খাদিমপাড়াজুড়ে আতঙ্ক: হার্ডলাইনে পুলিশ, মামলায় আসামি জাহাঙ্গীর
প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ জুলাই ২০১৯, ১২:৩৮ পূর্বাহ্ণ
ওয়েছ খছরু:
সিলেটের খাদিমপাড়াজুড়ে আতঙ্ক। শাহপরান গেটে থমথমে পরিস্থিতি। পুলিশ মোতায়েন থাকলেও স্বস্তি ফিরছে না। ব্যবসায়ীরা রয়েছেন উৎকণ্ঠায়। মঙ্গলবার রাতের ঘটনার পর থেকে পরিবহন শ্রমিকরা ক্ষুব্ধ। নির্বিচারে গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় তারা রাতেই সড়ক অবরোধ করেন। প্রশাসনের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে সরে গেলেও এখন মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এদিকে- ঘটনার পর পুলিশও হার্ডলাইনে।
গতকাল দুপুরে শাহপরান থানা পুলিশের পক্ষ থেকে থানায় একটি এসল্ট মামলা করা হয়েছে। এই মামলায় প্রধান
আসামি করা হয়েছে মেজরটিলা-ইসলামপুরের নিয়ন্ত্রক ও যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলমকে। মামলার ঘটনায় ক্ষোভ দেখা দিয়েছে জাহাঙ্গীর বলয়ে। সিলেট শহরতলি খাদিমপাড়া। নগরঘেঁষা ইউনিয়ন পরিষদ হলেও অর্ধেক এলাকা শহরের মতই। টিলাগড়কেন্দ্রিক সব রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু খাদিমপাড়াকে ঘিরে।
এই খাদিমপাড়ার দুই প্রভাবশালী নেতা বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান আফসর আহমদ ও জাহাঙ্গীর আলম জেলা যুবলীগের কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ঘোষণাকে কেন্দ্র করে মুখোমুখি হয়েছেন। তাদের দুই জনের বিরোধে এখন জ্বলছে খাদিমপাড়া। উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা আর আতঙ্কের জনপদে পরিণত হয়েছে। মঙ্গলবার বিকালে খাদিমপাড়া এলাকায় পাল্টাপাল্টি শোডাউন দেন আফসর ও জাহাঙ্গীর বলয়ের নেতারা। এ সময় স্থানীয় ইউনিয়ন অফিসের সামনে জাহাঙ্গীর গ্রুপের মিছিল গেলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। হামলার অভিযোগ এনে ওই সময় সিলেট-তামাবিল সড়ক অবরোধ করে রাখে আফসর গ্রুপের কর্মীরা। খবর পেয়ে সেখানে যান শাহপরান থানার ওসি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী সহ পুলিশের সিনিয়র কর্মকর্তারা। তারা বিক্ষুব্ধ কর্মীদের শান্ত করে সড়ক অবরোধ তুলে দেন। এ সময় খাদিমপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে পুলিশের ওসি আব্দুল কাইয়ুম, স্থানীয় চেয়ারম্যান আফসর আহমদ সহ ব্যবসায়ীরা বসে বৈঠক করছিলেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এ সময় অনুরোধ করা হয় পুলিশের তরফ থেকে। শাহপরান থানা পুলিশ জানিয়েছে- রাতে সেখানে শতাধিক মোটরসাইকেলের একটি বহর যায়। তারা মিছিলসহকারে গিয়ে খাদিমপাড়া ইউনিয়ন অফিসে হামলা চালায়।
কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়। এ সময় হাতে থাকা লাঠিসোটা দিয়ে তারা আফসর গ্রুপের কর্মীদের মারধর করে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হন। আহতদের মধ্যে আফসর আহমদের সপ্তমশ্রেণি পড়ুয়া ভাতিজা আদিতও রয়েছে। আদিতকে একা পেয়ে হামলাকারীরা বেধড়ক পেটায়। এতে গুরুতর আহত হলে তাকে প্রথমে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় রাতেই তাকে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। গতকাল দুপুরে তার মাথায় অস্ত্রোপচার করা হলেও বিকাল পর্যন্ত জ্ঞান ফিরেনি। ঘটনার সময় শাহপরান থানা পুলিশের এসআই সাখাওয়াত সহ ৩ পুলিশ সদস্য আহত হন। এ ছাড়া- পথচারীসহ সব মিলিয়ে প্রায় ২০ জনের মতো আহত হন।
সংঘর্ষের সময় নির্বিচারে গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। আগুনে পুলিশের একটি সহ তিনটি মোটরসাইকেল জ্বালিয়ে দেয়া হয়। আরো দুটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। ঘটনাকালীন উপস্থিত থাকা পুলিশ সদস্যরা প্রায় ৪ রাউন্ড গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এদিকে- ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষ, হামলা, গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে খাদিমপাড়া সহ শাহপরান এলাকায়। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের পাশাপাশি সিনিয়র কর্মকর্তারাও ঘটনাস্থলে ছুটে যান। স্থানীয়রা জানিয়েছেন- ছাত্রলীগ কর্মী পংকি, রকি, রুহিত, মামুন সহ কয়েকজনের নেতৃত্বে মেজরটিলা থেকে গিয়ে এই হামলা চালানো হয়। রাতের ঘটনায় যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবকলীগের কর্মীরাও গিয়েছিলেন। এদিকে- সংঘর্ষের সময় নির্বিচারে গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় ক্ষেপেছে সিলেট জেলা ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়ন। উত্তেজনার মধ্যেই রাত ১০টার দিকে পরগনা এলাকায় তারাও সড়ক অবরোধ করে। এ সময় ওই এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। ট্রাক ভাঙচুরের ঘটনায় শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আবু সরকার শাহপরান এলাকার আফসরের অনুসারীদের দায়ী করেন। এবং ক্ষুব্ধ হয়ে তারা যানবাহনে ভাঙচুর করেছে বলে জানান। রাত সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশ গিয়ে হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
সিলেট জেলা ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আবু সরকার জানিয়েছেন- পরিবহন ভাঙচুরের ঘটনায় তারা থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। যারা পরিবহন ভাঙচুর করেছে প্রকৃত আসামিদের তিনি অভিযুক্ত করবেন বলে জানান। এদিকে- খাদিমপাড়ার ঘটনায় ক্ষুব্ধ পুলিশ। গতকাল দুপুরে শাহপরান থানা পুলিশের পক্ষ থেকে থানায় একটি এসল্ট মামলা করা হয়েছে। ওই মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে মেজরটিলার যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলমকে। ওসি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী মানবজমিনকে জানিয়েছেন- ৭০ জনের নাম উল্লেখ করে শতাধিক লোককে আসামি করে এ মামলা করা হয়। ঘটনার সময় পুলিশ ৪ রাউন্ড গুলি ছুড়ে। বিবদমান পক্ষ ককটেলচার্জ সহ গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছে। মামলা দায়েরের আগে রাতে পুলিশ খাদিমপাড়া এলাকার মেজরটিলা, শাহপরান, খাদিম, সুরমা গেটসহ কয়েকটি এলাকায় অভিযান চালায়।
অভিযানে সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনায় জড়িত ৯ জনকে আটক করেছে। তাদের এসল্ট মামলার আসামি করা হয়েছে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও যুবলীগ নেতা অ্যাডভোকেট আফসর আহমদ জানিয়েছেন- ইউনিয়ন অফিসে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় কর্ম বিরতি পালন করা হচ্ছে। সকল মেম্বার ও কর্মকর্তা, কর্মচারীরা এই কর্ম বিরতির ডাক দিয়েছে। এ ঘটনায় সরকারি সম্পত্তি ইউনিয়ন অফিস ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ কারণে পরিষদের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি চলছে। তিনি বলেন- পুলিশ উপস্থিত ছিল। সব দেখেছে। এখানে আমাদের মুখ দিয়ে বলার কিছুই নয়। তবে- শাহপরান সহ খাদিমপাড়ার মানুষ সন্ত্রাসীদের কাছে জিম্মি হয়ে গেছে বলে জানান তিনি। এর বিচারের ভার জনগণের কাছে দিয়েছেন বলে জানান।
যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলম ঘটনার প্রেক্ষিতে তাকে আসামি করায় পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন। বলেছেন- ঘটনার সময় তিনি ওই এলাকায় যাননি, ঘটনা ঘটাবেন কীভাবে। যদি পুলিশ প্রশাসন কোনো প্রমান দেখাতে পারে তিনি রাজনীতি ছেড়ে দেবেন বলে জানান। আর পুলিশ প্রশাসন যে শাস্তি দেবে সেটিও তিনি মাথা পেতে নেবেন। তিনি রাজনীতির প্রতিহিংসার শিকার বলে দাবি করেন। এজন্য পুলিশকে নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখার অনুরোধ জানান তিনি। সূত্র- মানবজমিন।