মার্কিন গোপন নথি ফাঁস-২: ওসমানীর বিরুদ্ধে গন্ডগোল সৃষ্টির অভিযোগ তুলেন জিয়া
প্রকাশিত হয়েছে : ০২ জুলাই ২০১৯, ৪:২৫ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
১৯৭৮ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ইস্যুতে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আচরণে মহান মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর প্রধান জেনারেল এম এ জি ওসমানী যে আঘাত পেয়েছেন তা জানিয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডেভিড টি স্নাইডার তারবার্তা পাঠিয়েছিলেন ১ জুন অর্থাৎ ওই নির্বাচনের দুদিন আগে। এর আগে ১১ মে স্নাইডার আরেকটি তারবার্তা পাঠান। তাতে তিনি লিখেছেন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রচারণার মাত্র এক সপ্তাহ অতিবাহিত হয়েছে। কিন্তু ইতিমধ্যেই জিয়াউর রহমান তার নির্বাচনী প্রচারণার শুরুতেই আক্রমণাত্মক অবস্থান নিয়েছেন। এ কথা মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিজেই বলেছেন এবং তিনি প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থী জেনারেল ওসমানীকে যেসব ভাষায় আক্রমণ করেছেন সেগুলোর একটা ফিরিস্তিও ওয়াশিংটনে পাঠিয়ে ছিলেন।
জিয়াউর রহমান ওসমানীকে লক্ষ্য বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ বাকশালিরা গণতন্ত্র হত্যাকারী এবং জাতীয় সম্পদ ধ্বংসকারী। মার্কিন রাষ্ট্রদূত তার বার্তায় স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন ওয়াশিংটনকে যে, জেনারেল ওসমানী একদা আওয়ামী লীগ এবং পার্লামেন্ট থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। কারণ তিনি নীতিগতভাবে শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে একমত হতে পারেননি। আজ তিনি আওয়ামী লীগেরই প্রার্থী হয়েছেন।
জিয়াউর রহমান নির্বাচনী প্রচারণায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে সরাসরি উল্লেখ করে কোন বক্তব্য দিতেন না। মার্কিন রাষ্ট্রদূত লিখেছেন, জিয়াউর রহমান আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্য করে বলতেন, তারা জনগনের শত্রæ। এমনকি জিয়া নির্বাচনী প্রচারণায় জেনারেল ওসমানী সম্পর্কে ভুল মন্তব্য করেছিলেন, সে কথাও রিপোর্ট করেছিলেন মার্কিন অ্যাম্বাসেডর। যেমন জিয়াউর রহমান এক জনসভায় বলেছিলেন, ওসমানী এবং তার সমর্থকরা দেশে গন্ডগোল সৃষ্টি করছে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে নির্বাচনকে খাটো করা। স্নাইডার বলেছেন, এর কোনো প্রমাণ আমরা পাইনি। জিয়াউর রহমানের ‘রাজনৈতিক’ উপদেষ্টাগণ পিছিয়ে ছিলেন না । তারাও জেনারেল ওসমানীকে তার থেকেও আরেকটু বাড়িয়ে কঠোর সমালোচনা করেছেন। উল্লেখ্য, এই নির্বাচনে ওসমানী জিয়ার প্রার্থী হওয়ার আইনগত বৈধতা চ্যালেঞ্জ করার পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছিলেন।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত লিখেছেন, জিয়ার শিবির থেকে বলা হয়েছে, ওসমানী শুধু একজন আওয়ামী লীগের পুতুল নয়, তিনি একজন ভারতের সাবেক তাবেদার। ওসমানীকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, তিনি স্বাধীনতার পরে দেশ থেকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ ভারতীয় আর্মিকে নিয়ে যেতে ‘এলাউ’ করেছিলেন। নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে এলো- ওসমানীর বিরুদ্ধে ততো বেশি জোরদার আক্রমণাত্মক বক্তব্য বাড়লো। এর মোকাবেলা করতে গিয়ে তিনি অনেকটাই বিব্রত হয়েছিলেন।
মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বর্ণনায় দেখা যায়, এরকম সরাসরি আক্রমণের মুখে দাঁড়িয়েও জেনারেল ওসমানী জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে সরাসরি কোনো আক্রমণাত্মক বক্তব্য দিতেন না। মার্কিন রাষ্ট্রদূত লিখেছেন, তার বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনামূলক বক্তব্য যা দিতেন, তার জবাবে তিনি বলতেন, জাতীয় রাজনীতিতে বড় প্রয়োজন সহিষ্ণুতা। এটা যদি থাকে তাহলেই কেবল একটি গণতন্ত্রে উত্তরণ ঘটানো সম্ভব হতে পারে। মার্কিন রাষ্ট্রদূত লিখেছেন, ওসমানীর বক্তৃতা ‘সোবার এন্ড ডিগনিফায়েড’ ছিল। তিনি বিনম্র রাজনীতির কথা বলে গেছেন। ওসমানী তার সমালোচকদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘যারা কথাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে আল্লাহ তাদের ক্ষমা করেন না।’
মার্কিন রাষ্ট্রদূতও দুঃখ করে বলেছেন, জেনারেল ওসমানীর বিনম্র বক্তব্য তৎকালীন সংবাদপত্রে ছাপা হতো না বললেই চলে। এ বিষয়টিও মার্কিন রাষ্ট্রদূতের নজর এড়ায়নি। এ বিষয়ে তিনি লিখেছেন, ওসমানী বক্তব্য সংবাদপত্রগুলোতে গুরুত্বের সঙ্গে কভার করা হতো না। এবং জিয়ার বক্তব্যের জবাবে তিনি যা বলতেন, তা খুব ছোট হরফে নিচের দিকে ছাপা হয়েছে।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত লিখেছেন, ভোটের ঠিক আগে মিরপুরে ওসমানী একটি সভা করতে পারেননি। কারণ তার উপদেষ্টারা একমত হতে পারেননি যে মঞ্চে শেখ মুজিবুর রহমানের একটি প্রতিকৃতি দেওয়া হবে কিনা এবং সেখানে ১৯৭১ সালের মুজিবের ভাষণটি (ঐতিহাসিক ৭ মার্চের) প্রচার করা হবে কি না। শেষ পর্যন্ত সেই সভাটি বাতিল হয়। স্নাইডার লিখেছেন, ওসমানী এই কারণে একটি দিন নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেয়ার সুযোগ হারালেন।
১৯৭৮ সালের ২৫ মে ছিল রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ক্যাম্পেইনের তৃতীয় সপ্তাহ। মার্কিন রাষ্ট্রদূত যে গোপন তারবার্তা টি পাঠিয়ে ছিলেন তার নাম ছিল প্রেসিডেনশিয়াল ইলেকশন হাইলাইটস অফ গ্রিটিংসমার্কিন রাষ্ট্রদূত লিখেছেন প্রেসিডেন্ট জিয়া তার নির্বাচনী বক্তৃতা একটা পরিবর্তন এনেছেন তিনি অনেকটা অধিক তর রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ধারা ফিরিয়ে এনেছেন আর এদিকে জেনারেল ওসমানী এর আগে দেয়া জিয়াউর রহমানের বাগাড়ম্বরপূর্ণ অভিযোগের জবাব দিতে শুরু করেছেন যেমন জেনারেল ওসমানী বলেছেন জিয়া ও দেশ প্রেমিক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন এখানে আনিমেলস বলতে মুসলিম লীগকে বোঝানো হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত ওসমানী বলেছেন জিয়া তাদের সহযোগিতা জিয়া তাদের সহযোগিতা নিয়ে নেওয়ার কারণে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে টানাপোড়েন দেখা দিয়েছে ওসমানীর কিছু সভা মত ভিন্নতার কারণে হতে পারে নি ওসমানী দাবি করেছেন দাবি করেছেন সর্মথকরা তার সভায় বাধা তৈরি করেছে।
১৯৭৮ সালের ওই নির্বাচনে জিয়াউর রহমান ভোট পেয়েছিলেন, ১ কোটি ৫৭ লাখ ৩৩ হাজার ৮০৭টি। অপরদিকে ওসমানী পেয়েছিলেন ৪৪ লাখ ৫৫ হাজার ২শটি। প্রচারণায় ওসমানী যদি জিয়ার মতো অবস্থান নিতেন বা জিয়ার মতো পারিপার্শ্বিক সুবিধা পেতেন ফলাফলে হয়তো এর প্রভাব পড়ত। সূত্র-একাত্তরের কথা।