হবিগঞ্জে বিলুপ্তির পথে রাবার শিল্প, লোকসান সামলাতে হিমশিম
প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ জুলাই ২০১৯, ৩:৪৯ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ :
হবিগঞ্জে পৃষ্ঠপোষকতা ও উদ্যোক্তাদের অনাগ্রহের কারণে বিলুপ্তির পথে রাবার শিল্প। দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে সাদা সোনাখ্যাত রাবার পাচার, রাজনৈতিক নেতাদের অবৈধ হস্তক্ষেপ, শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি না দেয়া, আবাসন ও জনবল সংকটসহ নানাবিধ সমস্যা রয়েছে রাবার বাগানগুলোতে।
হবিগঞ্জে ২টি বাগানে প্রায় ৪ হাজারেরও বেশি রাবার গাছ আছে। বাগানগুলো হচ্ছে- মাধবপুর উপজেলার শাহজিবাজার রাবার বাগান ও বাহুবল উপজেলার রূপাইছড়া রাবার বাগান। বাগানগুলোতে এখন যেসব রাবার গাছ রয়েছে তার অধিকাংশের আয়ুষ্কালই প্রায় ফুরিয়ে গেছে। সরেজমিন দেখা যায়, কোনো রকমে দাঁড়িয়ে আছে আয়ুষ্কাল পেরিয়ে যাওয়া গাছগুলো। যার মধ্যে অল্প কিছু গাছ থেকে রাবার সংগ্রহ করা হচ্ছে। একদিকে যেমন সরকার বিদেশ থেকে উন্নত জাতের রাবার গাছ আমদানিতে অনাগ্রহী, তেমনি বন বিভাগও রাবার বাগানের জন্য জমি দিতে আগ্রহী নয়। এ অবস্থায় দেশের ‘সাদা সোনা’র ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় শ্রকাশ করছেন কর্মকর্তা ও বেসরকারি রাবার বাগানের মালিকরা।
রূপাইছড়া বাগান সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬২ একর জায়গা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত বাগানটিতে ১৯৭৭ সাল থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত প্লান্টেশন করা হয়। ১৯৮৫ সালের শেষের দিক থেকে বাগানের উৎপাদন শুরু হয়। এই বাগানটিতে বর্তমানে নিয়মিত ও অনিয়মিতসহ প্রায় ৪৫০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করছেন। তবে বর্তমানে বাগানটিতে লক্ষ্যমাত্রর চেয়ে কম উৎপাদন হচ্ছে। ২০১৮ সালে রূপাইছড়া রাবার বাগানে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৪শ’ মেট্রিক টন। এর মধ্যে উৎপাদন হয়েছে ৩০৭ মেট্রিক টন ।
রূপাইছড়া বাগান ব্যবস্থাপক জানান, বাগানের শুরুতে মোট ১ লাখ ৯৫ হাজার গাছ লাগানো হয়েছিল। এর মধ্যে ১ লাখ ৮৩ হাজার গাছের আয়ুষ্কাল শেষ হয়ে গেছে কয়েক বছর আগেই। এখন এই বাগানে মাত্র ১৩ হাজার গাছ থেকে রাবার উৎপাদন হচ্ছে।
জানা যায়, বন বিভাগের উদ্যোগে ১৯৬০ সালে প্রথম রাবার বাগানে গাছ লাগানো হয়। বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশনের আওতায় ১৯৭৭-৭৮ সালে এডিবির ঋণের মাধ্যমে মালয়েশিয়া থেকে রাবার গাছের চারা এনে লাগানো হয়। বর্তমানে মালয়েশিয়ায় আরো অধিক ফলনশীল উন্নত প্রজাতির আরআরআইএস-৩৪০০সহ কয়েক প্রজাতির চারা রোপণ করা হচ্ছে।
শাহজিবাজার রাবার বাগানটিও ১৯৭৭ সাল থেকে শুরু করে ১৯৮৫ সালে প্লান্টেশন হয়। ১৯৮৬ সাল থেকে বাগানটিতে উৎপাদন শুরু হয়। ৬ শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রয়োজন হলেও বর্তমানে বাগানটিতে কর্মরত আছেন প্রায় ৪৫০ জন। বর্তমানে বাগানটিতে ১ লাখ ৮ হাজার গাছ থেকে রাবার উৎপাদন হচ্ছে। গত বছরেই শাহজিবাজার রাবার বাগানে প্রতি কেজিতে ৪০ টাকা করে ঘাটতি হয়েছে। যার মোট ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়ায় ১ কোটি ৫২ লাখ ৮০ হাজার টাকা।
শাহজিবাজার বাগানের উপ-ব্যবস্থাপক জানান, ২ হাজার ৪০ একর বাগানটিতে ২ লাখ ৫৫ হাজার রাবার গাছ আছে। এর মধ্যে প্রায় ১ লাখ ৪৭ হাজার গাছের আয়ুষ্কাল ফুরিয়ে গেছে ৭ থেকে ৮ বছর আগে।
বনশিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশন সিলেট সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে রাবারের চাহিদা আছে ২৫ হাজার টনের অধিক। আর দেশে উৎপাদন হয় ১৯-২০ হাজার টন। আর দেশ থেকে রফতানি হচ্ছে ৯ হাজার ৫০০ টন রাবার। প্রতি বছর এর চাহিদা বাড়ে প্র্রায় ৩ শতাংশ হারে। দেশে উৎপাদিত রাবারের ৬০ শতাংশ দেশি উদ্যোক্তারা কিনছেন। টানা কয়েক বছর লাভের মুখ না দেখায় ব্যক্তি মালিকানাধীন রাবার বাগানগুলো একে একে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। শিল্পপণ্য হিসেবে ব্যবহৃত রাবারের জন্য বাজারে ভ্যাট দিতে হচ্ছে ১৫ শতাংশ। সব মিলিয়ে লোকসান সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন বাগান কর্তৃপক্ষ।