সিলেটে আকাশছোঁয়া ভবন: দুর্যোগের আশঙ্কা, বাড়ছে মৃত্যুর ঝুঁকি
প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ মে ২০১৯, ১:৩৯ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেটে দিন দিন বাড়ছে আকাশছোঁয়া ভবন তৈরির প্রতিযোগিতা। ভরাট হচ্ছে জলাধার। কেটে ফেলা হচ্ছে পাহাড় ও টিলা। এতে বাড়ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশঙ্কা। বিশেষ করে দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চল সিলেট ভূমিকম্প প্রবণ হওয়াতে ক্ষয়-ক্ষতির শঙ্কাও রয়েছে বেশি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ডাউকি ফল্টের কারণে ডেঞ্জার জোনে সিলেটের অবস্থান। আর অপরিকল্পিত নগরায়নে সিলেটে যে হারে বহুতল ভবন হচ্ছে, সে জন্য মাত্র চার থেকে পাঁচ মাত্রার ভূমিকম্প হলেই বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটতে পারে সিলেটে। মানচিত্রে দৃশ্যপট পরিবর্তন হতে পারে!
ফরাসি ইঞ্জিনিয়ারিং কনসোর্টিয়াম ১৯৯৮-এর জরিপ অনুযায়ী ‘সিলেট অঞ্চল’ ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে সক্রিয় ভূকম্পন এলাকা হিসাবে চিহ্নিত হয়ে আসছে।
সিলেট সিটিতে অপরিকল্পিত নগরায়ন, নীতিমালা না মেনে ভবন নির্মাণসহ নানা কারণে বড় ভূমিকম্পে বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটতে পারে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
আবহাওয়া অধিদপ্তর সিলেটের আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরীর মতে, রিখটার স্কেলে চার থেকে পাঁচ মাত্রার ভূমিকম্প হলে সিলেটের অধিকাংশ ভবন ধসে পড়বে। প্রাণ হারাবে অনেক মানুষ। ক্ষতি হবে কয়েক হাজার কোটি টাকা।
তিনি আরও বলেন, ভূমিকম্পের বিষয়টা উৎপত্তিস্থলের ওপর নির্ভর করে। ডাউকির যে জায়গায় ১৮৯৭ সালে বড় ভূমিকম্প হয়েছিলো সেখানে এখনও ফল্ট রয়েছে। সেই স্থান অথবা তার আশপাশের উত্তর, পূর্ব, পশ্চিম যেকোনো জায়গা থেকে ভূমিকম্পের উৎপত্তি হলে মারাত্মক বিপদের সম্মুখীন হবে সিলেট।
সিসিকের প্রধান প্রৌকশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, ৫৩ হাজার ছোট-বড় ভবন ও ১৫৩টি মেডিকেল ও ক্লিনিক রয়েছে। তবে ভূমিকম্প বা বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ড হলে তা মোকাবেলায় কোনও পদক্ষেপ নেই ভবনগুলোতে। এমনকি ভবনগুলিতে নেই অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা, ইমার্জেন্সি সিঁড়ি, ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা ও ফায়ার সেফটিক প¬্যান। তবে এ বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক জাবেদ হোসেন বলেন, মহানগরীতে উঁচু ভবন রয়েছে ২৫০টি। এর মধ্যে অনুমতি নিয়েছে ১৬০টি। সিলেট বিভাগ মারাত্মক ভূমিকম্প ঝুঁকির মধ্যে থাকলেও তাৎক্ষণিক উদ্ধার কাজ চালানোর জন্য কোনও আধুনিক যন্ত্রপাতি নেই। একই অবস্থা অগ্নি নির্বাপণের ক্ষেত্রেও। ভূমিকম্প ও আগুনের কথা মাথায় রেখে এখনই আমাদের ব্যবস্থা নিতে হবে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সিলেটের অধিকাংশ বাণিজ্যিক ভবনই অপরিকল্পিত এবং ঝুঁকিপূর্ণ। রিখটার স্কেলে সাত বা তার চেয়ে বেশি মাত্রার ভূমিকম্প হলে অধিকাংশ ভবনই ভেঙে পড়বে। অপরিকল্পিত বাসাবাড়ি নির্মাণের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হবে নগরীর শাহজালাল উপ-শহর, আখালিয়া, বাগবাড়ি, মদিনা মার্কেট প্রভৃতি এলাকা। বাণিজ্যিক ভবন ও ইমারতের পাশাপাশি নগরীতে অপরিকল্পিত ও ঝুঁকিপূর্ণ অনেকগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। তাছাড়া নগরীর ২৩টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করেছে সিটি করপোরেশন।
এ ব্যাপারে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, সিটি করপোরেশনের অনুমোদিত নকশা অনুযায়ী যারা ভবন নির্মাণ করেননি তাদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করা হয়েছে। প্রয়োজন হলে ভবন ভেঙে দেওয়া হবে।
ভূমিকম্প বিষয়ক বিভিন্ন প্রকাশনা থেকে জানা যায়, ভূমিকম্পের মাত্রা অনুসারে বাংলাদেশ তিনটি ভূকম্পন বলয়ে বিভক্ত। এর মধ্যে এক নম্বর বলয়ে রিখটার স্কেলে সাত থেকে নয় বা তার অধিক মাত্রার ভূমিকম্প হতে পারে। আর এই এক নম্বর বলয়েই সিলেটের অবস্থান। এই বলয়ে আরও রয়েছে ময়মনসিংহ ও রংপুর।