মৌলভীবাজার কারাগারের অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিকার হয়নি দীর্ঘদিনেও
প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ মার্চ ২০১৯, ৮:০৮ অপরাহ্ণ
মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:
মৌলভীবাজার জেলা কারা ডিপার্টমেন্টাল ষ্টোরে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন লঙ্ঘনের প্রতিকার হয়নি দীর্ঘদিনেও। জাতীয় থোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মৌলভীবাজার অফিসে দায়েরী এ সংক্রান্ত অভিযোগের প্রতিকার তো দূরের কথা, কারা কর্তৃপক্ষ বার বার সময় নেয়ার কারণে শুনানীই শেষ হয়নি এখনও। আজ ২৮ মার্চ আবারও শুনানীর ধার্য্য তারিখে কারা কর্তৃপক্ষ শুনানী করবে কি-না তা অনিশ্চিত। এর আগে অভিযোগ শুনানীর আরও ৩টি ধার্য্য তারিখেই অভিযুক্ত কারা কর্তৃপক্ষ ভিবিন্ন অজুহাত থাকায় শুনানী অনুষ্ঠিত হতে পারেনি।
জানা গেছে- মৌলভীবাজারে কারাবন্দীদের স্বজনদেরকে দ্বিগুণ মূল্যে কারা ডিপার্টমেন্টাল ষ্টোরের পণ্য ক্রয়ে বাধ্য করছে মৌলভীবাজার জেলা কারা কর্তৃপক্ষ। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর মৌলভীবাজারে অভিযোগটি দায়ের করেন সাংবাদিক জিতু তালুকদার। অভিযোগে প্রকাশ- খোলা বাজারে প্রতি কেজি চিনির বাজারম‚ল্য ৪৮ থেকে ৫০ টাকা হলেও, প্রতিকেজি চিনি কিনতে হয় ৮০ টাকায়। প্রতিকেজি চিড়ার বাজারম‚ল্য ম‚ল্য ৩৫ থেকে ৪০ টাকা হলেও, কারা ডিপার্টমেন্টাল ষ্টোরে প্রতিকেজি চিড়া কিনতে হয় ৮০ টাকায়। পণ্যের গায়ে বা প্যাকেটে ৬০ টাকা মূল্য লেখা পণ্যটি কারা ডিপার্টমেন্টাল ষ্টোরে কিনতে হয় ৭০ থেকে ৮০ টাকায় এই ভাবে প্রত্যেকটি পণ্য দ্বিগুন মূল্য বিক্রি হচ্ছে।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে-মৌলভীবাজার জেলা কারাগারে প্রথম গেইটে একটি ডিপার্টমেন্টাল ষ্টোর রয়েছে এবং কারাগারের ভিতরে বন্দীদের জন্য একটি ডিপার্টমেন্টাল ষ্টোর রয়েছে। এ দুটি ডিপার্টমেন্টাল ষ্টোরই পরিচালনা করছেন কারা কর্তৃপক্ষ। কারা কর্তৃপক্ষের অলিখিত আইন অনুযায়ী- কারাবন্দীদের স্বজনদের বাহির থেকে ক্রয়কৃত কোন পণ্য কারাবন্দীদেরকে দেয়া যাবেনা। শুধুমাত্র কারা ডিপার্টমেন্টাল ষ্টোর থেকে ক্রয়কৃত পণ্যই কারাবন্দীদেরকে দেয়া যাবে। ফলে, কারাবন্দীদের স্বজনরা তাদের কারাবন্দী স্বজনদেরকে দেয়ার জন্য প্রায় দ্বিগুণ মূল্যে কারা ডিপার্টমেন্টাল ষ্টোর থেকে পণ্য ক্রয় করতে বাধ্য হচ্ছেন। এদিকে কারাগারের ভিতরেও রয়েছে অনুরুপ আরেকটি ডিপার্টমেন্টাল ষ্টোর। সেখানেও একইভাবে কারাবন্দীরা প্রায় দ্বিগুণ মূল্যে পণ্য ক্রয় করতে বাধ্য হচ্ছেন। নির্যাতন-হয়রানীর ভয়ে কারাবন্দীরা ও তাদের স্বজনরা এহেন অনিয়মের প্রতিবাদ করার সাহস পাননা। এভাবেই কারাবন্দীদেরকে ও তাদের স্বজনদেরকে জিম্মি করে বিপুল পরিমান অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন কারা কর্তৃপক্ষ। মৌলভীবাজার জেলা কারাগারে এ অবস্থা বিরাজ করছে দীর্ঘদিন যাবৎ।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায় কারাগারে বন্দীরা ঘুমানোর বেলায় ওর্য়াডে প্রত্যেককে ৫শ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা এবং কারা হাসপাতালে থাকার জন্য ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা দিতে হয়। বিকাশের মাধ্যমে কারাবন্দীদের স্বজনদেরকে এই টাকা পরিশোধ করতে হয়। গোসলের জন্য কারাবন্দীদেরকে বেধে দেয়া হয় মাত্র ১০ মিনিট সময়। এরপর পানি বন্ধ করে দেয়া হয়। এ ১০ মিনিটের মধ্যে ৮শ থেকে ১২শ কারাবন্দীর গোসল করা সম্ভব হয়না। যারা ওই সময়ের মধ্যে গোসল করতে পারেনা তারা পরর্বতিতে টাকার বিনিময়ে গোসল করতে হয়। গোসলের টাকা পরিশোধ করতে হয় বেনসন সিগারেট, লোশন ইত্যাদি প্রদানের মাধ্যমে। এছাড়া, বন্দীদেরকে দেয়া হয় নি¤œমানের খাবার। বাধ্য হয়ে অনেকে কারাগারের ভিতরের কেন্টিন থেকে খাবার ক্রয় করে খেতে হয়। কেন্টিন থেকেও খাবার ক্রয় করতে হয় প্রায় দ্বিগুন মূল্যে। কারাবন্দীদের সাথে তাদের স্বজনদের অফিস কল এর মাধ্যমে সাক্ষাতের ক্ষেত্রে প্রতি সাক্ষাতের জন্য আদায় করা হয় ৫শ টাকা। এভাবে প্রতিদিন কারাবন্দীদের স্বজনদের কাছ থেকে কারা কর্তৃপক্ষ হাতিয়ে নিচ্ছেন ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা- যা প্রতি মাসে সাড়ে ৪ থেকে ৬ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে প্রতি মাসে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা অবৈধভাবে অঅয় করছে কারা কর্তৃপক্ষ। জেলা প্রশাসক, জেলা জজ বা সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর্মকর্তা জেলা কারাগার পরিদর্শন করলেও পরবর্তী পরিণামের ভয়ে কেউ তাদের কাছে মুখ খোলার সাহস করতে পারেনা।