সিলেটে ইট বানাতে কৃষি জমির মাটি সাবাড়!
প্রকাশিত হয়েছে : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ৫:০৬ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলায় ফসলি জমির মাটি কেটে ইটভাটায় তৈরি করা হচ্ছে ইট। ফসলি জমির মাটি দিয়ে ইট তৈরি সরকার নিষিদ্ধ হলেও ভাটা মালিকরা এর কোন তোয়াক্কাই করছেন না। আর এ কারণেই সবাড় হচ্ছে কৃষি জমির মাটি। এতে জমির উর্বরতা শক্তি কমে গিয়ে ফসল উৎপাদনের হার কমে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে । প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে ‘মাটিখেকো’ মুনাফা লোভীদের কাজে লাগিয়ে ভাটা মালিকেরা ‘ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন’ ভঙ্গ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
সরেজমিন উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, বছরের এ মৌসুমে ফসলি জমির মাটি বিক্রির হিড়িক চলছে। এক শ্রেণির ‘মাটিখেকোরা’ এই মাটি কিনে উপজেলার বিভিন্ন ইটভাটায় বিক্রি করছেন। টাকার লোভে কৃষকরাও কাটতে দিচ্ছেন ক্ষেতের মাটি। জমির উপরের অংশ এক থেকে দুই ফুট গর্ত করে এক্সকাভেটর (মাটি কাটার যন্ত্র) দিয়ে কেটে নেয়া এসব মাটি ট্রাক্টর ও ট্রাকে করে যাচ্ছে ভাটায়। ভাটার প্রতিদিনের চাহিদা মিটিয়ে পুরো বছরের জন্যে পাশেই টিলা করে মাটি মজুদ রাখছে কর্তৃপক্ষ।
এ ছাড়াও বাসা-বাড়ির ভিটে ভরাটেও ব্যবহার হচ্ছে ফসলি জমির মাটি। সম্প্রতি উপজেলার কামালপুর, কালিগঞ্জের দতা এলাকা ও বাইপাস সড়কের দু’পাশের এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকার কৃষি জমি থেকে মাটি কাটার হিড়িক চোখে পড়ার মতো।
কথা হয় দতা গ্রামের কৃষি জমি থেকে মাটি বিক্রেতা মো. তুরাব আলীর মেয়ে লাইলী বেগমের সাথে। এ সময় মেশিনে মাটি কেটে স্থানীয় ইটভটার দু’টি ট্রাক বোঝাই করা হচ্ছিল। তিনি জানান, চুক্তিতে আমি আমার মায়ের জমি থেকে মাটি বিক্রি করছি। এখানে বুরো ফসল ও মৎস্য খামার করার ইচ্ছে আছে।
মাটি ক্রেতা দিলোয়ার জানান, চুক্তিতে আমি মাটি কিনেছি। এভাবে কৃষকদের কাছ থেকে কিনে বিভিন্ন ইটভাটায় বিক্রি
করে থাকি। ওর ক্ষেতের মাটি ইভাটায় বিক্রি করেছি।
স্থানীয় দুটি ইটভাটায় গিয়ে দেখা গেছে, মাটি সংগ্রহ ও মজুদ করতে রীতিমতো প্রতিযোগিতায় নেমেছে ভাটা দু’টি। সারা দিনই ইট
প্রস্তুতের পাশাপাশি মাটি সংগ্রহ করছে তারা। তাছাড়া এ দুই ভাটার মাটি পড়ে গিয়ে নষ্ট হচ্ছে যান চলাচলের পথ। ধুলা-কাদায় নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনৈক ভাটামালিক বলেন, ইট ভাটায় প্রতিদিন ২৫-৩০ ট্রলি মাটির প্রয়োজন হয়। ঠিকাদারদের কাছে কৃষকরা স্বেচ্ছায় বিক্রি করে। আমরা ওদের কাছ থেকে মাটি কিনে ব্যবসা করি। কৃষকরা না বিক্রি করলে আমরা নিতে পারতাম?
ইটভাটামালিক ইরশাদ আলী বলেন, কেউ স্বেচ্ছায় নিজের অপ্রয়োজনীয় মাটি বিক্রি করতে চাইলে আমরা নেই। অন্যথায় ফসলি জমির মাটি নেয়ার প্রশ্নই আসে না।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রমজান আলী বলেন, আমরা সব সময় ‘টপ সয়েল’ বিক্রির বিষয়ে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করি। একবার এ মাটি কেটে নিলে জমির উৎপাদন ক্ষমতা কমে যায়। আগের মতো উর্বরতা শক্তি ফিরে আসতে সময় লাগে ‘তিন প্রজন্ম’। তাই ‘টপ সয়েল’ বিক্রিকারী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. কামরুজ্জামান বলেন, আইন অনুযায়ী ইটভাটায় ফসলি জমির মাটি ব্যবহার নিষিদ্ধ। ইতিমধ্যে কালিগঞ্জের দতা এলাকায় ফসলি জমিতে মাটি কাটা অবস্থায় অভিযান চালিয়ে দু’টি ট্রাক আটক ও একটি এক্সকাভেটর জব্দ করা হয়েছে।