সুরমা নদীতে ছুড়ে ফেলে দেয়া সেই মাহার মরদেহ উদ্ধার
প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ জুলাই ২০১৯, ৫:৩৩ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
সিলেটের টুকেরবাজার ব্রিজের উপর থেকে ফেলে দেয়া শিশু মাহার মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শনিবার (৬ জুলাই) সকালে সুরমা নদীর লামাকাজি এলাকায় মরদেহটি ভেসে উঠে।
পরে জালালাবাদ থানা পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে। এদিকে শিশুকে নদীতে ফেলে হত্যার ঘটনায় আটক সৎমাকে আদালতের নির্দেশে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এমন ঘটনায় হতবাক কুমারগাঁওবাসী। মা তার কোলের শিশুকে এভাবে নদীতে ছুড়ে ফেলার ঘটনাও বিরল। ফলে, শেষ বিকালে সিলেটে খবরটি নিয়ে চাঞ্চল্য দেখা দেয়।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের জালালাবাদ থানার ওসি অকিল উদ্দিন আহমদ বলেন, ব্রিজ থেকে শিশুকে নদীতে ফেলে দেয়ার ঘটনায় শুক্রবার ওই শিশুর বাবা জিয়াউল হক বাদি হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় একমাত্র আসামী করা হয় শিশু মাহার সৎমা ও জিয়াউলের দ্বিতীয় স্ত্রী সালমা বেগমকে। শনিবার সালমাকে আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তাকে জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন।
উল্লেখ্য, বিকাল ৩টার দিকে বোরকা পরিহিত সালমা বেগম কোলে শিশুটিকে নিয়ে ব্রিজের ওপর আসেন। তিনি ব্রিজের দক্ষিণ প্রান্ত থেকে হেঁটে আসেন। এ সময় কোলে থাকা শিশুটি কান্না করছিল। হঠাৎ সালমা বেগম তার কোলে থাকা শিশুটিকে নিচে ফেলে দেন। ব্রিজ থেকে নিচে পড়ে যাওয়ার সময় শিশুটি চিৎকার করছিল। এ দৃশ্য দেখে তারা তাৎক্ষণিক সালমাকে আটক করে। এবং শিশুটিকে উদ্ধারের চেষ্টা চালায়। কিন্তু ডুবে যাওয়া স্থলে শিশুটিকে পাওয়া যায়নি। পরে পুলিশ এসে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দলকে খবর দেয়। ডুবুরিরা এসে তিন ঘণ্টা তল্লাশি চালিয়েও শিশুটিকে পায়নি। প্রত্যক্ষদর্শী আব্দুর রহিম জানিয়েছেন- শিশুটিকে নদীতে ফেলে পালিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয় জনতা ওই মহিলাকে আটক করে। এরপর পুলিশ এসে তাকে আটক করে জালালাবাদ থানায় নিয়ে যায়। খবর পেয়ে ফতেহপুর গ্রামের লোকজনও সেখানে আসে। তারা জানিয়েছে- ফতেহপুর গ্রামের জিয়াউল হক এক দরিদ্র কৃষক। অভাব-অনটনের সংসার তার। জিয়াউল হক আগে এক বিয়ে করেছিল। ওই স্ত্রীর ঔরসজাত দুটি কন্যা সন্তান রয়েছে। আর সালমা বেগমের গর্ভে দুই বছরের আরো একটি মেয়ে রয়েছে। বিয়ের পর থেকে জিয়াউল হক পুত্র সন্তান চাইছিলেন।
কিন্তু তার প্রথম স্ত্রীর ঘরে দুটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। এ নিয়ে তাদের মধ্যে পারিবারিক বিরোধ দেখা দিলে তিন বছর আগে তাদের ডিভোর্স হয়। দুই কন্যা সন্তানকে স্বামীর ঘরে রেখে চলে যান প্রথম স্ত্রী। এরপর জিয়াউল হক বিয়ে করেন সালমাকে। সালমার ঘরেও আরো একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। অভাব-অনটনের সংসার হওয়ার কারণে বিভিন্ন সময় জিয়াউল ও সালমার মধ্যে বিরোধ বাঁধে। এই বিরোধের জের ধরে জিয়াউল হক প্রায় সময় দ্বিতীয় স্ত্রী সালমাকে মারধর করে। গতকাল দুপুরেও জিয়াউল ও সালমার মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। এ সময় জিয়াউল স্ত্রী সালমাকে মারধরও করে। এক পর্যায়ে সৎ মেয়ে মাহাকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় সালমা। আর ব্রিজের ওপর এসে মাহাকে নদীতে ফেলে দেয়।