ট্রাম্পের করুণা নিয়ে আমেরিকায় স্থায়ী বসবাসের জন্যই প্রিয়ার মিথ্যাচার
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:০৬:১৫,অপরাহ্ন ২০ জুলাই ২০১৯
জুবায়ের আহমেদ:
আমেরিকায় স্থায়ী বসবাসের জন্য প্রিয়া সাহা এমন মিথ্যা কল্প কাহিনী বানিয়েছেন বলে আমি মনে করি। ট্রাম্পের করুণা নিয়ে আমেরিকায় স্থায়ী বসবাসের সুযোগ পেতেই তিনি বাংলাদেশ বিষয়ে এমন বক্তব্য দিয়েছেন। নিতান্তই ব্যক্তিস্বার্থের জন্য তার উচিত হয়নি দেশকে এমনভাবে হেয় করা। তার এই মিথ্যাচারে আমরা থেমে গেলে চলবে না।
শত বছর ধরে নানা জাতি-ধর্মের মানুষ এই ভূখণ্ডে শান্তিপূর্ণভাবে মিলেমিশে বসবাস করে আসছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এ দেশের সুমহান ঐতিহ্য। বাংলাদেশের পরিচিতি মূলত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ হিসেবে। এ দেশের মানুষ নিজ নিজ ধর্মে নিষ্ঠাবান হওয়ায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে তারা অনুকরণীয় আদর্শ বলে বিশ্বাস করে। বাংলাদেশের মানুষ ধার্মিক বলেই ভিন ধর্মাবলম্বীদের প্রতি সহনশীলতার আদর্শ এ দেশে মূর্তমান। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে বিনষ্ট করার চক্রান্ত অবশ্য বারবার ব্যর্থ হয়েছে। বিশ্বে বাংলাদেশকে সম্প্রীতির মডেল হিসেবে দাঁড় করাতে হলে শান্তি ও সৌহার্দ্যরে বন্ধনকে সুদৃঢ় করতে হবে।
উল্লেখ্য, ১৭ জুলাই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে দেখা করেন চীন, তুরস্ক, কোরিয়া, মিয়ানমারসহ বিশ্বের ১৭টি দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ব্যক্তিরা। সেই সাক্ষাৎকারে অংশ নেন বাংলাদেশের প্রিয়া সাহা। তাদের প্রত্যেকেই ট্রাম্পকে তাদের নিজ দেশের দুর্ভোগের কথা বলছিলেন। সেখানেই বাংলাদেশ থেকে যাওয়া নারী ট্রাম্পকে বলেন, তার জমি জমা কেড়ে নিয়েছে বাংলাদেশি মুসলিমরা, তার ঘরবাড়িতেও আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। তাই তিনি ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে এসেছেন।
এ খবরটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হবার পর শুক্রবার বিকেলে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস তাদের অবস্থান স্পষ্ট করলো। এদিন রাজধানীর মেরুল বাড্ডায় বৌদ্ধমন্দির পরিদর্শনে যান মার্কিন রাষ্ট্রদূত রবার্ট মিলার। সেখানে পৌঁছালে বৌদ্ধ নেতারা স্বাগত জানান মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে। এসময় মিলার মন্দির প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখেন। পরে বৌদ্ধ নেতাদের সাথে এক সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় মিলিত হন রাষ্ট্রদূত।
ওই নারীর বক্তব্যের পর দেশের সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। রীতিমতো নেটিজেনরা ওই নারীর বক্তব্যের প্রতিবাদ করেন। তারা ট্রাম্পকে হ্যাশ ট্যাগ, মেনশন করে জানাচ্ছেন ওই মহিলা মিথ্যে কথা বলেছেন। তবে কেন ওই নারী এমন কথা বললেন তা জানা যায়নি। তবে যুক্তরাষ্ট্রের একটি গণমাধ্যম পুরো অনুষ্ঠানটি ফেসবুকে লাইভ করার কারণে ভিডিওটি সকলের সামনে চলে আসে।
ওভাল অফিসে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে সেই নারী ট্রাম্পকে বলেন, ‘আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি। সেখানে ৩৭ মিলিয়ন হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ খ্রিস্টানকে গুম করা হয়েছে। এখনো সেখানে ১৮ মিলিয়ন সংখ্যালঘু জনগণ রয়েছে। দয়া করে আমাদের সাহায্য করুন। আমরা আমাদের দেশ ত্যাগ করতে চাই না। আমি আমার ঘর হারিয়েছি, আমার জমি নিয়ে নিয়েছে, আমার ঘরবাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে কিন্তু সেসবের কোনো বিচার নেই।’
ডোনাল্ড ট্রাম্প জিজ্ঞেস করেন কারা এসব করছে? বাংলাদেশি ওই নারী বলেন, ‘সবসময় উগ্রবাদী মুসলিমরা এই কাজ করছে। সবসময় তারা রাজনৈতিক প্রশ্রয়ে এই কাজ করে।’
এরপরই বিষয়টি টক অব দ্য কান্ট্রিতে পরিণত হয়েছে। জানা গেছে ওই মহিলার নাম প্রিয়া সাহা। তিনি বাংলাদেশের হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক পরিচয়দানকারী।
জানা গেছে, প্রিয়া সাহা মহিলা ঐক্য পরিষদ’র কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন, উনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ইউনিয়ন করতেন, রোকেয়া হলে থাকতেন। এখন একটি এনজিও আছে ওনার। বিভ্রান্তিমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য গতবছর তাকে মহিলা ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়, বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার নাটক করে প্রচুর বিদেশি ফান্ড কালেক্ট করেন তিনি। তার গ্রামের বাড়ি চরবানিরী, মাটিভাঙ্গা, নাজিরপুর, পিরোজপুর।
প্রিয়ার স্বামী মলয় সাহা সহকারী উপপরিচালক দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাদের দুই মেয়ে কয়েক বছর ধরে আমেরিকায় বসবাস করছেন। কিছুদিন পূর্বে প্রিয়া সাহা আমেরিকায় যান।
সম্পাদক
সুরমা নিউজ