ব্রিটেনে ভাগ্যবান ইউসুফের সাফল্যের গল্প, ব্রিটিশ মিডিয়ায় মাতামাতি
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ আগস্ট ২০১৯, ১১:০৪ অপরাহ্ণ
এনাম চৌধুরী, লন্ডন থেকে :
মোহাম্মদ ইউসুফ। ব্রিটেনে বাংলাদেশী বংশদ্ভুত সিলেটী এক ভাগ্যবান তরুনের নাম। যাকে নিয়ে ব্রিটিশ মিডিয়ায় চলছে মাতামাতি। রীতিমতো সে এখন ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’।
ইউসুফের ভাগ্যেকে শুধু সৌভাগ্য না বলে বলা যায় মহা সৌভাগ্যবান। ইউসুফ ব্রিটেনে হঠাৎ করেই আড়াই লক্ষ পাউন্ড হাতে পেয়েছে যা তার কল্পনাতেও ছিলোনা! বাংলাদেশী টাকায় যার পরিমান প্রায় পৌনে তিন কোটি থাকা। ইউসুফ এ টাকা কোনো লটারীতে অর্জন করেনি। তবে ‘জীবন গড়ার পথে’ ব্যায় করার এক উজ্জ্বল অর্জন যা তার হাতে অনেকটা লটারীর মতই এসেছে।
মোহাম্মদ ইউসুফ আহমদের স্বপ্ন ছিল যুক্তরাজ্যের বিখ্যাত ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। সেজন্য ক্যামব্রিজে আবেদনও জমা দিয়েছিলো সে। কিন্ত ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় তার আবেদন প্রত্যাখ্যান করে। এতে মন ভেঙ্গে যায় ছেলেটির। জীবনে যার বড় কিছু হওয়ার অনেক স্বপ্ন, সে স্বপ্নবাজকে কি থামানো যায়? লন্ডনের খুব সাধারণ কলেজের ছাত্র মোহাম্মদ ইউসুফ আহমেদ ভাঙ্গা হৃদয় নিয়েই আবেদন করে বসে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে (এমআইটি)। তার ভাগ্য নামের চাকা এতটাই অনুকুলে ছিলো যে কেমব্রিজ প্রত্যাখ্যাত ইউসুফ কে আড়াই লক্ষ পাউন্ডের ‘স্কলারশীপ’ সহ ফিজিক্স ও এরোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়ার আমন্ত্রণ জানায় এমআইটি।
বড় ছেলে মুহাম্মদ ইউসুফ আহমেদ, ১৬ বছরের মাহির আহমেদ এবং ১৫ বছরের মেয়ে সাইফ তারেককে নিয়ে পূর্ব লন্ডনে বসবাসকারী অপটিসিয়ান রিসেপশনিস্ট সাফিয়া বেগমের একাকী পথচলা। জীবন সংগ্রামে একাকী মায়েদের সন্তানকে পড়াশোনা করানো যেন বড় কোনো যুদ্ধ জয়ের গল্পের মতোই। সাফিয়া বেগমের মত মায়ের সন্তান মানুষ করার গল্প এবং ইউসুফের কেমব্রিজে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর বড় হওয়ার স্বপ্ন যেন একাকার হয়ে যায়। ভাঙ্গা হৃদয়ে তাই হাল না ছাড়া কিশোর জয় করে বসে পৃথিবী সেরা বিশবিদ্যালয় গুলোর একটিও।
এ বয়সে অন্য তরুণরা পড়াশুনার পাশাপাশি আড্ডাবাজিতে ব্যস্ত থাকলেও মোহাম্মদ ইউসুফ সবার চেয়ে একটু আলাদা। তার মাঝে অজানাকে নিয়ে কিছু করার স্বপ্ন ও বিশাল মহাশূন্য কি কাজ করছে, মানুষ মহাশূন্যে কি ভাবে কাজ করতে পারে সেটার স্বপ্ন অজান্তেই কাজ করতো। তাই তাড়িয়ে ফেরা স্বপ্নই তাকে আজ হাতের মুঠোয় এনে দিলো ‘এমআইটি’র আমন্ত্রণ। ইউসুফকে শুধু এমআইটি’ই আমন্ত্রণ পাঠায়নি , সে যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয় হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি’র আমন্ত্রণ পেলেও সে বেছে নিয়েছেন এমআইটিকে। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় ইউসুফের মেধাকে সাধারণভাবে দেখলেও পৃথিবীসেরা ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে (এমআইটি) নিউহাম কলেজে’র মতো অতি সাধারণ মানের একটি কলেজের এ ছাত্রের মধ্যে অসাধারণ কিছু দেখতে পেয়েছিলো। তবে সবার আগে মায়ের অসাধারণ উৎসাহ , শিক্ষকদের দেয়া গাইড লাইন তাকে জীবনের সাফল্যের এ সিড়িঁটির কাছে নিয়ে গেছে।
ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যাল তার আবেদন প্রত্যাখ্যান করায় মনটা ভেঙে গেলেও জীবনকে গড়তে অন্য কিছু পাওয়ার জেদ যেন তার ভেতরে তাড়িয়ে ফিরছিলো। তাইতো তার এখন আকাশছোঁয়া সাফল্য। ইউসুফ বলেন, যখন ক্যামব্রিজ আমাকে প্রত্যাখ্যান করলো, হৃদয় ভেঙে গিয়েছিল। সত্যিই বলছি, আমি কখনো ভাবিনি যে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যাবো। এরপর এমআইটির চিঠি এলো। তারপর হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের চিঠি।
আমার স্বপ্ন ছিল মহাকাশ বিষয়ক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের জন্য। যেহেতু এমআইটি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়, তাই আমি এটিকেই বেছে নিলাম। ‘আমার পরিবারের পক্ষে কখনো সম্ভব ছিলোনা ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে আমাকে পড়ানোর। এটা শুধুমাত্র একটা স্বপ্নই ছিল । তবে আমি আমার জীবনকে ভালোভাবে পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখতাম আর আমার মা আমাকে উৎসাহ দিতেন । কৃতিত্বের জন্য প্রিয় মায়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ইউসুফ বলেন, আমার মা সব সময়ই আমাকে উৎসাহ দিয়েছেন। যখনই স্কুলে কোনো প্রয়োজন হতো, বইয়ের দরকার হতো, সবই মিটিয়েছেন মা। আর আমার শিক্ষকরা আমাকে সাহস এবং প্রেরণা দিয়েছেন। মানব জাতির জন্য অর্থবহ এমন কিছু আবিষ্কার করার স্বপ্ন নিয়ে স্বপ্নবাজ মোহাম্মদ ইউসুফ আগামী অক্টোবরে বিশ্বখ্যাত ‘এমআইটি’র ভবিষ্যৎ এলামনাই হিসেবে নিজের নাম লেখাতে যাচ্ছেন। পৃথিবী থেকে প্রথম চন্দ্র ভ্রমণকারী বিজয়ী আপোলো-১১ এর পাইলট ‘বূজ অলড্রিন’ এর সাথে ও বূজ অলড্রিন’ যিনি ১৯৬৯ সালে কমান্ডার ‘নেইল আর্মস্ট্রং’-এর নেতৃতে পৃথিবী থেকে চন্দ্রে অবতরণ করেন ও সাবেক জাতিসংঘ মহাসচিব কফি আনান, আমেরিকান বংশোদ্ভোত বিশ্বখ্যাত অভিনেতা জেমস হাওয়ার্ড উড (জেমস উড) ও ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর মতো ব্যক্তিরা এমআইটি’র এলামনাই। সূত্র- দৈনিক জালালাবাদ