সিলেটে ভাসমান সবজি ও মসলা চাষে কৃষকদের ব্যাপক সাড়া
প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ এপ্রিল ২০১৯, ৫:০৯ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
সিলেটে ভাসমান বেডে সবজি ও মসলা চাষে কৃষকরা এগিয়ে এসেছে। ব্যাতিক্রমী পদ্ধতিতে সহজে সবজি ও মসলা উৎপাদনে আর্থিক ভাবে লাভবান হওয়ায় এ পদ্ধতি কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। প্রচলিত ভাসমান কৃষি পদ্ধতিতে সবজি ও মসলা চাষের জন্য স্থানীয় ও কম ফলনশীল জাতের বীজের ব্যবহার করা হয়। একইসঙ্গে এগুলোর চারা উৎপাদন করা হয়। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) ‘ভাসমান বেডে সবজি ও মসলা চাষে গবেষণা, সম্প্রসারণ ও জনপ্রিয়করণ’ শীর্ষক এক প্রকল্পের উদ্যোগ নেয়, যা বাস্তবায়ন করবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর।
ভাসমান বেডে সবজি ও মসলা চাষের সম্পূর্ণ অর্থায়ন যৌথভাবে রাংলাদেশ রাইস গবেষণা ইনস্টিটিউশন ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর থেকে দেয়া হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মেয়াদকাল ধরা হয়েছে ২০২২ সাল পর্যন্ত। ১৩টি জেলার ২৫টি উপজেলায় দুই পর্যায়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।
প্রথম পর্যায়ে গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, কিশোরগঞ্জ, বরিশাল বিভাগের বরিশাল সদর ও পিরোজপুর, খলনা বিভাগের খুলনা ও বাগেরহাট, চট্টগ্রামের ব্রাহ্মণবাড়িয়া, লক্ষীপুর ও নোয়াখালী এবং সিলেট বিভাগের সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।
দ্বিতীয় পর্যায়ে গোপালগঞ্জ, মাদরীপুর, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, যশোর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, সিলেট, হবিগঞ্জ, নাটোর, রংপুর, গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে আমাদের কৃষি খাত। এরই মধ্যে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। ওইসব অঞ্চলের মাটি ও পানিতে লবণাক্ততার অনুপ্রবেশ ঘটেছে। এছাড়া জলমগ্নতা, উপকূলীয় অঞ্চলে বন্যা এবং একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ লেগেই আছে।
জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবে অনিয়মিত বৃষ্টিপাতের কারণে দীর্ঘ সময়ের জন্য অনেক স্থান জলমগ্ন হয়ে পড়ছে। হাওর এলাকায় আকস্মিক বন্যায় প্রায় সময় বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে স্থানভিত্তিক সৃজনশীল কৃষিপ্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং এর সম্প্রসারণ অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।
ইতোমধ্যে ভাসমান পদ্ধতি ব্যবহার করে অনেক কৃষক ফসল উৎপাদন শুরু করেছেন। এ পদ্ধতিতে তারা সফলতাও দেখিয়েছেন। ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি ও মসলা চাষের জন্য স্থানীয় ও কম ফলনশীল জাতের বীজের ব্যবহার হচ্ছে। একই সঙ্গে এ পদ্ধতিতে চারা উৎপাদনও করা হচ্ছে।
বিগত বছর সিলেটের গোলাপগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় জলজ উদ্ভিদ কচুরিপানার ধাপে ভাসমান সবজি ও মসলা চাষের মাধ্যমে কৃষকরা জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় প্রস্তুতি নেন। ওই পদ্ধতিতে বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা করে লাভের মুখ দেখেন স্থানীয় কৃষকরা।
সরেজমিন গবেষণা বিভাগ সিলেট সূত্রে জানা যায়, ওই প্রকল্পের আওতায় গোলাপগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জে ১০টি গ্রামে ভাসমান ধাপে মসলা ও সবজির চাষ করা হয়। দুই উপজেলায় অন্তত ৪০টি কৃষক পরিবার ৫০ থেকে ৭০ ফুট দৈর্ঘ্যের প্রায় পাঁচ হাজার ধাপ তৈরি করে ঢেঁড়স, গিমাকলমী, পুঁইশাক, বরবটি, শশা, করলা, বাঙ্গি, হলুদ, লালশাক ও ডাঁটাশাক আবাদ করেন।
ভাসমান বেডে সবজি ও মসলা চাষ প্রসঙ্গে সরেজমিন গবেষণা বিভাগ সিলেটের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মাহমুদুল ইসলাম নজরুল বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে নিম্নাঞ্চলের কৃষকদের কচুরিপানা দিয়ে ভাসমান সবজি চাষ একটি চমৎকার সমাধান। এ পদ্ধতিতে সবজি ও মসলার উৎপাদন প্রায় পাঁচ থেকে ছয়গুণ বৃদ্ধি করা সম্ভব।
তিনি আরো জানান, ভাসমান বেডে মসলা ও সবজি চাষ করে সফল হয়েছেন দেশের অনেক কৃষক। উৎপাদিত সবজি বাজারে বিক্রি করে ইতোমধ্যে অর্থ উপার্জনও করেছেন তারা। বর্তমানে ভাসমান বেড স্থাপন করা হচ্ছে কচুরিপানা দিয়ে ধাপ বানিয়ে। সেই ধাপের ওপর ঝিংগা, চিচিঙ্গা, মিষ্টি কুমড়া, মিষ্টি লাউ, শশা, বরবটি, লালশাক, পুঁইশাক, ডাটাশাক, গিমাকলমি, ঢেঁড়শ, সীম, লতিরাজ কচু, লাউ, হলুদ প্রভৃতি সবজি চাষ করা হচ্ছে।