সিলেটে মেলার নামে লটারি বিক্রি চলছেই
প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ আগস্ট ২০১৭, ১২:৩৫ পূর্বাহ্ণ
ওয়েছ খছরু:
সিলেটে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প মেলায় লটারির টিকিট বিক্রি বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ। মেলা উপলক্ষে নগরজুড়ে লটারির টিকিট বিক্রি নিয়ে বিতর্ক শুরু হওয়ায় মঙ্গলবার রাতে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ নির্দেশ দেয়া হয়। তবে গতকাল সে নির্দেশ মানা হয়নি। মেলার ইভেন্ট ম্যানেজম্যান্টের দায়িত্বে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে নগরীতে টিকিট বিক্রি করা হয়েছে। এ বিষয়টি পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তারাও বিব্রত। তৃণমূল নারী উদ্যোক্তা সোসাইটির উদ্যোগে ২৬শে জুলাই থেকে সিলেট নগরীতে মাসব্যাপী ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প মেলার অনুমতি দেয় মহানগর পুলিশ। এর প্রেক্ষিতে নারী উদ্যোক্তা সোসাইটির কর্মকর্তারা শহরতলীর লাক্কাতুড়া বাগানের মাঠে এই মেলার আয়োজন করে। মেলার ইভেন ম্যানেজম্যান্টের দেয়া হয় সিলেটের ব্যবসায়ী মঈন খান বাবলুকে। ২৮শে জুলাই লাক্কাতুড়া মাঠে আনুষ্ঠানিক মেলার উদ্বোধন করা হয়।
মেলায় নারী উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে হরেক রকমের পণ্য সামগ্রীর স্টল দেয়া হয়। এবারের সিলেটের মেলা নিয়ে তেমন আপত্তি জানাননি ব্যবসায়ীরা। নগরের বাইরে হওয়ার কারণে ব্যবসায়ীরা নীরব থেকেছেন। কিন্তু মেলায় বাদ সেধেছে লটারি। দৈনিক প্রভাত সুরমা র্যাফেল ড্র নামে একটি লটারির ছাড়া হয়। ২০ টাকা টিকিটের মূল্যের ওই লটারির টিকিট গোটা নগরজুড়ে বিক্রি করা হয়। মিনি ট্রাক, পিকআপ ভ্যান, সিএনজি, রিকশা দিয়ে গোটা নগরে লটারি বিক্রির ধুম পড়ে। প্রায় ৩০০ যানবাহনে মাইক বাজিয়ে নগরীতে লটারি বিক্রি করা হয়। আর বিক্রীত টিকিট নিয়ে রাতে মেলায় ড্র অনুষ্ঠিত হতো। ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কর্তৃপক্ষ প্রকাশ্য লটারির মাধ্যমে বিজিতদের হাতে তুলে দেন মোটর সাইকেলসহ নানা পণ্য সামগ্রী। এ কারণে এই লটারির টিকিট নিয়ে নগরীতে হুলস্থূল পড়ে যায়। অনেকেই এটিকে জুয়া হিসেবেও আখ্যায়িত করেন। কারণ সিলেটে দৈনিক প্রভাত সুরমা নামের কোনো প্রকাশনার অস্তিত্ব নেই। এরপরও ওই নামে চলছে লটারি বিক্রি। আর মাইকে গান বাজিয়ে টিকিট বিক্রির কারণে নগরবাসীর মনে সন্দেহ দানা বাঁধে। এ কারণে মেলার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন। তারা ইতিমধ্যে সিলেটের জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিয়ে মেলা বন্ধের দাবি জানিয়েছে। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার রাতে সিলেট মহানগর পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে লটারি বিক্রি বন্ধের নির্দেশনা দেয়া হয়। গতকাল সিলেট মহানগর পুলিশের এডিসি (মিডিয়া) জেদান আল মুছা জানিয়েছেন- লটারির টিকিট নিয়ে বিতর্ক শুরু হওয়া সেটি বিক্রি বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে মেলার মাঠে যেহেতু পশুর হাট বসবে এ কারণে ২৫শে আগস্টের মধ্যে মেলা বন্ধের কথা কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন- গতকাল আমাদের কাছে অভিযোগ এসেছে টিকিট বিক্রি চলছে। কারা, কিভাবে টিকিট বিক্রি করছে সে বিষয়টি পুলিশ খতিয়ে দেখছে বলে জানান তিনি। তবে- মেলার ইভেন্ট ম্যানেজার মঈন খান বাবলু দাবি করেছেন- মেলার অনুমতি ২৮শে আগস্ট পর্যন্ত রয়েছে। তারা মেলা চালিয়ে যাবেন। আর মেলায় যেহেতু লটারির অনুমতি রয়েছে সে কারণে তারা লটারিও চালিয়ে যাচ্ছেন। লটারি বন্ধের জন্য কোনো নির্দেশনা পুলিশের কাছ থেকে আসেনি বলে দাবি করেন তিনি।
এছাড়া এই মেলায় তার কোটি টাকার মতো বিনিয়োগ রয়েছে বলে দাবি করেন বাবলু। এদিকে- মেলার উদ্যোক্তা নারী উদ্যোক্তা সোসাইটির নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন- তারা সময়মতো মেলা বন্ধ করে দেবেন। মেলায় লটারি চলবে কি না সেটি পুলিশ প্রশাসন দেখবে বলে দাবি করেন তারা। তবে মেলা সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়- পুলিশ প্রশাসন প্রকাশ্য মাইক বাজিয়ে টিকিট বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছেন। তবে- মেলা ও তার আশপাশ এলাকায় টিকিট বিক্রিতে কোনো বিধিনিষেধ দেয়া হয়নি। এ কারণে এখন নগরীতে আর মাইক বাজিয়ে টিকি বিক্রি করা হচ্ছে না। এখন কেবল মেলায় দর্শনার্থীদের টিকিট দিয়ে লটারি করা হচ্ছে। আর মেলায় দর্শক টানতে সেটি করা হচ্ছে।-মানবজমিন