ইতালি যাওয়া হলো না সিলেটি শিপনের, সাগরে ভাসতে থাকার পর ফিরলেন দেশে
প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ জুন ২০১৯, ৬:১৫ অপরাহ্ণ
ছাতক প্রতিনিধি :
সুন্দর-সূখী এবং বিলাসী জীবনের প্রত্যাশা নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে ছিলেন শিপন আহমদ। সংসারের অভাব দূর করতে স্বপ্নে বিভোর ছিলেন তিনি। স্বপ্ন পূরনে বুকভরা আশা নিয়ে সমুদ্র পথে ইতালি যেতে গিয়ে দালালের খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব হারিয়েছেন শিপন। তিউনেশিয়া থেকে উদ্ধার হওয়া ১৭ বাংলাদেশীর মধ্যে এক হতভাগা শিপন। পেশায় অটোরিক্সা চালক শিপন ছাতক উপজেলার দক্ষিণ খুরমা ইউনিয়নের মনিরজ্ঞাতি গ্রামের বাসিন্দা। সোমবার দুপুরে শিপন তার নিজ বাড়ীতে ফিরেছে।
শিপনের পাশ্ববর্তী এলাকার দালাল লুৎফুর রহমান তাকে সমুদ্র পথে ইতালি পৌঁছে দেবে বলে চুক্তি করেছিল। কিন্তু তাকে আটকে রেখে পরিবারের কাছ থেকে দালালরা কৌশলে আদায় করে নেয় ১০ লাখ টাকা। সোমবার শিপন তার গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসলে মা মিনারা বেগম তাকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পরেন। তাকে দেখতে বাড়িতে ভীড় করেন শত শত নারী-পুরুষ।
এ সময় শিপন বলেন, প্রায় তিন সপ্তাহ মৃত্যুর সাথে লড়াই করেছি। আমাদের অবস্থা এমন ছিলো যে বাঁচার জন্য যে যা পেয়েছে তাই খেয়েছে। আমি আমাদের দূতাবাসকে এবং সেখানকার আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ধন্যবাদ জানাই, আল্লাহর পরম করুণায় তারা আমাদের বাঁচাতে সার্বিক সহযোগিতা করেছেন। ‘আমি অল্প লেখাপড়া করেছি, তাই এলাকায় অটোরিক্সা চালাতাম। আমার পরিচিত পার্শ্ববর্তী গ্রাম মায়েরকোলের জমির আলীর পূত্র দালাল লুৎফুর রহমান বেশ কিছুদিন হলো লিবিয়া গিয়েছে। সে প্রায়ই আমাকে ফোনে বলতো বিদেশ নিবে, আমি যাতে টাকা পয়সা জোগার করি। অভাবের সংসারটা বদলে রঙিন স্বপ্ন দেখছিলাম। জমি বন্ধক রেখে, গরু-বাছুর বিক্রি করে মানুষের কাছ থেকে ঋণ করে টাকা এনে এমনটা হবে সেটা কোনদিন চিন্তাও করিনি।
লিবিয়া নিয়ে যাওয়ার পর আমাকে আটকে রেখে টাকা নেয়া হয়েছে। মারধর তো করতোই, লিবিয়া থেকে ইতালি নিবে বলে আমার বাড়িতে ফোন করে আরও ৩ লাখ টাকা নিয়েছে। আমার কাছ থেকে সব মিলিয়ে লুৎফুর ও তার বাবা জমির মিলে ১০ লাখ টাকা নিয়েছে। এখন কি আর করার, ক্ষতিপুরণ তো চাইতে পারবো না, জমির আলী ও তার দালাল ছেলের এই এলাকায় অনেক প্রভাব রয়েছে। এর জন্য হয়তো কোনদিন ওদের বিচারও হবে না।
শিপন বলেন ‘আমাকে বড় জাহাজে করে পাঠানোর কথা ছিলো, সে শর্তে টাকা দিয়েছিলাম। কিন্তু আমার মতো আরও ৭৩জনকে নিয়ে একটা ছোট নৌকায় উঠিয়ে দিলো দালালরা। এটা এতোই ছোট ছিলো যে তাদের পরিকল্পনা ছিলো আমরা যেনো সাগরের মাঝখানে ডুবে যাই। কিন্তু আল্লাহ রক্ষা করেছেন। প্রত্যেকটা দিন আমরা চিৎকার করে কাঁদতাম, কিন্তু এই কান্না শোনার মতো কেউ ছিলো না। সহায়-সম্পদ সব হারিয়ে গেলেও নিজেদের ছেলে ফিরে আসায় হৃদয় খুশিতে ভরে উঠেছে বাবা হেলাল মিয়া ও মা মিনারা বেগমের। তবে তারা সরকারের কাছে এই দালাল চক্রের দৃষ্টান্তমুলক বিচার দাবি করেন।
শিপনের মা মিনারা বেগম বলেন ‘আমার সব বিক্রি কইরা, জমি বন্ধক দিয়া ছেলেরে বিদেশে পাঠাইতাম চাইসি, এতো টাকা নিয়া গেছে, আমারে ঠকাইসে, এই ঘটনায় আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার চাই। শিপনের পরিবার বর্তমানে চরম আর্থিক সংকটে পড়েছে।