এই শীতে ঘুরে আসুন সিলেটের “লাল শাপলার রাজ্য”
প্রকাশিত হয়েছে : ৫:১৩:০৫,অপরাহ্ন ০৪ জানুয়ারি ২০২০
সুরমা নিউজ:
শুক্রবার। ঘড়ির কাটায় সকাল সাড়ে ৭টা। কুয়াশাচ্ছন্ন কাকডাকা ভোরে কনকনে শীতের শিশির ভেজা পরিবেশ উপেক্ষা করে মোটর সাইকেল যখন গোয়াইনঘাটের গহড়া গ্রামে পৌছি তখনও গ্রামের সিংহভাগ মানুষই ঘুমে। কেউবা মসজিদ থেকে ফজরের নামাজ পড়ে বাড়ি ফিরছেন। পাখ-পাখালির ডাকে মুখরিত পুরো গ্রাম। উপজেলা সদরের উত্তর দিকের মাত্র দুই কিলোামিটার দূরবর্তী নিরব স্তব্দ শান্ত গ্রামটির শান্তি প্রিয় মানুষগুলোর বেশিরভাগই কৃষক আর শ্রমজীবি। আছেন শিক্ষক,সাংবাদিক,ব্যবসায়ী,প্রবাসীসহ নানা পেশার মানুষজন।
গ্রামটির দক্ষিণ পাশেই রয়েছে বিশাল বিস্তৃত একটি বিল। গ্রামের দক্ষিন দিকে চোখে পড়ে একটি বৃহৎ বিলের। বিলটির নাম বুগইল বিল। এই বিলটিই এখন গোয়াইনঘাটের পর্যটন সম্ভানার নতুন অধ্যায় সুচিত করছে। গোয়াইনঘাটের ২নং পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের ছোটখেল মৌজাধীন গহড়া বুগইলবিলটি এখন প্রকৃতি কন্যার বুকে স্থান পেতে যাচ্ছে। গোয়াইনঘাটের গোয়াইনঘাট-রাধানগর-জাফলং সড়কের পশ্চিম পার্শ্বেই এই বৃহৎ বিলটির অবস্থান। উপজেলা সদরের সাথে যোগাযোগ রক্ষাকারি প্রধান সড়কের গহড়া যাত্রী ছাউনিতে নেমে সেখান থেকে যানবাহন কিংবা পায়ে হেটে মাত্র ৫মিনিটে পৌছা যাবে শাপলা রাজ্যের এই স্পটে। পর্যটন সংশ্লিষ্টরা জানান,বিলটিকে ভ্রমন প্রেয়সী পর্যটক দর্শনার্থীদের জন্য ঢেলে সাজিয়ে গড়ে তোলা হলে গোয়াইনঘাটের পর্যটন ব্যবস্থাপনায় নতুন আরও একটি স্থান লিপিবদ্ধ হবে।
পর্যটক দর্শনার্থীদের পদচারনা শুরু হলে পর্যটন কেন্দ্রিক ব্যবসা বানিজ্য প্রসারিত হবে এবং এতে করে স্থানীয়রা উপকৃত হবেন। সিলেটের প্রাকৃতিক সৌন্দ্যর্য অবলোকনে ছুটে আসা প্রকৃতি প্রেমী ভ্রমন প্রেয়সীদের কাছে জাফলং,বিছনাকান্দি,রাতারগুলের মতো অন্যতম আর্কষনীয় ও দৃষ্টিনন্দন স্পটে হিসেবে স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছে লাল শাপলায় মুখরিত পরিবেশের এই বিলটি। সরজমিনে দেখা গেলো সিলেটের গোয়াইনঘাটে বুগইল বিলে ফুটছে লাখো শাপলা। পুরো বিলটি যেন লাল আর লাল। চোখে পড়ে সকালে উদিত সোনালী সূর্য্যরে আভা ফুটন্ত লাল শাপলার গায়ে লাগার পর ফুলগুলোর রক্তিম নান্দনিকতা মনোলোভা রুপ। বিলের এপাশ থেকে ওপাশ জুড়ে চোখে পড়লো বক,পানকৌড়ি,বালিহাস,ডাহুক,কোড়া,শালিকসহ নানা জাতের পাখি,তাদের ডুব দিয়ে মাছ শিকার ও ঝাকে ঝাকে উড়ে যাওয়ার মনোমুগ্ধকর দৃশ্য। অপরুপা এ বিলটি যেন পর্যটক,দর্শনার্থীদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে।
সরজমিনে বুগইলবিলে কথা হয় স্থানীয়দের সাথে। গ্রামের সিরাজ,আলী আহমদ,আছদ্দর,নিজাম মিয়া,আবদুল করিম,সিরাজ উদ্দিরসহ লোকজনরা বলেন শুকনো মৌসুমের অল্প কিছুদিন ছাড়া সারা বছর জুড়ে এই বিল লাল শাপলার রংয়ে রঙ্গিন থাকে। ইউপি সদস্য জসিম উদ্দিনের সাথে আলঅপকালে তিনি জানান,এই বিলের ফুটন্ত শাপলা সুঠাম ও দৃষ্টি নন্দন,কয়েক শতাধিক জমির উপর বিস্তৃত বিলটির চারপাশে ফুটে লাখো লাল শাপলা ফুল।
ছোট ছোট নৌকায় করে ঘুরে বেড়ানো যায় বিলের চতুর পাশের সীমারেখায়। বিশেষ করে ডিঙ্গি নৌকায় করে এই বিলে ঘুরে বেড়ানোর মজাই আলাদা। গোয়াইনঘাটের উপজেলা ছাত্রলীগের সিনিয়র সহসভাপতি গোলাম রব্বানী সুমন জানান, গোয়াইনঘাটের গহড়া বুগইলবিলের লাল শাপলা রাজ্য ছাড়িয়ে যাবে অপরাপর শাপলা রাজ্যের সৌন্দর্য্যকে।
সহজতর যোগাযোগ আর একটি সড়কের পথ ধরে একাধিক পর্যটন ঘুরে দেখার এমন সহজ সুযোগ আর কোথাও পাবেননা ঘুরতে আসা পর্যটক দর্শনার্থীরা। আমি উক্ত শাপলা বিলটিকে গোয়াইনঘাটের পর্যটন স্পটের তালিকায় লিপিবদ্ধ করে দ্রুত পর্যটন ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার দাবি জানাচ্ছি। গোয়াইনঘাটের উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ নাজমুস সাকিব জানান, পর্যটন সম্ভাবনাকে বিকশিত করতে সরকার আন্তরিক। এ খাতে সরকারের গৃহিত বাস্তব সম্মত নানামুখি উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হচ্ছে। গোয়াইনঘাটের ভৌগলিক সীমারেখায় গড়ে উঠা যে কোন দর্শনীয় স্থানকে পর্যটক ও পর্যটন বান্ধব পরিবেশ করে গড়ে তুলতে আমরা সচেষ্ট আছি। উপজেলা সদরের অদুরে বুগইল বিলের শাপলা রাজ্যের কথাও শুনেছি,সরজমিনে পরিদর্শন করে এই স্থানকেও আকর্ষনীয় করে গড়ে তুলতে প্রশাসন তরফে উদ্যোগ নেয়া হবে।