গায় শহরের এক কিশোরীকে চা বাগানের দুই পাহারাদার ও টমটমচালক মিলে পালাক্রমে ধর্ষণ করে।
এসব ঘটনায় যদিও পুলিশ সব আসামিকে আটক করে আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছে। একই সড়কে ২০১৭ সালে বেলতলী নামক জায়গাতে দিনের বেলায় বিকাশ এজেন্টের ২০ লাখ টাকা ছিনতাই করে ছিনতাইকারীরা।
এর পর ২০১৮ সালে সন্ধ্যায় একই স্থানে সড়কে গাছ ফেলে দুর্বৃত্তরা পর্যটকদের গাড়িতে গণডাকাতি করে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অপরাধীদের শনাক্ত করলে দেখা যায়, এসব ঘটনার সঙ্গে বহিরাগতদের সঙ্গে স্থানীয়রাও জড়িত।
বর্তমানে চা বাগানগুলো মাদকের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। ফলে শহরতলির আশপাশের চা বাগানে গ্রাম থেকে মাদকসেবীরা মাদক কিনতে ও বিক্রয় করতে এসে ভিড় জমায়।
অনেকেই মনে করছেন, এসব মাদকসেবীর দ্বারাই ছোট-বড় নানা অপরাধমূলক কাজ হচ্ছে। সম্প্রতি এসব ঘটনায় পর্যটক ও স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
ঢাকা রিপাবলিক ইনস্যুরেন্স কোম্পানির কর্মকর্তা নোমান আবেদীনসহ ১২ জন শ্রীমঙ্গলে ছুটি কাটাতে ১৩ ও ১৪ ফেব্রুয়ারির জন্য একটি রিসোর্টে রুম বুক করেছেন।
শ্রীমঙ্গলের সাম্প্রতিক ঘটনার সংবাদ তিনি পত্রিকায় পড়ে এই প্রতিবেদকের কাছে তার আতঙ্কের কথা জানান। শহরের সচেতন নাগরিকরা মনে করছেন স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ওই তিন কিলোমিটার রাস্তাসহ আশপাশের এলাকায় পর্যটক ও স্থানীয় লোকজনের নিরাপত্তায় সার্বক্ষণিক টহল জোরদার করা দরকার।
যদিও পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য ট্যুরিস্ট পুলিশের একটি টিম গঠন করা হয়েছে; কিন্তু ট্যুরিস্ট পুলিশের কার্যক্রম শুধু দিনের বেলায় লাউয়াছড়া বনের ভেতরে দেখা যায়।
সচেতন মহলের দাবি, ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের অপরাধমূলক ঘটনা আর না ঘটে, সে জন্য স্থানীয় পুলিশের পাশাপাশি র্যাবের টহল কার্যক্রম জোরদার করা।
এ ব্যাপারে স্থানীয় কালীঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রাণেশ গোয়ালা বলেন, চা বাগানের ভেতরে মদের পাট্টাগুলো একেবারে বন্ধ করে দিতে হবে।
কেননা শহরতলির চা বাগান এলাকায় মাদকসেবীরাই সব অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে।
র্যাব-৯ শ্রীমঙ্গল ক্যাম্পের অধিনায়ক মেজর মো. ইশতিয়াক বিন ইউসুফ বলেন, আমাদের মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলা ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তা কভার করতে হয়। যেহেতু শ্রীমঙ্গল পর্যটন এলাকা, তাই এদিকে আরও বেশি নজরদারি বাড়াব।
ট্যুরিস্ট পুলিশ মৌলভীবাজার জোনের এএসপি আহসান হাবিব বলেন, আমরা শুধু পর্যটন স্পটগুলোতে পর্যকদের নিরাপত্তা দিয়ে থাকি।
আমাদের এত কম জনবল নিয়ে সব জায়গায় নিরাপত্তা দেয়া সম্ভব হয় না। চুরি-ডাকাতি বিষয়ে পর্যটকদের নিরাপত্তা দেয়া লোকাল ও জেলা পুলিশের দায়িত্ব।
জানতে চাইলে শ্রীমঙ্গল থানার ওসি জানান, সাম্প্রতিক ঘটনার পর এসপির নির্দেশে ওই এলাকায় সার্বক্ষণিক নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।