সমাজে নারীর নিরাপত্তাহীনতা জনিত উদ্বেগ ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে
প্রকাশিত হয়েছে : ১০:০৬:০০,অপরাহ্ন ২৪ জুলাই ২০১৯
খায়রুল হাসান রুবেল:
প্রায় এক বছর আগে আমার ছোট বোন একটা অফিসে চাকরির জন্য সিভি জমা দেয়। কিছুদিন আগে ঐ অফিস থেকে ফোন দিয়ে একজন তথাকথিত ভদ্রলোক জানতে চায় যে,আপনি তো চাকরির জন্য সিভি জমা দিয়েছিলেন? এর উত্তরে আমার বোন তাকে জানায়-হ্যাঁ। কিন্তু সেটাতো একবছর আগে।এখন কেন ফোন দিয়েছেন? উত্তরে তথাকথিত ঐ ভদ্র লোক জানান যে, সিভিতে আপনার ছবিটা দেখে ভাল লাগছে, তাই ফোন দিলাম। আর এরকম একটা অফিসে মেয়েদের চাকরি দেয়ার নামে কি হতে পারে,সেটা বোধ হয় উপরের ঘটনা থেকেই প্রতিয়মান।হয়ত কপাল ভাল তখন ইন্টারভিউর জন্য ডাকে নাই।যদি ডাকত তাহলে পরিস্থিতি কি হতে পারত সেটা এই ঘটনার পর থেকে চিন্তা করছি।
একটা সমাজে নীতি-নৈতিকতার এত স্খলন হলে সে সমাজে মেয়েদের অবস্থান কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? একজন পুরুষের মতই তো একজন মেয়েরও দৈনন্দিন কাজে বাইরে বের হতে হয়। তাকে মোবাইল রিচার্জের জন্য রিচার্জ সেন্টারে নম্বর দিতে হয়,চাকরির জন্য সিভি জমা দিলে সেখানে সেলফোনের নম্বর দিতে হয় এছাড়াও নানান বিষয়ে দেয়ার প্রয়োজনীয়তা তো আছেই। আর এ সবের পরিপ্রেক্ষিতে যদি এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা কিংবা উত্ত্যক্ততার স্বীকার হতে হয় তাহলে তো মেয়েদের জন্য এই সমাজে চলা কঠিন হয়ে যাবে। এই হচ্ছে আমাদের সমাজে মেয়েদের অবস্থা।
এ প্রসঙ্গে ওয়াসফিয়া নাজরীনের বক্তব্য খুবই যৌক্তিক এবং প্রাসঙ্গিক।তিনি মেয়েদের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে বলেছেন – পর্বত জয়ের চেয়েও ঢাকার রাস্তায় মেয়দের চলা কঠিন। যদিও শুধু ঢাকা শহরেই না,সর্বত্রই মেয়েরা এ ধরনের হয়রানির স্বীকার। একজন শিক্ষিত মেয়ে স্বাবলম্বিতা অর্জনের জন্য চাকরি করবে এটাই স্বাভাবিক।অথবা সে তার পরিবারের একমাত্র অবলম্বন হওয়ার কারনে চাকরি করা তার জন্য আবশ্যকও হতে পারে।আর সেই তাকেই যদি এসব হয়রানির স্বীকার হতে হয় তাহলে কিভাবে চলতে পারে? আমাদের সমাজে যা চলছে সে তুলনায় আমার উদাহরণ(যেটা দিয়ে এই লেখা শুরু করেছি)হয়ত খুবই মামুলী।কিন্তু এভাবেই তো শুরু হয়।এবং তারপর ক্রমাগত বিষিয়ে উঠে একটা মেয়ের জীবন। গৃহকর্মী থেকে শুরু করে গার্মেন্টসে মেয়ে কর্মী এবং সেই সাথে অভিজাত অফিস পাড়ায় প্রতিদিন কত মেয়ে যে হয়রানির স্বীকার হয় তার প্রায় সব কাহিনীই হয়ত আমাদের অজানা।শুধু দুই-ুএকটি ঘটনা যা আমাদের গোচরে আসে নানান মাধ্যমে তাই আমরা জানি।তার তাতেই তো শিহরিত হতে হয়। আর অগোচরের সব ঘটনা তো আড়ালেই থেকে যায়।যার স্বীকার হয়ে কত মেয়ের জীবন যে থেমে যাচ্ছে কে জানে।
আমাদের সমাজ কোন পর্যায় গিয়ে পৌঁছেছে? যেখানে একটা বাচ্চা মেয়েই নিরাপদ না সেখানে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে কিভাবে নিরাপদ থাকবে? এই দুষ্ট ক্ষত থেকে বের হওয়ার জন্য রাষ্ট্র এবং সমাজকে এখনই পথ খুঁজতে হবে। রাষ্ট্রকে যথাযথ আইনের প্রয়োগ এবং দীর্ঘসূত্রীতা বিহীন বাস্তবায়ন যেমন করতে হবে,তেমনি পরিবার থেকে শুরু করে সামাজিক কর্মসূচীর মাধ্যমে মানুষের নৈতিক শঙ্খলন দূর করতে কর্মসূচী নিতে হবে। শিক্ষা ব্যবস্হায় সচেতনতা মূলক পাঠদান অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।একজন ছেলে শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবনের শুরু থেকেই তাকে এমন ভাবে গড়ে তুলতে হবে যেন সে তার পরিণত বয়সে নারীকে যথাযথ সম্মান করতে শেখে। কর্মস্হলে কিংবা সামজিক পরিবেশে নারীর প্রতি আচরণ কেমন হওয়া উচিত তা শাস্তির বিধান সহ উল্লেখ রাখতে হবে।এবং উপযুক্ত প্রমাণ সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে দ্রুত সেই শাস্তি কার্যকর করতে হবে। আর গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রে যাতে দ্রুত আইনি পদক্ষেপ গ্রহন এবং কার্যকর করা হয় সেই ব্যবস্হাও রাষ্ট্রকে নিতে হবে। কোন ধরনের পেশীর জোড়,রাজনৈতিক ভাবে কোন ধরনের হস্তক্ষেপ যেন বাঁধা হতে না পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। এসব সম্মিলিত পদক্ষেপই হয়ত এ অবস্থার উত্তরণ ঘটাতে পারে।নয়ত অচিরেই ভয়াবহ সামজিক বিপর্যয় সৃষ্টির আশংকা আছে। শুধুমাত্র এসমস্ত হয়রানির কারনে যদি একটা মেয়ে তার যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও যদি স্বাবলম্বীতা অর্জনের চিন্তা থেকে পিছিয়ে যায় তাহলে নারীর ক্ষমতায়ন তিরোহিত হবে।পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারী দাসে পরিণত হবে।