আল-হামরার লিফট যেন মৃত্যুফাঁদ : ঝুঁকিতে ইউনিভার্সিটির ৫ হাজার শিক্ষার্থী
প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ জুন ২০১৯, ৯:৩১ অপরাহ্ণ
এমদাদুল হক মান্না :
সিলেটের অভিজাত শপিংমল আল হামরার লিফটের ত্রুটির কারণে মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটিসহ কয়েকটি বেসরকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অন্তত ৫ হাজার শিক্ষার্থী মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছেন। এছাড়াও বিভিন্ন বেসরকারী অফিস ও কনসালটেন্সী ফার্মে কর্মরত শতাধিক কর্মকর্তা কর্মচারীও রয়েছেন এই মরণফাঁদ লিফট ঝুঁকিতে। দীর্ঘ ৭-৮ বছর ধরে লিফটে ত্রুটি থাকলেও নজরে আসছে না মার্কেট কর্তৃপক্ষের। ফলে প্রায়ই ঘটছে ছোট-বড় ঘটনা। এতে করে আতঙ্ক বাড়ছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে।
এ নিয়ে শিক্ষার্থীরা বার বার সংশ্লিষ্টদের ধর্না দিয়েও কোনো কাজ হচ্ছে। ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা লিফটের সংস্কার দাবিতে আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। লিফটের মারাত্মক ত্রুটি থাকার পরও শিক্ষার্থীরা বাধ্য হয়ে লিফটি ব্যবহার করছেন।
জানা গেছে, ১২ তলা বিশিষ্ট সিলেটের প্রথম অভিজাত শপিংমল আল হামরায় বিপনীবিতান ছাড়াও এখানে রয়েছে মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটিসহ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কনসালটেন্সি ফার্ম, ট্রাভেলস এজেন্সি ও বিভিন্ন বেসরকারি অফিস। বহুতল এই ভবনটিতে ওঠানামার জন্য সামনের দিকে রয়েছে ২টি ক্যাপসুল লিফট। শিক্ষার্থীসহ প্রতিদিন প্রায় ৫ হাজারের বেশি মানুষ ওঠানামা করেন এই লিফটগুলো দিয়ে। কিন্তু ৭-৮ বছর থেকে দুটি লিফটই ত্রুটিপূর্ণ রয়েছে। ফলে প্রায় ছোট-বড় দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। লিফটের ত্রুটি কয়েকবার সরানো হলে স্থাায়ীভাবে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না মার্কেট কর্তৃপক্ষ।
অপরদিকে লিফটে দুর্ঘটনার শিকার শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বারবার অভিযোগ দিলেও তারা কোনো ব্যবস্থাা নিচ্ছেন না। ফলে মৃত্যু ঝুঁকি নিয়েই প্রতিদিন ক্লাসে যাচ্ছেন মেট্রোপলিটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী। একই আতঙ্ক বিরাজ করছে ওই মার্কেটের হেক্সাস, মেন্টরস, লিংক থ্রিসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা কর্মচারীদের মধ্যে।
জানা গেছে, গত ৪-৫ বছরে লিফটে ত্রুটিজনিত কারণে অন্তত ৫০টির মত ছোটোখাটো দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব বেশিরভাগ ঘটনার শিকার হয়েছেন মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা। এছাড়া দিনের পর দিন লিফটের ত্রুটি বড় আকারে দেখা দিচ্ছে। যেকোনো সময় বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটার শঙ্কা রয়েছে। কিন্তু তাতেও টনক নড়েনি মার্কেট কর্তৃপক্ষের। অপরদিকে দুর্ঘটনার শিকার শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অভিযোগ দিলেও তারা উল্টো মার্কেট কর্তৃপক্ষকে দোষারোপ করছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষার্থীরা জানান, লিফটে ত্রুটি থাকায় প্রায় আমাদের দুর্ঘটনার শিকার হতে হয়। লিফটে উঠলে মাঝ পথে আটকে যায়। এতে চরম উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে। তারা জানান, কয়েকদিন আগে এক ছাত্র প্রায় আধ ঘণ্টা সময় লিফটের ভেতরে আটকে যায়। পরে আলাদা মই ব্যবহার তাকে উদ্ধার করা হয়েছে।
তারা জানান, সামনের লিফট দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছাড়াও আইএলটিইএস ও স্পোকেন কোর্স প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ব্যবহার করে। এছাড়া বিভিন্ন বেসরকারি অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারিরাও এই লিফট দিয়ে ওঠানামা করে। ফলে সকলের জন্য একটা আতঙ্ক হয়ে দাড়িয়েছে লিফট দুটি।
এ ব্যাপারে মেট্রোপলিট বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্টার লোকমান আহমেদ জানান, প্রায় ২০ বছরের পুরোনো মার্কেটের সামনের দুটি লিফট শুধু মেরামতের মধ্যেই চলছে। ফলে কিছুদিন পরপর দুর্ঘটনা ঘটছে। তিনি বলেন, আমরা এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে একাধিক বার মার্কেট কর্তৃপক্ষকে অবগত করলেও তারা নানা অযুহাতে আমাদের শান্তনা দিয়ে যাচ্ছেন। জোড়াতালি দিয়ে লিফটের ত্রুটি ঠিক করে নিচ্ছেন। কিন্তু স্থাায়ীভাবে কোনো সমাধন হচ্ছে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এই কর্মকর্তা আরো বলেন, এই লিফট নিয়ে বড় ধরনের কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে বা কেউ মারা গেলে তার দায়ভার অবশ্যই মার্কেট কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে। কারণ আমরা প্রতিনিয়ত তাদেরকে অভিযোগ দিয়ে যাচ্ছি কিন্তু তারা স্থাায়ী কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। যার ফলে এই সমস্যার কোনো সমাধান হচ্ছে না।
এ ব্যাপারে আলহামরা শপিং সিটির ব্যবস্থাাপনা পরিচালক আবু ফয়সাল জানান, এই বিষয়টি নিয়ে আমরাও খুবই উদ্বিগ্ন। তিনি বলেন, ভবনটিতে বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকায় এ দুটি লিফট সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে বেশি চাপ পড়ছে।
বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটলে এর দায়ভার কে নেবে এমন প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে তিনি বলেন, লিফটে দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হচ্ছে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশি শিক্ষার্থী ওঠানামা করা। ফলে ঘনঘন ত্রুটি দেখা দিচ্ছে। তিনি আরো জানান, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে যতবার অভিযোগ এসেছে ততবার আমরা লিফটের ত্রুটি সারিয়েছি।