সিলেটে লিটু হত্যা : রিমান্ডে মুখ খোলেনি আসামিরা, এখনো বিলাপ করছেন ক্যানসার রোগী মা
প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ আগস্ট ২০১৭, ১২:২২ পূর্বাহ্ণ
বিয়ানীবাজার (সিলেট) প্রতিনিধি:
সিলেটের বিয়ানীবাজার পৌরশহরের কসবা গ্রামের নয়াটিলা রাস্তার প্রায় শেষদিকের বাড়িটা খালেদ আহমদ লিটুর। কয়েকটি কক্ষের পাকা দালান রয়েছে সেখানে। বাড়িটিতে একাধিক পরিবার বসবাস করেন। লিটুর পিতা বিলাত থাকার সময় ওই বাড়িটি নির্মাণ করা হয়। কিন্তু লিটুশূন্য ওই বাড়িটিতে এখন শোকাবহ পরিবেশ বিরাজ করছে। নয়াটিলা রাস্তা দিয়ে হাঁটলে যে কেউ এমন আবহ বুঝতে পারবেন।
এদিকে নিজের একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে এখনো বিলাপ করছেন মা রেজিয়া বেগম। তিনি নিজে ক্যানসার রোগী। রেজিয়া বিলাপ করে বলছিলেন, ‘যারা ফোন করে লিটুরে নিছে, তারাই মারছে।’ ছেলে মৃত্যুর এতদিন পেরিয়ে গেলেও এখনো স্বাভাবিক হননি তিনি। কান্নাই তার নিত্যসঙ্গী। স্ত্রীর এমন আহাজারির কারণে নিজেকে অনেক কষ্ট করে সংযত রেখেছেন পিতা খলিলুর রহমান। পিতা হয়ে নিজ কাঁধে পুত্রের লাশ বয়ে নিয়ে যাওয়ার কি যাতনা, তা ভালো করেই জানেন তিনি। তিনি বলেন-‘পুয়া হত্যার বিচার লইয়া যেতা চলের, ইতায় আমি খুব টেনশনে আছি। পুয়া মরছে সাথে আমরারে মারছে। এখন বিচার পাইমু কিনা, ইতা লইয়া টেনশন খালি বাড়ের।’ লিটুর কলেজপড়ুয়া বোন মাকে সামলাচ্ছে, বাবাকেও দেখাশুনা করছে। বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজে গুলিতে নিহত খালেদ আহমদ লিটু (২৫) হত্যাকাণ্ডের পূর্বে ছাত্রলীগের বিবদমান দু’গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নবীন দুই ছাত্রীকে নিয়ে কথাকাটাকাটির জের ধরে পাভেল মাহমুদ গ্রুপ এবং আবুল কাশেম পল্লব গ্রুপের সৃষ্ট উত্তেজনায় শক্তি বৃদ্ধির জন্য বহিরাগত ছাত্রলীগ কর্মী লিটু ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে। এদিকে খালেদ আহমদ লিটুর মৃত্যুর ঘটনায় থানায় দায়ের করা হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার এজাহারনামীয় আসামিরা রিমান্ডে পুলিশকে তেমন কোনো তথ্য দেয়নি। আদালতে পুলিশের দাখিল করা রিমান্ড প্রতিবেদনে তদন্তকারী কর্মকর্তা জানান-‘আসামিরা ধূর্ত প্রকৃতির। তারা পলাতক আসামিদের উপর দায় চাপাতে চায়।’ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও বিয়ানীবাজার থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) জাহিদুল হক জানান-‘আমরা পলাতক আসামিদের অবস্থান শনাক্ত করেছি। অচিরেই ভালো খবর পাওয়া যাবে।’ বিয়ানীবাজার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) চন্দন কুমার চক্রবর্তী জানান, গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজি না হওয়ায় আদালতে এ সংক্রান্ত কোনো আবেদন করা হয়নি।
অপরদিকে ঘটনার প্রায় মাসখানেক সময় অতিবাহিত হতে চললেও বিয়ানীবাজারের প্রথম রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। একমাত্র ছেলে হত্যার কিনারা করতে না পারায় লিটুর মা-বাবা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা জানান, ‘প্রকৃত দোষীরা যাতে শাস্তি পায়, তা নিশ্চিত করতে হবে।’
তদন্ত সূত্র জানায়, লিটু হত্যাকাণ্ডের দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি। অস্ত্র উদ্ধারে পুলিশ কোনো তল্লাশি চালায়নি। পুরো ঘটনা নিয়ে একটি ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন নিহতের আত্মীয় জসীম উদ্দিন রুহেল। এ ঘটনায় জড়িত এজাহারনামীয় অপর আসামিরাও পলাতক রয়েছে।
গত ১৭ই জুলাই দুপুর ১২টার দিকে বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগের ১২০ নম্বর কক্ষে গুলির শব্দ পাওয়া যায়। সেখান থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় লিটুকে উদ্ধার করে পুলিশ।