বন্ধুতার সাতকাহন
প্রকাশিত হয়েছে : ৪:৫১:৩২,অপরাহ্ন ০৪ আগস্ট ২০১৯
রায়হান আহমদ:
হ্যালো ফ্রেণ্ডস, জানি তোরা ভালো আছিস। ভালো থাকবি এটাই প্রত্যাশা। তোদের সাথে অনেকদিন দেখা হয়নি। কেন জানি না আজ খুব করে মনে পড়ছে তোদের কথা। কে কোথায় আছিস জানি না। হয়তো জীবন ও জীবিকার তাগিদে প্রবাহমান জীবনের সাথে মিশে গেছে তোদের অতীতের স্মৃতি। কিন্তু আমার ভোলা হয়নি কিছুই। সেই আগের মতোই আছি আমি। দিনে দিনে বয়সটা বাড়লেও কমেনি ফেলে আসা দিনগুলোর স্মৃতি। তোরা কি আগের মতোই আছিস, নাকি বদলে গেছিস? জানতে ইচ্ছে করছে।
এ্যাই, তোদের কি মনে আছে শৈশবের ফেলে আসা আষাঢ়-শ্রাবণের বর্ষামুখর চঞ্চল দিনগুলোর কথা। বর্ষার বৃষ্টি নামতেই আমরা নেমে পড়তাম বাড়ির উঠোন কিংবা পাশের ফাঁকা জমিনে। আবার কখনও পিচ্ছিল কাদা গায়ে মেখে মেতে উঠতাম ফুটবল উন্মাদনায়। দৌড়ঝাঁপ, লাফালাফিতে হুলুস্থুল কাণ্ড বাধাতাম। আর বর্ষার বেলা শেষে বাড়ির পাশে বড়ভাগা নদীতে ঝাপাঝাপি, কী অনবদ্য ছিলো সেসব দিনগুলো!
মনেপড়ে, আমরা খুব ভোরে শীতলপাটি আর কিতাব নিয়ে দলবেঁধে মক্তবে যেতাম। এরপর পাঠশালায় গিয়ে সমস্বরে গুণের নামতা। পাঠশালা শেষে আবারো এক সাথে বাড়ি ফেরা। কৈশোরের অন্যতম আকর্ষণ ছিলো বিটিভির ‘মিনা রাজুর কাটুন’। তা নিয়ে আমাদের কতো গল্প, ভাবনা।
শীতের চাদরে মোড়া সকাল বেলার কথা মনে আছে তোদের। খুব ভোরে রাস্তার পাশে খড়ে আগুন দিয়ে রোদের প্রত্যাশায় দাঁড়িয়ে থাকা। শীত আমাদের ভালো যেতো। কারণ ওই সময়ে বেশ কিছুদিন পাঠশালা বন্ধ থাকতো। সারাবেলা কাটতো নানা ধরণের খেলাতে। ক্রিকেট, ফুটবল, আর শিমুল গাছের তলায় পুতুল খেলার কথা কখনই ভোলার নয়।
বসন্ত শেষ হতে না হতেই গাছে গাছে দেখা যেত আমের মুকুল। অপেক্ষায় থাকতাম গ্রীষ্মের। মনে আছে তোদের মধুমাস আসলে আমরা দল বেধে দু’চারটা পাড়ায় ফল চুরি করতাম। তবে সেটা খেলার ছলেই করতাম। হয়তো মনে আছে। নাও থাকতে পারে! যদি কেউ ধরে ফেলত তখন তো উপায় নেই। কানমলা খেতেই হতো। ভুলিনি গ্রীষ্মের তীব্র গরমে তাল গাছের তলায় সবাই মিলে একসঙ্গে মার্বেল খেলার কথা।
জানিস বন্ধুরা এখন সময়টা কে বড্ড বেজন্মা বেজন্মা লাগে। তোরা নেই বলে। এখনও সময় কাটে, তবে আগের মতো নেই সেই প্রাণ খোলা হাসি, উল্লাস।
আজ তোরা অনেক দূর। দূর থেকে বেশী মনের দূর। কেউ হতো সংসার নিয়ে ব্যস্ত। কেউ বা ব্যবসা। হয়তো কেউ চাকরি। আমি তো সেই আগের মতো এখন আর নেই। সংসারের নানান কিছুই দেখতে হয়। মাঝে মধ্যে হাফিয়ে যাই। বলি এসব থেকে মুক্তির পথ কোথায়? বয়স হয়ে গেছে। দিনগুলো যেনো আর শেষ হচ্ছে না। একটু বৃষ্টি হলেই তোদের সাথে আমার শৈশব ভেসে উঠে সাদা কালো ক্যানভাসে। আমার এই চিরকুটটা নিশ্চয় তোরা পড়বি আর হারিয়ে যাবে শৈশবের সেই সোনালী দিনগুলো। যেখানে ছিলো না কিছুর অভাব। প্রাপ্যতায় ভরপুর ছিলো আমার ছোট বেলা।
একবারও কি এই হতভাগা বন্ধুটার কথা মনে হয় না। একবারও পিছুফিরে দেখতে ইচ্ছে করে না তোদের? সেই বড়ভাগা নদী, বিকেলের মস্তমাঠ, কুয়াশার চাদরে শীতের ভোর, বর্ষার ডানপিঠে শৈশব এখনো আমায় ভাবায়। এখনো আমি মাঝে মাঝে একা একা মাঠ-ঘাট চষে ফেলি। দূর থেকে স্মৃতি-বিভ্রমে তোদের দেখি। কখনো ছায়া আর কখনো অবছায়ায় সেই আলভাঙ্গা দূরন্ত দিনগুলোর কথা ভেবে সীমাহীন দীর্ঘশ্বাসের পাথর ভাঙি…