যে আতঙ্ক সিলেটের আলখাজা মার্কেটে
প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ জুলাই ২০১৯, ১২:২৯ পূর্বাহ্ণ
ওয়েছ খছরু:
কাস্টঘরের আলখাজা মার্কেট। মানুষের কাছে এক আতঙ্কের নাম। আগুন লাগে এই মার্কেটে। ইতিমধ্যে একাধিকবার আগুন লেগেছে। মার্কেটের নিচতলায় রয়েছে কেমিক্যালের কয়েকটি দোকান। রয়েছে কেমিক্যাল গোডাউনও। ফলে এখনো রয়েছে সংশয়। এই অবস্থায় শঙ্কা নিয়ে মার্কেটে ব্যবসা করছেন ব্যবসায়ীরা।
অর্ধশতাধিক পরিবারের কয়েকশ’ মানুষ বসবাস করছে। ইতিমধ্যে তদন্ত চালিয়ে মার্কেট সম্পর্কে পুরো ধারণা পেয়েছে সিটি করপোরেশন। আদালত থেকে সময় নিয়ে আপাতত রেহাই পেয়েছেন মার্কেটের মালিকপক্ষ। বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে মার্কেটকে ব্যবসা ও বসবাসের উপযোগী করে গড়ে তোলা না হলে পুরো মার্কেট ভেঙে ফেলার কথা জানিয়েছেন সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। সিলেটের ব্যস্ততম বাণিজ্যিক এলাকা মহাজনপট্টির পাশ ঘেঁষেই কাস্টঘরের আলখাজা মার্কেট। দুই অংশে মার্কেটের অবস্থান। ৫ তলাবিশিষ্ট ওই মার্কেটে গত ১লা মে সন্ধ্যার পরপরই আগুন লাগে। আগুনের উৎপত্তি মার্কেটের পার্কিং এলাকার ক্যামিকেলের অবৈধ গোডাউন। আতঙ্ক শুরু হয় কাস্টঘরের বাসিন্দাদের মধ্যে। উদ্বেগ উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়ে মহাজনপট্টির ব্যবসায়ীদের মধ্যেও। খবর পেয়ে ছুটে যান সিলেটের মেয়রও। ফায়ার সার্ভিস, স্থানীয় লোকজন মিলে প্রায় দুই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণ আনে। অগ্নিকাণ্ডের সময় সবচেয়ে বেশি আতঙ্ক ছিল বসতিদের নিয়ে। কেমিক্যালের গোডাউনে আগুনের ফলে উপরে আটকা পড়া কয়েকশ’ মানুষের জীবন নিয়ে শঙ্কা ছিল। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর মার্কেট নিয়ে তীব্র ক্ষোভ দেখা দেয় কাস্টঘরবাসীর মধ্যে। আগুন থেকে বাঁচতে তারা মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করেন। এরপর থেকে ওই মার্কেট নিয়ে সক্রিয় হয় সিলেট সিটি করপোরেশন। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, দুই পার্টে নির্মিত আলখাজা মার্কেটের আন্ডার গ্রাউন্ড হচ্ছে পার্কিং। কিন্তু বাস্তবে সেখানে পার্কিংয়ের কোনো উপস্থিতি নেই। এসিড, স্প্রিড, নানা কেমিক্যালের গোডাউন সেখানে। মার্কেটে আশিক এন্টারপ্রাইজ, শাহজালাল হার্ডওয়ার নামের দুটি ক্যামিকেলের দোকান রয়েছে। মার্কেট কর্তৃপক্ষ থেকে ভাড়া নিয়ে সেখানে কেমিক্যালের গোডাউন করা হয়েছে। নিচতলা ও দুই তলা পর্যন্ত রয়েছে প্রায় ২০০টি দোকান। এর মধ্যে বেশিরভাগ গোডাউন হিসেবে ভাড়া দেয়া হয়েছে। আর ৩ তলা থেকে ৫ তলা পর্যন্ত রয়েছে ফ্ল্যাটবাড়ি। অর্ধশতাধিক পরিবার মাসিক ৭ থেকে ৮ হাজার টাকায় ওই ফ্ল্যাটগুলোতে ভাড়া থাকেন। একে তো জনবসতিপূর্ণ কাস্টঘর এলাকা। তার উপর মার্কেটে ভাড়াটেও ঠাসা। ফলে আগুন নিয়ে আতঙ্কিত সবাই। রাস্তার পাশেই কেমিক্যালের গুদাম। কেউ সিগারেট ফেললেই ঘটে অগ্নিকাণ্ড। ভাড়াটেরা জানিয়েছেন, এ বছর ১লা মে অগ্নিকাণ্ডের আগে ২০১৬ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে ৪ বার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু ঘুম ভাঙেনি মার্কেট কর্তৃপক্ষের। এবারের আগুনের পর ভবনে থাকা ১২টি পরিবারের বাসিন্দারা প্রতিবাদী হয়েছিলেন। তারাও নিরাপদ এলাকা ও নিরাপদ মার্কেটের দাবিতে নেমেছিলেন আন্দোলনে। এর মধ্যে একজন হচ্ছেন মার্কেটের ব্যবসায়ী কানু পাল। প্রতিবাদ করার কারনে কানু পালের ক্রয়কৃত দুটি দোকানের কাগজপত্র আটকে দেয়া হয়েছে। নোটিশ দিয়ে কানু পাল, সুব্রত কর্মকার, গণেশ কর্মকার, সজল কর্মকার, লিটন কর্মকারসহ ১২ জন ভাড়াটিয়াকে ৩০শে জুন বের করে দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে কথা বললে ভাড়াটেদের হুমকি দেয়া হয়। হুমকির ঘটনায় কানু পাল গত ২২শে জুন মার্কেটের মালিক শায়েস্তা মিয়া ও তার ছেলে সানির বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি করেছেন। কানু পাল জানিয়েছেন- ‘আমরা প্রতিবাদ করার কারণে ১২ পরিবারকে বের করে দেওয়া হয়েছে। এখন ক্রয় করা দোকানের কাগজপত্র আটকে দেয়া হয়েছে।’ তিনি বলেন, এ ঘটনায় তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সুপারিশ সংবলিত আবেদন সিলেটের জেলা প্রশাসক ও সিটি মেয়র বরাবর পেশ করেছেন। এদিকে- মে মাসের শুরুতে সিলেট সিটি করপোরেশন মার্কেটে অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় তারা মার্কেটের যাতায়াতের মোট ৫টি সিড়ির মধ্যে তিনটি বন্ধ করে গোদাম ভাড়া দেয়ার সত্যতা পায়। একই সঙ্গে তারা আন্ডারগ্রাউন্ডে অবৈধভাবে কেমিক্যাল গুদাম ভাড়া দেয়ার সত্যতা পায়। এ সময় ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে মার্কেটের ওই সিঁড়িগুলো খোলে দেয়াসহ কেমিক্যাল গোডাউন সরিয়ে ফেলা হয়েছে। কিন্তু এখনো রয়েছে কেমিক্যালের দোকান। ফলে আতঙ্ক কাটছে না। তবে অনুমতি নিয়েই ক্যামিকেলের দোকান খোলা হয়েছে। এ ব্যাপারে বিস্ফোরক অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় ক্ষোভ বাড়ছে। সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী জানিয়েছেন, এই মার্র্কেটে অনেক গলদ রয়েছে। দু’পার্টের ওই মার্কেটে যথাযথ বিল্ডিং কোড মানা হয়নি। এছাড়া- অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি রয়েছে। আদালতের নির্দেশে আমরা মার্কেট কর্তৃপক্ষকে সময় দিয়েছি। এই সময়ের মধ্যে মার্কেট কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে আমরা পুরো মার্কেট ভেঙে ফেলবো। এই মার্কেটের কারণে এলাকার মানুষ ও মহাজনপট্টির ব্যবসায়ীরা অস্বস্তিতে রয়েছেন বলে জানান তিনি। কাস্টঘরের বাসিন্দা টিটু চৌধুরী জানিয়েছেন- গোটা কাস্টঘরবাসী সব সময় আতঙ্কে থাকেন। আগুন ধরলে কাস্টঘরের পাশাপাশি মহাজনপট্টিও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তিনি বলেন- আমরা এ নিয়ে আন্দোলনে ছিলাম। পরে সিলেটের মেয়রের উপর আস্থা রেখে আমরা নিরব হয়েছি। মেয়র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে ব্যবসায়ীদের নিয়ে স্থানীয় এলাকাবাসী ফের আন্দোলনে নামবো। মার্কেটের মালিক শায়েস্তা মিয়া মানবজমিনের কাছে নিজেও স্বীকার করেছেন দুই পার্টের মার্কেটে মাঝখানে যে পরিমাণ জায়গা রাখা ছিল সেটি সংকোচিত হয়েছে। তবে আগুন লাগার পর আমরা ক্যামিকেল গোডাউন সরিয়ে ফেলেছি। ম্যাজিস্ট্রেট আসার পর থেকে সিঁড়িগুলো খোলে দেয়া হয়েছে। এখন তেমন সমস্যা নেই। মার্কেটের আগের বাসিন্দা কানু পালসহ কয়েকজন ব্যক্তি আক্রোশ থেকে তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন বলে জানান। সূত্র- মানবজমিন