ইয়াবা নেশায় আক্রান্ত সিলেট
প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ আগস্ট ২০১৭, ১:৩৫ অপরাহ্ণ
শাহরিয়ার রশিদ কয়ছর:
ইয়াবার প্রচলন বাংলাদেশে শুরু হয়েছিলো সেই ২০০৬ সালে। ইয়াবা যার অর্থ পাগলা ঔষধ। সিলেট এখন ভয়াবহ মাদক ইয়াবার শহরে পরিণত হয়েছে। সিলেট ও এর আশপাশের জেলা-উপজেলায় আশঙ্কাজনক হারে ইয়াবা ছড়িয়ে পড়েছে। চাইলেই হাতের কাছে পাওয়া যাচ্ছে ইয়াবা,ফেন্সিডিল,হিরোইন। মূলত প্রবাসীদের ছেলেমেয়ে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও উঠতি বয়সী ছেলেমেয়েরাই এখানে ইয়াবার মূল ক্রেতা। চাহিদা বেশি হওয়ায় ব্যবসায়ীরা ইয়াবার রমরমা ব্যবসা শুরু করেছেন সিলেট জুড়ে।পার্শ্ববর্তি দেশ মিয়ানমার থেকে এই ইয়াবার উৎপত্তি । বাংলাদেশে ঢোকার সাথে সাথে এই ইয়াবা ছড়িয়ে পড়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।আর সিলেটে এই ইয়াবা আসে পাইকারি ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে। গত কয়েক বছরে ইয়াবার আসক্তি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। সরকারি হিসেবে দেশে প্রতিদিন ২০লাখ ইয়াবা বড়ি সেবন করা হয়। এখন প্রশ্ন হল এতো ইয়াবা আসে কোথা থেকে। ২৮ জুলাই সিলেটের স্থানীয় একটি পত্রিকার নিউজ ছিলো গজুকাটা সীমান্ত দিয়ে অবাধে আসছে মাদক। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় মাদক দ্রব্য আসা বন্ধে কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না বিয়ানীবাজার প্রশাসনের পক্ষ থেকে। এমন ঘটনা বিয়ানীবাজার উপজেলার নিত্যদিনের ঘটনা। মাদক পাচারে জড়িত অনেক কে আটক করা হলেও তা শুধু নামেই থেকে যায়। সহজেই পার পেয়ে যায় মাদকসেবী এবং মাদক ব্যবসায়ীরা।
ইয়াবা ব্যবসায়ীরা সিলেট শহরের পুরান রেলস্টেশন এলাকাকে নিরাপদ স্থান হিসেবে বেছে নিয়েছেন ব্যবসার জন্য। এ এলাকায় বিকাল থেকেই জমে ওঠে ইয়াবা বিক্রি। ইয়াবা ব্যবসায়ীরা নিজেদের আস্তানায় টেবিল-চেয়ার নিয়ে বসে যান। আর তাদের আস্তানা ঘিরে বেড়ে যায় ইয়াবাসেবীদের আনাগোনা।
সীমান্তে এতো নিরাপত্তার ভিতর দিয়ে কি ভাবে মাদক বাংলাদেশে আসে এই প্রশ্ন সাধারণ জনগণ থেকে নিয়ে সকলের।২০১০ সালে ৮১ হাজার ইয়াবা বড়ি আটক করা হয় বাংলাদেশ ভারত সীমান্ত থেকে।২০১৬ সালে এর সংখ্যা দাঁড়ায় ৩কোটিতে। অনুমান করা যায় বিপুলসংখ্যক মানুষ এ মরণ নেশায় আক্রান্ত।ইয়াবা ব্যবসার সাথে জড়িত বড় ধরণের একটি সিন্ডকেট মহল পুরো সিলেট ঝুড়ে ছড়িয়ে- ছিটিয়ে আছে।
এইসব ঘটনা চোখ কপালে উঠার মতো মনে হলেও এর পরিমাণ যে দিনদিন বেড়েই চলেছে। ইয়াবায় আসক্তদের বেশির ভাগের বয়স ১৫-৩০ বছরের ভিতরে।তাদের অনেকের রয়েছে প্রচুর অবসর সময় ও ওড়ানোর মতো নগদ টাকা।মাদক হিসেবে বেশিরভাগ তরুণ প্রজন্মের পছন্দ ইয়াবা। সিলেট মিরের ময়দান এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তরুণ বলেন, “খুব সহজে হাতের কাছে পেয়ে যাই যার জন্য নিজেকে এই মরণ নেশা থেকে চাইলেও দূরে রাখতে পারছি না”। ২০১৩ সালের এক হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে মাদকাসক্ত ব্যক্তির সংখ্যা ৬০ লাখ।২০১৪ সালের আরেক তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের ৫৩.২৭ শতাংশ তরুণ মাদকাসক্ত, এই বিপুলসংখ্যক মানুষের বিশেষ করে তরুণদের এই মাদকের প্রতি আসক্ত হওয়ার কারণ কী?কারণ হিসেবে তথ্য বিশ্লেষণ এবং বিশেষজ্ঞদের অভিমত পর্যলোচনা করলে দেখা যায়।আর্থিক অনটনজনিত হতাশা,আভিজাত্য প্রকাশ, বেপরোয়া চলাফেরা,রাজনৈতিক অপকৌশল ধর্মীয় জ্ঞানের অভাব, এই কারণ গুলো মূলত দায়ি মাদকাসক্ত হওয়ার জন্য।
সিলেট জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) সুজ্ঞান চাকমা বলেন, সুরমানিউজকে বলেন, আমাদের অভিযান চলছে। বিভিন্ন জায়গায় অনেককে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। ৬আগস্ট থেকে ১২আগস্ট পর্যন্ত আমাদের আরেকদফা অভিযান চলছে।