সিলেটজুড়ে বন্যার আশঙ্কা
প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ জুন ২০১৯, ১:১২ পূর্বাহ্ণ
নাসির উদ্দিন:
আষাঢ়ের বৃষ্টিতে আগাম বন্যার পদধ্বনি সিলেটে। গত চারদিনের বৃষ্টিতে প্রভাব পড়েছে জনজীবনে। মুষলধারে, কখনো থেমে থেমে চলা বৃষ্টি হচ্ছে।
বিশেষ করে ভারতের আসাম-মেঘালয়ে প্রতিদিন ভারি বর্ষণে সৃষ্ট পাহাড়ি ঢলে সিলেটের নদ-নদীর পানি বেড়েই চলছে। একে একে সিলেটের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় আগাম বন্যার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এরইমধ্যে দু’টি নদীর পানি বিপদ সীমার ওপরে রয়েছে।
সিলেটের কানাইঘাটে সুরমা নদীর পানি বিপদ সীমার দশমিক ৬৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহমান রয়েছে। এ নদীর ডেঞ্জার লেভেল ১২ দশমিক ২৫ সেন্টিমিটার হলেও শুক্রবার বিকেল ৩টায় ১২ দশমিক ৯০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিলো। দুপুর সাড়ে ১২টায় সিলেটের সারি নদীর পানি বিপদ সীমার দশমিক ৫৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহমান রয়েছে। এ নদীর বিপদ সীমা (ডেঞ্জার লেভেল) ১১ দশমিক ৭৫ থাকলেও বর্তমানে ১২ দশমিক ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহমান ছিল বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের সহকারী প্রকৌশলী একেএম পাশা।
তিনি জানান, গত কয়েকদিন ধরে সুরমা, কুশিয়ারা, সারি নদীর পানি বেড়েছে। এরমধ্যে সুরমা ও সারি নদীর পানি বিপদ সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সিলেট পয়েন্টে সুরমার পানি ডেঞ্জার লেভেলের কিছুটা নিচে অবস্থান করছে। এই পয়েন্টে ডেঞ্জার লেভেল ১০ দশমিক ১৫ হলেও পানি প্রবাহমান হচ্ছে ৯ দশমিক ৯৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে।
এছাড়া জকিগঞ্জ উপজেলার অমলসীদে কুশিয়ারা নদীর পানি ১৩ দশমিক ৯২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ওই স্থানে নদীর পানির ডেঞ্জার লেভেল ১৪ দশমিক ৯৫ সেন্টিমিটার। আর সুনামগঞ্জের সুরমা নদীর পানি বিপদ সীমার ৬৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সিলেটের আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী বলেন, উজানে বৃষ্টিপাত হওয়াতে মেঘালয়ের পানি পিয়াইন ও সারি নদী দিয়ে প্রবাহিত হয়। আসামে হওয়া টানা বৃষ্টিতে উজানের ঢল সুরমা-কুশিয়ারা দিয়ে প্রবাহিত হয়। এ বৃষ্টি সিলেট ও সুনামগঞ্জে সরাসরি প্রভাব ফেলে।
তিনি বলেন, আষাঢ় মাসে সিলেটে গত মৌসুমে ৮১৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। গত তিনদিন আগেও মঙ্গলবার (২৫ জুন) পর্যন্ত এ মৌসুমে বৃষ্টির পরিমাণ রেকর্ড করা হয় ৪৪৬ মিলিমিটার। যা গত বছর থেকে প্রায় ৫০ শতাংশ কম। আর এ কয়েকদিনে অতি বৃষ্টি হওয়ায় গত বছরের রেকর্ড করা বৃষ্টিকে স্পর্শ করছে। কিন্তু স্বল্প সময়ে অতি বৃষ্টি হওয়াতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে জনজীবনে প্রভাব ফেলছে।
তিনি আরো বলেন, মেঘালয় ও আসামে গত তিনদিন ধরে গড়ে প্রতিদিন অন্তত ১৪০/১৫০ মিলিমিটার করে বৃষ্টিপাত হয়েছে। আগামী কয়েকদিন উজানে আরো ভারি বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে।
এছাড়া সিলেটে শনিবার (২৯ জুন) দুপুরে আবহাওয়া কিছুটা ভালো থাকবে। এরপর বিকেলে ও রাতে এবং পরের দিন বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এরপর সোমবার (১ জুলাই) তাপমাত্রা বাড়বে এবং পরদিন মঙ্গলবার (২ জুলাই) বৃষ্টিপাত হবে এবং তাপমাত্রা কমে আসবে।
শুক্রবার (২৮ জুন) সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৮২ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিলেটের আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা মনন্ত বিশ্বাস। এর আগে, দুপুর ১২টা পর্যন্ত রেকর্ড করা হয়েছিল ৭২ দশমিক ৪ মিলিমিটার।
আগের দিন বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) রেকর্ড করা হয় ৭৩ মিলিমিটার, বুধবার (২৬ জুন) ১০৮ ও মঙ্গলবার (২৫ জুন) ৮৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যার পূর্বাভাস দিয়ে জানিয়েছেন দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও সীমান্তবর্তী ভারতের আসাম এবং মেঘালয় প্রদেশে আগামী ৪৮ ঘণ্টায় ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এতে সুরমা, কুশিয়ারা, সারি-গোয়াইন, সোমেশ্বরী, ভুগাই, কংস, যাদুকাটা নদীর পানি আগামী ৪৮ ঘণ্টায় আরো দ্রুত বাড়বে। এতে সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার নিম্নাঞ্চলে স্বল্প মেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।