চা উৎপাদনে আবারও রেকর্ডের সম্ভাবনা
প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ এপ্রিল ২০১৯, ৫:৪৪ অপরাহ্ণ
তোফায়েল পাপ্পু:
অনুকূল আবহাওয়া ও অগ্রিম বৃষ্টিপাতে সতেজ হয়ে উঠছে মৌলভীবাজারের চা-বাগানগুলো। কচি পাতার সবুজ রঙে বদলে গেছে বাগানের দৃশ্য। চা-পাতা তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন চা-শ্রমিকরা। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে রেকর্ড পরিমাণ চায়ের উৎপাদন আশা করছেন বাগান মালিকরা।
মৌলভীবাজারের বিভিন্ন এলাকাজুড়ে যতদূর চোখ যায় কেবল সবুজ আর সবুজ। অনুকূল আবহাওয়া ও অগ্রিম বৃষ্টিপাতে বদলে গেছে চা-বাগানের দৃশ্য। কচি পাতায় রঙ লেগে পরিণত হয়েছে সবুজ গালিচায়। এতে কর্মব্যস্ততা বেড়েছে চা-শ্রমিকদের। বাগানে বাগানে দলবেঁধে চা-পাতা সংগ্রহ করছেন তারা। বাগান থেকে চা-পাতা সংগ্রহের পর সরাসরি নিয়ে যাওয়া হয় ফ্যাক্টরিতে। সেখানে বাছাই করে প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে তৈরি হয় চা।
বাগান মালিক ও সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন ‘অন্য বছরের তুলনায় এই বছরের শুরুতে পর্যাপ্ত পরিমাণে বৃষ্টিপাত হয়েছে। যার ফলে এই বছরে কচি-পাতার সবুজ রঙে বদলে গেছে বাগানের দৃশ্য।
এদিকে চলতি বছরে মৌসুমের প্রথম থেকে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চা উৎপাদনে আবারও রেকর্ডের সম্ভাবনা দেখছেন ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্টরা। গত বছরে মৌসুমের শুরুতে (ফেব্রুয়ারি-মার্চ, ২০১৮) অনাবৃষ্টির কারণে চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে বেশ শঙ্কিত ছিলেন চা ব্যবসায়ীরা। এবার মৌসুমের শুরুতেই বৃষ্টিপাত হওয়ায় রেকর্ড পরিমাণ চা উৎপাদনে উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
দেশে সবমিলিয়ে ১৬৬টি চা বাগান রয়েছে। এরমধ্যে মৌলভীবাজার জেলায় শুধু ৯৩টি চা বাগান আছে।
বাংলাদেশ চা বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালে দেশের ১৬৬টি বাগানে চা উৎপাদন হয়েছে আট কোটি ২১ লাখ কেজি। আগের বছর ২০১৭ সালে উৎপাদন হয়েছিল সাত কোটি ৮৯ লাখ কেজি।
২০১৬ সালের মোট উৎপাদন ছিল আট কোটি ৫০ লাখ ৫০ হাজার কেজি। তখন বছরজুড়ে চা চাষের অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ বজায় ছিল। গত তিন বছর চায়ের গড় উৎপাদন ছিল আট কোটি ২০ লাখ কেজি। ২০১৮ সালে দেশে চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় সাত কোটি ২৩ লাখ ৯০ হাজার কেজি। গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত (৯ মাসে) দেশে সব মিলিয়ে ৬ কোটি ৬৭ লাখ ৩১ হাজার কেজি চা উৎপাদন হয়। যার কারণ সিলেট ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে চা চাষের উপযোগী সুষম বৃষ্টি হওয়ায় বছর শেষে চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যায়। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৮৯ লাখ কেজি চা বেশি উৎপাদন হয়।
চা বাগান ম্যানাজার গোলাম শিবলী বলেন, ‘ভারতে থেকে নিম্নমানের চা আমদানি করায় দেশে চায়ের বাজারে বাংলাদেশি চায়ের সুনাম ক্ষন্ন হচ্ছে। সেদিকে সরকারের সু-নজর থাকলে আমাদের চায়ের গুণগতমান ধরে রাখা সম্ভব।’
চা বাগানের শ্রমিক কানু লাল ও সুনিতা বাড়ই বলেন, অন্য বছর এই সময়ে দুই কেজি চা উত্তোলন করা কঠিন হতো। বৃষ্টিপাত হওয়ায় এবার আমরা পাঁচ কেজি চা পাতা উত্তোলন করতে পারছি।’
বিটিআরআই চা বাগানের টি টেকনোলোজি ডিভিশনের সিনিয়র টি মেকার মো. আমির আলী জানান, এবছর মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টিপাত হওয়ায় চা গাছগুলোতে কুড়ি আসতে শুরু করেছে। আশা করা যাচ্ছে এবার চায়ের লক্ষমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। চা পাতা থেকে চা প্রক্রিয়াজাতকরনে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।
শ্রীমঙ্গলে চা বোর্ডের প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিট (পিডিইউ) সূত্র জানায়, চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিটিআরআই) বিভিন্ন উপকেন্দ্রে ক্ষুদ্র পর্যায়ে চা চাষিদের জন্য ক্ষুদ্রায়তন চা আবাদ, প্লাকিং, রোগবালাই ও পোকামাকড় দমন বিষয়ে এবং দেশের চা বাগানগুলোর ব্যবস্থাপক ও সহকারী ব্যবস্থাপকদের দক্ষতা উন্নয়নে নিয়মিত প্রশিক্ষণ নিয়মিত চলছে। আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে। প্রতিকূল আবহাওয়া কাটিয়ে চা উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হবে।’