সিলেটে গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু : হত্যা নাকি আত্নহত্যা বলতে নারাজ পুলিশ!
প্রকাশিত হয়েছে : ২১ আগস্ট ২০১৭, ১১:৩৬ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
সিলেটের দক্ষিন সুরমার কুচাইয়ে এক গৃহবধুর রহস্যজনক মুত্যু হয়েছে। নিহত গৃহবধু সুমাইয়া মোগলাবাজার থানার কুচাই এলাকার সুলতান আহমদের স্ত্রী। গত ১৫ আগস্ট মঙ্গলবার রাতে কুচাইয়ে স্বামীর বাড়িতে তিনি মারা যান। নিহতের পরিবারের দাবি সুমাইয়াকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। সুমাইয়া আত্মহত্যা করেনি।
পরিবারের অভিযোগ, সুমাইয়ার স্বামী সুলতান আহমদকে দ্বিতীয় বিয়ের জন্য অনুমতি না দেয়ার কারণে তাঁর স্বামী বালিশচাপা দিয়ে হত্যা করেছেন সুমাইয়াকে। সুমাইয়া আত্মহত্যা করেছেন নাকি তাকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হয়েছে সে বিষয়ে বলতে নারাজ পুলিশ।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গোলাপগঞ্জের বাঘার গৌড়িবাড়ি মহিলা মাদ্রাসা থেকে টাইটেল পাস করে সুমাইয়া। বাবা ময়বুর রহমান মারা যাবার পর মা ইয়ারুন্নেসা তাদের অনেক কষ্টে বড় করেন। এক ভাই ও পাঁচ বোনের মধ্যে সুমাইয়া ছিলেন ৩য়। একমাত্র ভাই প্রবাসে থাকেন। ২০১১ সালের ৪ নভেম্বর দক্ষিণ সুরমা উপজেলার মোগলাবাজার থানার কুচাই এলাকার সুলতান আহমদের সাথে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় সুমাইয়া জান্নাত রুহেলার। বিয়ের ৬ বছর অতিক্রম হলেও এই দম্পতির কোনো সন্তান হয়নি। এজন্য স্বামী সুলতান আহমদ দ্বিতীয় বিয়ে করার জন্য প্রায়ই সুমাইয়ার কাছে অনুমতি চাইতেন।
অনেকবার তাঁর উপর শারীরিক নির্যাতনও করেছেন সুলতান। এবিষয়ে সুলতানের বড়ভাই কুচাই ইছরাব আলী হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী শিক্ষক কয়েছ আহমদ অনেকবার সুমাইয়ার পরিবারের সাথে বৈঠকও করেছেন। কোনোভাবে সুমাইয়াকে রাজি না করতে পেরে তাঁর উপর ক্ষিপ্ত হয়ে সুলতান তাকে হত্যা করেন। পরে পরিবারের লোকদের নিয়ে একটি আত্মহত্যার নাটক সাজান।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গেল দুবছর ধরে সুলতান আহমদ দ্বিতীয় বিয়ে করার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন সুমাইয়াকে। কিন্তু সুমাইয়া কোনোভাবে তাতে রাজি হননি। সুমাইয়াকে রাজি করানোর জন্য এক পর্যায়ে তাকে চাপ প্রয়োগ করেন যৌতুকের জন্য। তাতেও সুমাইয়া দ্বিতীয় বিয়ের জন্য রাজি হননি। সুমাইয়া তার পরিবারের কাছ থেকে ২ লক্ষ টাকা এনে ব্যবসার জন্য দেন। ৬ মাস পর দ্বিতীয় বিয়ে করবে না হয় তাকে আরো টাকা দিতে হবে বলে দাবি করেন। সংসার টিকিয়ে রাখার জন্য সুমাইয়া আবার তাঁর বোন রাবেয়ার কাছ থেকে এক লক্ষ টাকা এনে দেন। কিন্তু তাতেও সুলতান শান্ত হননি। ঘটনার পর দিন থেকে সুমাইয়ার স্বামী পলাতক রয়েছেন।
একটি সূত্র জানিয়েছে, দক্ষিণ সুরমা উপজেলার মোগলাবাজার থানার শ্রীরামপুরের একটি মেয়ের সাথে সুলতানের অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে। অবৈধ সম্পর্কের কারণে মেয়েটি গর্ভবতী হয়। তাকে ঘরে তোলার জন্য সুলতান দীর্ঘদিন ধরে সুমাইয়াকে চাপ প্রয়োগ করেন।
সুমাইয়া জানতেন সুলতান তাকে মেরে ফেলবেন। মারা যাবার এক সপ্তাহ আগে তাঁর বোন রাবেয়ার কাছে একটি অডিও বার্তা দেন। অডিও বার্তায় স্পষ্টভাবে সুলতানকে বলতে শোনা যায়, আমি বদমাইশ, আমি খারাপ লোক। আমি একটি মেয়েকে গর্ভবতী করেছি। তোমারতো বাচ্চা হবে না তাই আমি তাকে বিয়ে করব।
সুলতান ওই মেয়েকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন হোটেলে নিয়ে রাত্রিযাপন করতেন। মেয়েটিকে সুলতান ঘরে তোলার জন্য স্ত্রীর অনুমতি চান। এই অনুমতি না দিয়ে সুমাইয়া কথোপকথনে বলেন, আমাকে আমার বাড়িতে দিয়ে দাও, পরে তুমি বিয়ে করো।
এদিকে, পুলিশ মাধ্যমে যে ছবিটি পাওয়া যায়, তা দেখে কেউই বলবে না যে সুমাইয়া আত্মহত্যা করেছেন। সিলিং ফ্যানের লকের সাথে ওড়না দিয়ে গলায় বাঁধা কিন্তু সুমাইয়ার পা মেঝের সাথে লাগানো এবং ভাঁজ করা। আত্মহত্যা বা ফাঁসি হলে মূলত মৃতের জিহবা মুখ থেকে বের হয়। তাও হয়নি।
সুমাইয়ার বড়বোন রাবেয়া বেগম বলেন, ‘দ্বিতীয় বিয়েতে অনুমতি না দেয়ায় আমার বোনকে সুলতান হত্যা করেছে। শ্রীরামপুরের একটি মেয়ের সাথে সুলতানের অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে। তাকে বিয়ে করার জন্য আমার বোনকে মেরে ফেলা হয়েছে। বোনের ঘরসংসার নষ্ট না হোক, সে জন্য সুলতানের দাবিকৃত ৩ লাখ টাকাও দিয়েছি। আমরা আদালতে মামলা করব।
এ বিষয়ে সুমাইয়ার মা ইয়ারুন্নেসা বলেন, আমার মেয়েকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে, আমার মেয়ে অসুস্থ। কিন্তু আমি গিয়ে দেখি, আমার মেয়ের মৃত লাশ ঝুলিয়ে রাখা। পরে পুলিশ এসে লাশ নামিয়েছে। কিন্তু সেই সময়ে আমার জামাতা আমাকে দেখে পালিয়ে যায়। একজন মাদ্রাসাছাত্রী টাইটেল পাস মেয়ে কীভাবে আত্মহত্যা করবে?
এদিকে, এবিষয়ে সুলতান আহমদকে মোবাইলফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
মোগলবাজার থানার ওসি খায়রুল ফজল বলেন, বিষয়টি খোলাসা হবে ময়নাতদন্তের পর। আমরা আমাদের তদন্ত অব্যাহত রেখেছি’।