ইউরোপ যাত্রার স্বপ্নভঙ্গ : সাগরে এখনো নিখোঁজ বিয়ানীবাজারের সুজন
প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ মে ২০১৯, ৮:২৮ অপরাহ্ণ
নিজস্ব প্রতিবেদক,বিয়ানীবাজার:
ইউরোপ যাত্রার স্বপ্নে লিবিয়া হতে ইতালি যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগরের তিউনিসিয়া উপকূলে নৌকাডুবিতে নিখোজদের মধ্যে বিয়ানীবাজারের আব্দুল হালিম সুজন (৩৫) নামের এক যুবক নিখোঁজ রয়েছেন। নিখোঁজ সাহেদ আহমদ খান উপজেলার মুড়িয়া ইউনিয়নের বড়উধা মাইজকাপন গ্রামের মৃত মাহমুদ আলীর পুত্র। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন নিখোঁজ আব্দুল হালিম সুজনের বড়ভাই আব্দুল আলিম।
নিখোঁজ সুজনের বড়ভাই আব্দুল আলিম এ প্রতিবেদককে জানান, সুজন দেশে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতো। মা-বাবাহীন পরিবারের চার ভাই ও এক বোনের সংসারের হাল ধরতে ইউরোপে যাবার স্বপ্নে বিভোর ছিল। পার্শ্ববর্তী বড়লেখা উপজেলার গোয়ালি এলাকার শাহিন আহমদ ও গোলাপগঞ্জ উপজেলার এলাকার পারভেজ আহমদ নামের এক দালালের সাথে ৯ লাখ ৮৩ হাজার টাকার বিনিময়ে প্রায় ১ বছর পুর্বে ইতালি যাবার জন্য চুক্তি হয়েছিল।
দীর্ঘদিন লিবিয়াতে অবস্থান করার পর গত বৃহস্পতিবার (৯ মে) সমুদ্র পথে ইতালি যাবার জন্য ট্রলারে চড়ে। ট্রলারে চড়ার পূর্বে সুজন বাড়িতে সর্বশেষ যোগাযোগ করেছে বলে জানান সুজনের বড়ভাই আব্দুল আলিম। নৌকাডুবির ঘটনা জানার পর থেকে আমার পরিবার-পরিজনদের মধ্যে দুঃসংবাদের শঙ্কা কাজ করছে। কেননা ট্রলারে চড়ার পর থেকে এখনো বাড়িতে সে যোগাযোগ করেনি। ভাইয়ের খোঁজ নেয়ার জন্য পরে ভূমধ্যসাগরের তিউনিসিয়া উপকূলে নৌকাডুবি্র ঘটনার খোঁজ নিতে দালালের সাথে সর্বশেষ যোগাযোগ করলে পারভেজ নামের ঐ দালাল জানান, আমরা সুজনকে ইতালিগামি ট্রলারে তুলে দিয়েছি। তবে এখন সে পৌছে কি না জানার জন্য দুই দালালের মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে তাদের সংযোগ বন্ধ পাওয়া যায়।
গত শুক্রবার (১০ মে) সকালে ভূমধ্যসাগরের তিউনিসিয়া সমুদ্র উপকূলে শতাধিক অভিবাসী বহন করা নৌকাটি ডুবে গেলে প্রায় ৬০ জন নিহত হয়েছেন। স্বপ্নের ইউরোপে পাড়ি জমাতে ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবির ঘটনায় ফেঞ্চুগঞ্জের চার ও গোলাপগঞ্জের দুই তরুণের প্রাণহানি ঘটেছে। এ ঘটনায় বিয়ানীবাজার উপজেলার চারখাই ইউনিয়নের কচকট খা গ্রামের সাহেম আহমদ খান নামের আরেক নিখোঁজ ছিলেন। পরবর্তীতে গত রবিবার সাহেদ আহমদ খান তিউনিসিয়ার সরকারি ক্যাম্প থেকে মুঠোফোনে পরিবারের সাথে কথা বলে সুস্থ রয়েছেন বলেন অবগত করেন। এছাড়াও বিয়ানীবাজার উপজেলার রফিক ও রিপন নামের আরোও দুই তরুণ নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে তাদের নিখোঁজের সত্যতা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এ ঘটনার ৬ সিলেটী যুবক নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। তারা হলেন- উপজেলার সেনেরবাজার কটালপুর এলাকার মুহিদপুর গ্রামের মন্টু মিয়ার ছেলে আহমদ হোসেন (২৪), একই গ্রামের হারুন মিয়ার ছেলে আব্দুল আজিজ (২৫), সিরাজ মিয়ার ছেলে লিটন মিয়া (২৪), দিনপুর গ্রামের আফজাল (২৫), সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শাহরিয়ার আলম সামাদের ছোট ভাই, কুলাউড়ার ভুকশিমাইলের আহসান হাবিব শামীম (২৬) এবং গোলাপগঞ্জের শরীফগঞ্জ ইউনিয়নের কদুপুর গ্রামের ইয়াকুব আলীর ছোট ছেলে কামরান আহমদ মারুফ। বেঁচে যাওয়া লোকজন তিউনিসিয়ার রেড ক্রিসেন্টকে জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার গভীর রাতে লিবিয়ার উপকূল থেকে ৭৫ জন অভিবাসী একটি বড় নৌকায় করে ইতালির উদ্দেশে রওয়ানা হন।
তিউনিসিয়ার রেড ক্রিসেন্ট কর্মকর্তা মঙ্গি স্লিমকে উদ্ধৃত করে বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, রাবারের তৈরি ‘ইনফ্লেটেবেল’ নৌকাটি ১০ মিনিটের মধ্যে ডুবে যায়। তিউনিসিয়ার জেলেরা ১৬ জনকে উদ্ধার করে শনিবার সকালে জারযিজ শহরের তীরে নিয়ে আসে। উদ্ধার হওয়া ১৬ জনের ১৪ জনই বাংলাদেশি। উদ্ধার হওয়া অভিবাসীরা জানান, ঠাণ্ডা সাগরের পানিতে তারা প্রায় আট ঘণ্টা ভেসে ছিলেন।