সিলেটের ভারসাম্যপূর্ণ আওয়ামী রাজনীতি যেন ছন্দ হারাচ্ছে
প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ জুলাই ২০১৯, ৬:৩৭ অপরাহ্ণ
মুক্তাদির আহমেদ মুক্তা:
সিলেটের ভারসাম্যপূর্ণ আওয়ামী রাজনীতি যেন ছন্দ হারাচ্ছে। জাতীয় রাজনীতিতে দ্যুতি ছড়ানো প্রয়াত নেতৃবৃন্দের অভাবে সিলেটের রাজনীতিতে যেন স্বকীয়তা নেই। হুকুম তামিল করার রাজনীতি করতে গিয়ে ম্লান হয়ে যাচ্ছে সাংগঠনিক ঐতিহ্য। সারাদেশে দ্বন্ধমুখর রাজনীতি উত্তাপ ছড়ালেও একসময় সিলেটের জাতীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপে সম্প্রীতি ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ছিল অনুকরণীয়। এখন হারিয়ে যেতে বসেছে সেই ঐতিহ্য। রাজনৈতিক দলের সম্মেলনগুলোতে প্রতিদ্বন্দ্বী দলের নেতারা এসে শুভেচ্ছা জানাতেন।এখন ভিন্ন দল তো দূরের কথা নিজ দলের দায়িত্বশীল নেতাদেরও অঙ্গ সংগঠনের সম্মেলনে উপস্থিত থাকার সুযোগ থাকছে না।
সম্প্রতি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী যুব লীগের জেলা ও মহানগরের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো।ভোটের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচনের অনন্য নজির স্থাপন করলেন সিলেটের যুবলীগের কাউন্সিলররা। অথচ ঐতিহাসিক এই সম্মেলনে সিলেট অঞ্চলের আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দকে উপেক্ষা করা হয়েছে। সরকারের মন্ত্রীদের প্রটোকলের প্রভাবে আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম প্রেসিডিয়ামের সদস্যেরও যথাযথ স্থান হয়নি প্রচারপত্রে। সরকারের কাছে দল বিলীন করার সাংগঠনিক প্রক্রিয়া কি তাইলে শুরু হলো?কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে থাকা সিলেটের নেতাদের সম্মেলনে আমন্ত্রণ পর্যন্ত জানানো হয়নি এমন খবরও প্রকাশিত হয়েছে সংবাদমাধ্যম।রাজনৈতিক শিষ্টাচার যেন ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে। যে সংগঠনের সম্মেলন হলো সেই সংগঠনের সাবেক নেতাদের উপস্থিতি নতুন কর্মীদের জন্য উৎসাহব্যঞ্জক।সাবেক নেতারাও এতে আত্মতৃপ্তি খোঁজেন, সম্মানিত বোধ করেন।এই রাজনৈতিক চর্চা হারিয়ে গেলে শেষবিচারে তাতো আত্মঘাতি।
যেকোনো সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব অবশ্যই সেই সংগঠনের নেতৃত্ব নির্বাচনে মুখ্য অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকেন।আনুষ্ঠানিক সকল কতৃত্ব পালন করেন।কিন্তু একটি অঞ্চলের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃত্বে আসীন নেতৃবৃন্দরা এসব উৎসবে উপস্থিত থাকলে স্থানীয় কর্মীরা নেতাদের ঐক্যের বন্ধনে নিজেরা আরো বেশি উজ্জীবিত হয়।উৎসাহ অনুভব করে। একটি সংগঠনের নেতৃত্ব যদি কর্মীদের আস্থা অর্জন করতে না পারে সেই নেতৃত্ব টেকসই হয় না।
প্রতিযোগিতায় নেতৃত্ব যেমন বিকশিত হয় প্রতিহিংসায় নেতৃত্ব তেমনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।সহযোগী সংগঠনের সম্মেলনে অভিভাবক সংগঠনের বিভাগীয় সম্পাদকদের বাড়তি দায়িত্ব থাকে।যেমন কৃষি বিষয়ক সম্পাদক,যুব বিষয়ক সম্পাদক, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক, শ্রম বিষয়ক সম্পাদক ইত্যাদি ।নিজ নিজ বিভাগের আওতাধীন সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন আয়োজনে তাদের কর্তব্য পালনের সুযোগ রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে কি এ ধরণের চর্চা প্রতিফলিত হচ্ছে? এসব নিয়ে ভাবনার সময় এসেছে। শুধু একক নেতা সর্বস্ব রাজনৈতিক চর্চা অপরিনামদর্শী, অপরিণত, অদক্ষ নেতৃত্বের জন্ম দেবে।বর্তমানের অঙ্গ,সহযোগী সংগঠনের নেতারাই ভবিষ্যতে গণ সংগঠনের নেতৃত্ব দেবে।তাই ভবিষ্যতের স্বার্থেই সৌহার্দ্যপূর্ণ উদার রাজনৈতিক শিষ্টাচার বজায় রাখা জরুরি।সঠিক পরিচর্যায় সহযোগী সংগঠনের নেতৃত্ব বিকশিত না হলে এর দায় দায়িত্ব মূল সংগঠনের নেতারা এড়াতে পারেননা। কেন্দ্রের অন্যায় আবদার পূরণ করতে গিয়ে প্রান্তের নিবেদিতপ্রাণ,ত্যাগী নেতাদের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা রাজনীতির জন্য সুখকর নয়।রাজনৈতিক কর্মীরা বেড়ে উঠুক সুষ্ঠু রাজনীতি চর্চায়।নেতাদের অনুকম্পা নয় কর্মীদের যোগ্যতা হোক এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা।
জয়বাংলা। জয় বঙ্গবন্ধু।
লেখক: রাজনৈতিক কর্মী