গ্যাসফিল্ড এমডির ঝুলন্ত লাশে সিলেটজুড়ে তোলপাড়, নানা রহস্য
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ এপ্রিল ২০১৯, ১২:২৯ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজ :
আগে পেট্রোবাংলায় চাকরি করতেন। গত বছরের ৮ই এপ্রিল তাকে সিলেট গ্যাসফিল্ড লিমিটেডের এমডি নিয়োগ দেয়া হয়। ১০ই এপ্রিল তিনি সিলেটে যোগ দেন। সিলেটে চাকরির মেয়াদ ঠিক এক বছর পূর্ণ হওয়ার দিনই লাশ হলেন সিলেট গ্যাস ফিল্ড লিমিটেডের এমডি প্রকৌশলী মো. লুৎফুর রহমান। গতকাল বিকালে গ্যাসফিল্ডের বাংলোয় নিজের শয়নকক্ষ থেকে তার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর তোলপাড় চলছে সিলেটে। কেউ কেউ ঘটনাটিকে রহস্যময় বলে জানিয়েছেন। পুলিশ বলছে- তারা ঘটনাটিকে গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করছে।
এ কারণে সকাল ৯টায় ঝুলন্ত লাশের সন্ধান মিললেও প্রথমে থানা পুলিশ এবং পরে সিআইডি’র ক্রাইমজোনের পক্ষ থেকে লাশকে ঘিরে বিশদ তদন্ত চালানো হয়েছে। বিকাল সোয়া ৪টায় পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে। সিলেটের জৈন্তাপুরের হরিপুর এলাকায় সিলেট গ্যাসফিল্ড লিমিটেডের প্রশাসনিক ও আবাসিক এলাকা। সিলেট থেকে জৈন্তাপুর যাওয়ার পথে ডানদিকে বাংলো ও আর বাম দিকে প্রশাসনিক ভবনের অবস্থান। প্রশাসনিক ভবন থেকে খুব বেশি দূরে নয় এমডি’র বাংলো। ওই বাংলোর প্রধান ফটকে দু’জন পাহারাদার সব সময় সিকিউরিটির দায়িত্বে থাকেন। সিকিউরিটি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গতকাল সকাল ৭টার দিকে তারা গ্যাসফিল্ডের ব্যবস্থাপক লুৎফুর রহমানকে দেখেছেন। ঢাকা থেকে পেট্রোবাংলার দু’জন কর্মকর্তাকে বিদায় দিয়েছেন তিনি। ওই দুই কর্মকর্তা মঙ্গলবার গ্যাসফিল্ডে এসেছিলেন। তারা সকালের দিকে ঢাকায় চলে গেছেন। রাতে তারা ছিলেন এমডির বাংলোতে। সকালে তাদের বিদায় জানাতে তিনি বের হন। এ সময় লুৎফুর রহমানকে দেখেছেন নিরাপত্তা কর্মকর্তারা। দুই অতিথিকে বিদায় দিয়ে ঘরে ফিরে যান তিনি। সকাল ৯টার দিকে এমডির ব্যক্তিগত গাড়ি চালক নিতাই মনি প্রতিদিনের মতো এমডির বাংলোতে আসেন। দেখেন বাংলোর দরোজা ভেতর থেকে আটকানো। তিনি এ সময় দরোজার সামনে দাঁড়িয়ে এমডি লুৎফুর রহমানকে ডাকাডাকি করেন। কোনো সাড়া না পেয়ে তিনি বিষয়টি গ্যাসফিল্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানান। এই ফাঁকে বাংলোর এক পাশ থেকে নিতাই মনি দেখেন শয়নকক্ষের ভেতরে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে এমডি লুৎফুর রহমানের লাশ ঝুলছে। এ দৃশ্য দেখে তিনি চিৎকার শুরু করলে আশেপাশের লোকজন আসেন। তারা এসেও দৃশ্যটি দেখেন। পরে তারা পুলিশকেও খবর দেন। খবর পেয়ে জৈন্তাপুর থানার ওসি মাইনুল জাকিরসহ সিনিয়র কর্মকর্তারা আসেন। সিলেট থেকে ঘটনাস্থলে যান জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মাহবুবুল আলম। তারা ঘটনাস্থলে গেলেও লাশ উদ্ধার করেননি। ডেকে পাঠান সিআইডির ক্রাইম জোনকে। দুপুরের দিকে সিআইডির ক্রাইমজোনের কর্মকর্তারা সেখানে যান। তারা গিয়ে ঘটনাস্থল পর্যবেক্ষণ করেন এবং বেশকিছু আলামত সংগ্রহ করেন। এরপরও বিকাল সোয়া ৪টার দিকে তার লাশ উদ্ধার করে গ্যাসফিল্ডের অ্যাম্বুলেন্সযোগে ময়নাতদন্তের জন্য সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। গ্যাসফিল্ড সূত্র জানিয়েছে, প্রকৌশলী মো. লুৎফুর রহমান ময়মনসিংহ জেলার বাসিন্দা। তার স্ত্রীসহ ১ ছেলে ও ১ মেয়ে রয়েছে। স্ত্রী সন্তানরা ঢাকায় বসবাস করেন। তিনি ২০১৮ সালের ৮ই এপ্রিল সিলেট গ্যাসফিল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে নিয়োগ পান। আর যোগদান করেন ১০ই এপ্রিল। এদিকে লাশ উদ্ধারের খবর পেয়ে জৈন্তাপুরের নবনির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যানসহ জনপ্রতিনিধিরাও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তারা জানান, ঘটনাস্থল হচ্ছে গ্যাসফিল্ডের সংরক্ষিত এলাকা। এখানে বাইরে লোকজন ঢুকতে পারেননি। ঘটনাটি আত্মহত্যা না হত্যা বিষয়টি পুলিশি তদন্তে বেরিয়ে আসবে বলে জানান তারা। সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) মো. মাহবুবুল আলম সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ঘটনার সংবাদ পেয়ে দ্রুত চলে আসি এবং ঘটনার পারিপার্শ্বিক বিষয় পর্যালোচনা করে অধিকতর তদন্তের জন্য সিআইডি বিশেষ টিমকে খবর দেয়া হয়েছে। তারা এসে ক্রাইম সিন সংগ্রহ করেছে। এরপর লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়। এবিষয়ে সিলেট গ্যাসফিল্ডের কর্মকর্তা মো. হেলাল আহমদ জানান- ‘সংবাদ পেয়ে আমরা দ্রুত চলে আসি। বিষয়টি দেখে আমরা হতভম্ব হয়ে পড়ি।’ এদিকে লাশ উদ্ধারের খবর পেয়ে প্রকৌশলী লুৎফুর রহমানের স্বজনরা সিলেটে এসে পৌঁছেছেন।