মৌলভীবাজারে ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে গরু চুরি, দুশ্চিন্তায় একজনের মৃত্যু!
প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ আগস্ট ২০১৭, ১০:১৪ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
আসন্ন কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ ও কুলাউড়ায় গরু চুরির হিড়িক পড়েছে। এসব উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গরু চোরের উপদ্রব বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষকরা আতংকগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন। গরু চোরের উপদ্রব থেকে রক্ষা পেতে কোথাও কোথাও কৃষকরা রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন। গত ১৫ দিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৩৪ টি গরু ও ২টি ছাগল চুরির ঘটনা ঘটেছে। ৬টি গরু চুরি হওয়ায় দুশ্চিন্তায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে নরেশ দেবনাথ নামে এক ব্যক্তির মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
জানা যায়, উপজেলার শ্রীসূর্য্য এলাকা থেকে ৩টি গরু, পতনঊষারের চাঁন মিয়ার ৩টি গরু, শ্রীরামপুর থেকে ৪টি, রাঙাটিলা গ্রামের সফিক মিয়ার ২টি, দেওছড়া চা বাগানের সিনাথ রবিদাসে ২টি গরু, রহিমপুর ইউনিয়নের সিদ্ধেশ্বরপুর গ্রামের নরেশ দেবনাথের বাড়ি থেকে ৬টি গরু, মাধবপুরের ধলাইপার গ্রামের তোফায়েল মিয়ার ২টি, মাধবপুর চা বাগানের জানকা চৌহানের একটি জার্সি গরু, কাটাবিল গ্রামের কাদির মিয়ার একটি গরু, উবাহাটা গ্রামের বিজয় পালের ১টি, ধাতাইল গ্রামের চন্দন মালাকারের ১টি ও কুলাউড়া উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের পাইকপাড়া গ্রামের বুলবুল আহমদের ৩টি, বালিয়াটিলা গ্রামের আব্দুল বাছিতের ২টি, শফিক মিয়ার ১টি গরু ও কমলগঞ্জ পৌর এলাকার এক নং ওয়ার্ড থেকে ২টি ছাগল চুরির ঘটনা ঘটেছে। ফলে প্রায় অর্ধ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছেন কৃষকরা। গরু চুরি হয়ে যাওয়ায় এসব পরিবার বর্তমানে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছে।
মুন্সিবাজার ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মোতালিব তরফদারসহ স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, সিদ্ধেশ্বরপুর গ্রামের নরেশ দেবনাথের একমাত্র সম্বল ৬টি গরু চুরি হওয়ায় দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি গত রবিবার রাতে মারা যান। এছাড়া ঈদকে সামনে রেখে উপজেলায় বিভিন্ন জায়গায় চুরি, ছিনতাই বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বুধবার রাতে মুন্সীবাজার ইউনিয়নের উবাহাটা গ্রামের সিএনজি অটোরিক্সা চালক বাবুল মল্লিকের ঘরের দরজা ভেঙে নগদ ১৬ হাজার টাকা, স্বর্ণ ও মোবাইল ফোনসহ প্রায় লক্ষাধিক টাকার মালামাল চুরি হয়। এ সময় গৃহকর্তা ঘুম থেকে জেগে উঠলে চোরচক্র একটি মোবাইল ফোন ফেলে পালিয়ে যায়।
পরে কমলগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) নজরুল ইসলাম ও এসআই আব্দুল হামিদ মোবাইল ফোন উদ্ধার করে নিয়ে যান। এছাড়া উবাহাটা ও ধাতাইলগাঁও গ্রামে একই রাতে আরও ছয়টি বাড়িতে চুরির চেষ্টা চালায় চোরচক্র।
আলাপকালে কৃষক তোয়াবুর রহমান, টিংকু দেবনাথ, জাকির হোসেন, সিনাথ রবিদাস বলেন, ‘অনেক কষ্টে লালন পালন করে গরু পালনের পর চুরি হয়ে যাওয়ায় চিন্তায় ফেলেছে। গরু চুরির পর অনেক খোঁজাখুঁজি করেও গরুর সন্ধান পাওয়া যায় না। থানায় অভিযোগ দিয়েও লাভ নেই। বোরো ও আউশ মৌসুমে বন্যায় ফসলের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় কৃষকরা এমনিতেই যে সংকটে পড়েছেন তা কাটিয়ে উঠা সম্ভব হচ্ছে না। তার উপরে সম্প্রতি সময়ে অব্যাহতহারে যে পরিমাণে কৃষকদের গরু চুরি হচ্ছে তাতে শেষ সম্বলটুকুও আরও নেই। ফলে মারাত্মকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে কৃষকদের।’
এব্যাপারে হাজীপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল বাছিত বাচ্ছু বলেন, ‘ঈদকে সামনে রেখে সাম্প্রতিক সময়ে গরু চুরি, সিঁদেল চুরি বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় গরু চুরির ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। গরু চুরি ঠেকাতে গ্রাম পুলিশ ও কমিউনিটি পুলিশ দিয়ে যৌথভাবে গ্রাম পাহারার ব্যবস্থা করতে হবে।’
কমলগঞ্জ থানার এসআই আব্দুল হামিদ বলেন, ‘গরু চুরির বিষয়ে থানায় কোন অভিযোগ দায়ের করেনি কেউ। এরপরেও পুলিশি জোর তৎপরতা রয়েছে।’